ভয়ঙ্কর পন্টিং
বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে। এমন একটা দলের অধিনায়ক, যেটা কিনা আবার আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন। আগেরবারের দলের বেশ কিছু কিংবদন্তী খেলোয়াড় চলে গেছেন অবসরে। তাঁদেরকে ছাড়াই শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে নেতৃত্ব দিতে হয় তাঁকে। শেষ পর্যন্ত অভিযান সফল হয়েছিল তাঁর। ২০০৩-এর সেই বিশ্বকাপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন করেন তিনি দলকে। তিনি রিকি থমাস পন্টিং- বিশ্ব ক্রিকেটের একজন কিংবদন্তী।
পুরো আসরে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বলে আসলে তাঁর কীর্তিকে ফুটিয়ে তোলার কোন উপায় নেই। জন্মগত নেতৃত্বগুণ, তিন নম্বরে নেমে ব্যাটিং ইনিংসের একটা সুদৃঢ় আকৃতি প্রদান ও শেষদিকে তোলা ঝড়- সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলে পন্টিংয়ের প্রভাবটা ছিল সুদূরপ্রসারী। আসরের শুরু থেকেই সেবার ধারাবাহিকভাবে ‘পারফর্ম’ করে গেছেন তিনি। তবে নিজের সেরা ইনিংসটা যে তুলে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য, তা কে জানত?
জোহানেসবার্গের নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম, মার্চের ২৩তম দিনের সেই ফাইনালকে ঘিরে আলোচনা, সমালোচনা, চায়ের কাপে ঝড়, কাঁদা ছোড়াছুড়ি কম হয়নি। না হওয়ার কারণও ছিল না আসলে। প্রতিযোগী দুই দলের নাম যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। তবে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগেই যে সব জল্পনা-কল্পনার একরকম অবসান হয়ে যাবে, এটা হয়তো ভাবতে পারেননি কেউই। আর একপেশে এ ফাইনালের জন্য ‘দায়ী’ মূলত পন্টিং।
৭৪ বল লেগেছিল ৫০ পেরুতে, তখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে বাউন্ডারির সংখ্যা ছিল ১! এই হিসেব মাথায় রেখে অসিদের ইনিংস শেষে অপরাজিত পন্টিংয়ের রান ও বলের সংখ্যাটা চমকে ওঠার মত। ১২১ বলে ১৪০! ইনিংসটাতে চারের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪টি, অথচ ছয় কয়টি ছিল জানেন? ঠিক তাঁর দ্বিগুণ।
পরিসংখ্যানেই প্রতীয়মান, অর্ধশতক পেরিয়ে ভারতীয় বোলারদের স্রেফ কচুকাটা করেছেন তিনি। ৫০ থেকে ১০০ তে যেতে লেগেছে ২৯ বল, ১০০ থেকে ১৪০-এ যেতে ১৮। সবচেয়ে বড় ঝড় গেছে ভারতীয় পেস অ্যাটাকের মূল ভরসা জাভাগাল শ্রীনাথ ও জহির খানের উপর দিয়ে। এঁদের দুজনের বোলিং ইকোনমি ছিল যথাক্রমে ৮.৭০ ও ৯.৫৭। ৫০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৫৯, বিশ্বকাপে নতুন রেকর্ড।
‘পান্টার’-এর বিধ্বংসী এ ইনিংসের কোন জবাব ভারতীয়দের জানা ছিল না । বিস্ময়ে বিমূড় হয়ে যাওয়া দলটি রান তাড়ায় নেমে খেলতে পারেনি ৪০ ওভারও। ৩৯.২ ওভারে ২৩৪ রানে অল-আউট হয় তারা।