নাটকীয় শেষ দিনে সাত বছর পর শিরোপা অ্যাটলেটিকোর
একটা মুহূর্তে কত কিছু হয়? এক মাঠে যখন গোল হয়, আরেক মাঠে তখন মিসের হাহাকার। একই মুহূর্তে যেন গড়া হয়ে গেল দুই দলের ভাগ্য। এদিকে রিয়াল মাদ্রিদ যখন হতাশায় পুড়ছিল, তখন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ করছিল উদযাপন। শেষ পর্যন্ত তাই সাত বছর পর লা লিগা উঠেছে সিমিওনের অ্যাটলেটিকোর হাতে। আরও একবার রিয়াল-বার্সার রাজ্যে হানা দিয়েছে অ্যাটলেটিকো।
অ্যাটলেটিকোর জন্য সমীকরণ ছিল সহজ। জিতলেই লা লিগা তাদের, আর কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। কিন্তু ভায়াদোলিদের মাঠে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে সেই সমীকরণ গেল বদলে। ওদিকে রিয়ালও পিছিয়ে পড়েছে, কিন্তু লিগের জন্য জয় পেতেই হতো জিদানের দলকে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়ে রিয়ালের জিতেও লাভ হয়নি, ওদিকে ভায়াদোলিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে আর কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি অ্যাটলেটিকোকে।
সেই মুহূর্তটা এমন একজন রাঙিয়েছেন, যার জন্য মঞ্চটা ছিল সাজানো। লুইস সুয়ারেজ বার্সেলোনাতেই কাটিয়েছিলেন ছয়টি বছর। কিন্তু গত মৌসুমে একদম তাড়িয়েই দেওয়া হয়েছে তাকে, চোখের জলে ছেড়েছেন ন্যু ক্যাম্প। নতুন ক্লাবের হয়ে জয়সূচক গোলটা এসেছে তার পা থেকে, যখন বার্সা আগেই ছিটকে গেছে শিরোপা থেকে। সেই সঙ্গে প্রমাণ করেছেন, কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া ভুল ছিল বার্সার।
শেষ পর্যন্ত রিয়াল ও অ্যাটলেটিকোর পয়েন্টের ব্যবধান দুই হলেও নাটক কম হয়নি ম্যাচে। ভায়াদোলিদ লড়ছিল রেলিগেশন বাঁচানোর জন্য, অন্যদিকে অ্যাটলেটিকো শুরু থেকেই জানান দিচ্ছিল তাদের জয় চাই। শুরুটাও সেরকম করেছিল তারা, সুয়ারেজ হাফ চান্স পেয়েছিলেন শুরুতেই। কিন্তু গোল করতে গিয়েই আক্রমণাত্মক হয়ে খেয়ে বসে তারা। দারুণ একটা প্রতিআক্রমণ থেকে প্লানো বল পেয়ে যান, তাকে কেউ ধরার আগেই বল জড়িয়ে দেন জালে। রিয়ালের সমর্থকেরা যদি খবরটা শুনে খুশি হন, কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিয়ে গেছে সেই হাসি। ডান দিক থেকে বল পেয়ে জেরার্দো মরেনোর দারুণ পাসটা দুর্দান্ত এক ফার্স্ট টাচে নেন পিনো, এরপর বল জড়িয়ে দেন জালে।
গোল খেয়ে দুই দলই ফেরার চেষ্টা করতে থাকে। সুয়ারেজ পেয়েছিলেন সুযোগ, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। ওদিকে কাসেমিরোদের চেষ্টাও বিফলে যায়। দুই দল তাই পিছিয়ে থেকেই শেষ করে প্রথমার্ধ।
এরপর ম্যাচের বড় নাটক শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধে। কী অবিশ্বাস্য, এবারও প্রায় একই সময়ে। কাসেমিরোর ক্রস থেকে বেনজেমা দারুণ হেডে বল জড়িয়ে দেন জালে। ওদিকে অ্যাটলেটিকো পিছিয়ে, শিরোপা রিয়ালের। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বেনজেমা অফসাইডে। ভিএআর সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিয়েছে অনেক, ওদিকে রিয়াল সমর্থকদের আবার হতাশায় ডুবিয়েছেন আনহেল কোরেয়া। বক্সের ভেতর ধরেছিলেন বল, এরপর ডান পায়ে নিয়ে আরেকজনের পায়ের ভেতর রোমারিওকে মনে করিয়ে দেওয়া দারুণ এক শটে জড়িয়ে দিয়েছেন জালে। অ্যাটলেটিকো ফিরিয়েছে সমতা।
কী অদ্ভুত, এরপরের মুহূর্তটাও এসেছে একই সময়ে। ৬৬ মিনিটে রুলির ভুল থেকে বল পেয়েছিলেন বেনজেমা, কিন্তু ফাঁকা পোস্টেও গোল দিতে পারেননি। ঠিক তখনই সুয়ারেজ মধ্যমাঠে পেয়ে গেছেন বল, এরপর সবটুকু দৌড়ে ফিনিশ করেছেন দারুণভাবে।
এরপরও হতে পারত নাটক। রিয়াল একের পর এক সুযোগ হারিয়েছে, শেষ পর্যন্ত ডান পায়ের ফিনিশে সমতা ফিরিয়েছেন বেনজেমা। কিন্তু ভাগ্যটা আর নিজেদের হাতে ছিল না তাদের। শেষ মুহূর্তে মদ্রিচ দারুণ এক গোলে জয় এনে দেওয়ার পরও উদযাপন করতে পারেনি। ওদিকে যে তখন অ্যাটলেটিকো উদযাপন করছে!