বাটলারের প্রথম সেঞ্চুরির পর উজ্জ্বল মোস্তাফিজে পিষ্ট হায়দরাবাদ
গ্রুপ পর্ব, দিল্লি (টস- হায়দরাবাদ/ ফিল্ডিং)
রাজস্থান রয়্যালস ২২০/৩, ২০ ওভার ( বাটলার ১২৪, স্যামসন ৪৮, পরাগ ১৫*, রশিদ ১/২৪, শঙ্কর ১/৪২, সন্দীপ ১/৫০)
সানরাইজারস হায়দরাবাদ ১৬৫/৮, ২০ ওভার ( পান্ডে ৩১, বেইরস্টো ৩০, উইলিয়ামসন ২০, মোস্তাফিজ ৩/২০, মরিস ৩/২৯, তিয়াগি ১/৩২)
রাজস্থান ৫৫ রানে জয়ী
জস বাটলারের ৬৪ বলে ১২৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের পর মোস্তাফিজুর রহমান ও ক্রিস মরিসের তোপে দাঁড়াতেই পারেনি হায়দরাবাদ, ৫৫ রানের বড় জয় পেয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। দিল্লির ছোট বাউন্ডারিকে কাজে লাগিয়ে দারুণভাবে ইনিংস বড় করে টি- টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে বাটলার রাজস্থানকে নিয়ে গিয়েছিলেন ২২০ রানে। জবাবে শুরুটা ভাল হলেও মোস্তাফিজুর রহমানের ২০ রানে ৩ উইকেট আর ক্রিস মরিসের ২৯ রানে ৩ উইকেটে হায়দরাবাদকে ম্যাচে ফিরতেই দেয়নি রাজস্থান। রান তাড়ার শুরুতেই ছুটতে থাকা ওপেনিং জুটি ভেঙেছেন, শেষে এসেও দারুণ বোলিং করে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ফেরার শেষ সম্ভাবনাও- মোস্তাফিজ তাই এই রানপ্রসবা উইকেটেও কাটিয়েছেন স্বপ্নের মত একটা দিন। অধিনায়ক ও দলীয় কম্বিনেশন পরিবর্তন করেও হায়দরাবাদের ভাগ্যের চাকাও ঘোরেনি তাই।
ডেভিড ওয়ার্নারকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর এদিন দল থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছিল। হায়দরাবাদের ড্রেসিং রুম কিছুটা টালমাটাল হলেও গতকালে মুম্বাইয়ের বিশাল রান তাড়া থেকে হয়ত কিছুটা অনুপ্রেরণা তারা খুঁজেছিলেন। ২২১ রানের বিশাল লক্ষ্যে জনি বেইরস্টো আর তার নতুন ওপেনিং সঙ্গী মানিশ পান্ডে শুরুটা করেছিলেন দারুণ। এদিন বোলিংয়ে ওপেন করেন মোস্তাফিজ, প্রথম ওভারে উইকেট না পেলেও মাত্র ৬ রান দিয়ে তার শুরুটাও হয়েছিলো ভাল। কিন্তু বাকি পেসারদের উপর চড়াও হয়ে হায়দরাবাদের নতুন ওপেনিং জুটি পাওয়ারপ্লেতে তোলে ৫৭ রান।
দারুণ এক ওভার করেও মোস্তাফিজকে সরিয়ে নেওয়ার ক্ষতি সামাল দিতেই কিয়া ৭ম ওভারেই তাকে আনেন সাঞ্জু স্যামসন, তার প্রতিদানও তিনি দিয়েছেন দারুণভাবে। প্রথম বলেই স্লোয়ারে বোল্ড করে ছুটতে থাকা পান্ডেকে থামিয়েছেন, ২০ বলে ৩১ করে শেষ হয়েছে পান্ডের ইনিংস। উইকেটে আসা কেন উইলিয়ামসনকেও ভাবিয়েছেন মোস্তাফিজ, সে ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। রাহুল তেওয়াতিয়ার করা পরের ওভারেই লং অনে অভিষিক্ত অনুজ রাওয়াতের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বেইরস্টো, ২১ বলে ৩০ রানে তার ইনিংস শেষ হলে বড় বিপদেই পড়ে হায়দরাবাদ।
ঝড়ো শুরু এনে দেওয়া দুই ওপেনার দুই ওভারের মধ্যেই বিদায় নেওয়ার পরে কেন উইলিয়ামসন আর বিজয় শঙ্করকে রান করতেই বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। সেই চাপেই মরিসের বাউন্সারে জোরের ওপর ব্যাট চালিয়ে ডেভিড মিলারের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান শঙ্কর। প্রয়োজনীয় রান রেটের ভার ক্রমাগত বাড়তে থাকায় হাত খুলতে গিয়ে ফিরে যান উইলিয়ামসনও, মরিসের বলে ডিপ মিডউইকেটে মৌসুমে প্রথম নামা কার্তিক তিয়াগির কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে ২১ বলে ২০ রান করে। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম ম্যাচে নিজের পারফরম্যান্স সাদামাটাই থেকে গেছে তার।
ম্যাচে টিকে থাকতে হলে হায়দরাবাদের দরকার ছিল অতিমানবীয় কোন ইনিংস। তেওয়াতিয়ার করা পরের ওভারেই মোহাম্মদ নবীর প্রতি-আক্রমণে আসে ১৭ রান। আক্রমণে ফিরে এসেই সেই নবীকেই ফেরান মোস্তাফিজ, তার কাটারে বল আকাশে তুলে দিলে রাওয়াতের সহজ ক্যাচে শেষ হয় নবীর ১৭ রানের ক্যামিও। আবারও অসাধারণ এক ওভারে মোস্তাফিজ দেন মাত্র ৩ রান। এরপরে আর বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেনি হায়দরাবাদ, ১৮তম ওভারে এসে মরিস নিয়েছেন আব্দুল সামাদ আর কেদার যাদবের উইকেট। পরের ওভারে ৭ রান দিয়ে মোস্তাফিজ নিয়েছেন রশিদ খানের উইকেট। মোস্তাফিজ-মরিস জুটির কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে হায়দরাবাদ অল-আউট না হলেও বেশি দূর যেতে পারেনি, থেমেছে ১৬৫ রানে গিয়ে।
অথচ টসে হেরে এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভাল ছিল না রাজস্থান রয়্যালসের। তৃতীয় ওভারেই নতুন অধিনায়ক উইলিয়ামসন রশিদকে আক্রমণে আনলে তিনি ফেরান ইয়াশাসভি জাইসওয়ালকে, মাত্র ১২ রান করেই এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে রশিদ আরও এক ওভার করায় বেশ সাবধানীই ছিল রাজস্থান। তবে বাটলার আর সাঞ্জু স্যামসন প্রান্ত বদল করার পাশাপাশি বাজে বলে বাউন্ডারি মারতেও ভুল করেননি। পাওয়ারপ্লেতে তাই আসে ৪২ রান।
পাওয়ারপ্লে শেষ হতেই দুজনই চড়াও হওয়ার ইঙ্গিত দেন, শঙ্করের করা ৭ম ওভারেই আসে ১৮ রান। এরপরের ওভারগুলোতে অবশ্য হাত খোলার খুব একটা সুযোগ পাননি তারা। এমনকি ২৩ রানে থাকতে সেই চাপেই সন্দীপ শর্মার বলে আকাশে উরিয়ে খেলতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান স্যামসন। ১১তম ওভারেই নিজের কোটা পূর্ণ করেন রশিদ, আইপিএলে এবারই ইনিংসের সবচেয়ে কম সময়ের ব্যবধানে ৪ ওভার করলেন তিনি।
রশিদকে পার কয়ারর পরই শুরু হয় বাটলারদের আক্রমণ, ১৩তম ওভারে সন্দিপের কাছ থেকে তারা নেন ১৭ রান। ওই ওভারে ছয় মেরে ৩৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন বাটলার। নবির করা প্রথম ওভারে ছয়-চার-চার-ছয়ে বাটলার যখন ২১ রান নিলেন, তখনই বোঝা গিয়েছিলো, গিয়ারটা আরেকবার বদলে ফেলেছেন তিনি। মাঝে শঙ্করের বলে সামাদের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে ৩৩ বলে ৪৮ রান করে ফিরেছেন স্যামসন, হাতে উইকেট থাকায় তাতে অবশ্য গতি কমাননি বাটলার। ওই ওভারেই ৫৬ বলে ছুঁয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, ৪৬টি ফিফটির পর।
সেঞ্চুরির পরে অবশ্য প্রায় সব বলেই ব্যাট চালিয়েছেন। ১৯তম ওভারে গিয়ে একাই করেছেন ২৩ রান, শেষ বলেও আক্রমণ করতে গেলে ফুললেংথের বল মিস করে হয়েছেন বোল্ড। শেষ ২৫ বলে বাটলার করেছেন ৭৪ রান, ১২৪ রানে গিয়ে থেমেছে তার ইনিংস। রিয়ান পরাগ আর ডেভিড মিলারের ক্যামিওতে এরপর রাজস্থান পৌঁছেছে ২২০ রানে।
থিতু হতে একটু সময় নিয়ে বাটলার যেই আগ্রাসন চালিয়েছেন মোস্তাফিজ-মরিস জুটির তোপে থিতু হওয়ার সেই সুযোগটাও পায়নি হায়দরাবাদের কেউ। দুশ্চিন্তার ভাঁজটা তাই ওয়ার্নারের কাছ থেকে ব্যাটনের মতো হাত-বদলি হয়েছে শুধু উইলিয়ামসনের কাছে।