নেট সেশন: 'হ্যাপি' বাংলাদেশ পারবে 'ইতিহাস' গড়তে?
শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফর, ২০২১, বিশ্বকাপ সুপার লিগ
২য় ওয়ানডে
কবে, কখন
২৫ মে
বাংলাদেশ সময় ০১.০০ (১৩০০)
‘লুজিং ইজ নো ফান। উইনিং ইজ হ্যাপিনেস।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের পর বলেছিলেন তামিম ইকবাল। সব ফরম্যাট মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচ জয়শূন্য (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে ড্রসহ) থাকার অবশেষে একটি জয়ের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিং করে স্কোরটা একটু কম মনে হলেও ম্যাচশেষে তামিম বলেছেন, টু-পেসড উইকেটে সে স্কোর নিয়েই খুশি ছিলেন তারা। আর ম্যাচসেরা মুশফিক বলেছিলেন, এ কন্ডিশনে- প্রচন্ড গরমে- এমন পারফরম্যান্স নিশ্চিতভাবেই কৃতিত্বের দাবি রাখে।
এ কন্ডিশনে এমন ম্যাচের পরদিন তাই অনুশীলনই করেনি বাংলাদেশ, নিজেদেরকে রিকভারির সময় দিতে। শ্রীলঙ্কার ঐচ্ছিক অনুশীলন ছিল, তবে সেখানেও এসেছিলেন তিনজন। এদের মাঝে শুধু আশেন বান্দারাই খেলেছিলেন প্রথম ম্যাচে। কোভিড-১৯ শঙ্কা কাটিয়ে ঠিক সময়ই খেলা শুরু হলেও গরমে নাকাল হয়েছেন দুই দলের ক্রিকেটাররাই, শেষদিকে ক্র্যাম্প হয়েছিল মোস্তাফিজুর রহমানের, দিনের বেলা ড্রিংকসের সময় ইয়া বড় ছাতার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য দেখা গিয়েছিল চেয়ারও।
এমনিতে বায়ো-সিকিউরড বলয়ের অবসন্নতা আছে, আছে কোভিড-১৯ পজিটিভ কেস ধরা পড়ার মানসিক ধাক্কা, সঙ্গে মাঠে অমন কন্ডিশন। তবে দিনশেষে জয়ের যে বড় উজ্জীবক আর কী হতে পারে! দিনশেষে ‘উইনিং ইজ হ্যাপিনেস!’ বাংলাদেশের সে খুশি যদি দ্বিতীয় ম্যাচেও টিকে থাকে, তাহলে একটা ঘটনা ঘটবে প্রথমবারের মতো। এর আগে কখনোই দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতেনি বাংলাদেশ, ৮ বারের দেখায় দুটি হয়েছে ড্র।
ব্যাটিংয়ে তামিমের পর মুশফিকুর রহিম বা মাহমুদউল্লাহর হয়তো ইনিংস আরেকটু বড় না করার আক্ষেপ থাকতে পারে, তবে দিনশেষে কার্যকর হয়েছে সেসবই। সাতে নামা আফিফ হোসেনের ২২ বলে ২৭ রানের ইনিংসটির কথাও তাই ম্যাচশেষে আলাদা করে বলেছিলেন তামিম। বোলিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ তার সাম্প্রতিক সাফল্য ধরে রেখেছেন, মোস্তাফিজুর রহমানও ইঙ্গিত দিয়েছেন ফর্ম ধরে রাখার। সাইফউদ্দিনকে নিয়ে সিরিজ শুরুর আগে আলাদা করে আশা প্রকাশ করেছিলেন হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো, গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু দিয়েছেন তিনিও।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছাড়া বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন নেই, উন্নতির চিরায়ত সুযোগ বাদ দিলে। তবে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে বড়সড় একটা চিহ্ন আছে তাদের ব্যাটিংকে ঘিরে। এক বোলিং অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ছাড়া বলতে গেলে ব্যর্থ হয়েছেন সব ব্যাটসম্যানই, নতুন চেহারার শ্রীলঙ্কার যে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন, সেটি প্রকাশ পায়নি আগেরদিন। ব্যাটসম্যানরা উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন, জুটিও বড় হয়নি তাদের।
সেসব প্রশ্নের উত্তর দ্রুতই খুঁজতে হবে তাদের, নাহলে কুসাল পেরেরার দল হয়ে যাবে বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারা ‘প্রথম’। আর তাতে যে তামিম ও বাংলাদেশের ‘হ্যাপিনেস’ আরেকটু বাড়বে, সে তো আলাদা করে না বললেও চলে।
রঙ্গমঞ্চ
শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর
প্রথম ওয়ানডে হয়েছে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের দিকে শেষপ্রান্তের এক উইকেটে, এবার মোটামুটি মাঝের দিকে এক উইকেট প্রস্তুত করছেন হেড কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। ঢাকার তাপমাত্রা কমার তেমন কোনো লক্ষণ নেই এখনও।
যাদের ওপর চোখ
লিটন দাস
গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ব্যবধানে করেছিলেন দুই সেঞ্চুরি, গড়েছিলেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের স্কোর। তবে এরপর থেকেই এ ফরম্যাটে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন লিটন। প্রথম ম্যাচে আউট হয়েছেন অ্যাওয়ে ফ্রম দ্য বডিতে বাজে এক শটে। দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশে যদি তার ওপরই আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বাড়তি নজর থাকবে এই ডানহাতির ওপর।
ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা
বোলিংয়ে প্রথম ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট, করেছিলেন পুরো ১০ ওভারই। তবে ডি সিলভার যে মূল কাজ, সেই ব্যাটিংয়ে অফস্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে খেলতে গিয়ে লেগস্টাম্প হারিয়েছিলেন ৯ রান করে। মিডল অর্ডারে শ্রীলঙ্কার তার কাছ থেকে প্রত্যাশা নিশ্চয়ই আরেকটু বেশিই।
সম্ভাব্য একাদশ
প্রথম ম্যাচের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় মোস্তাফিজ জানিয়েছেন, ক্র্যাম্প হলেও দ্বিতীয় ম্যাচ খেলার আশা করেন তিনি। সেক্ষেত্রে অপরিবর্তিতই থাকতে পারে বাংলাদেশ একাদশ, ফিট থাকা সাপেক্ষে।
বাংলাদেশ
তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান
শ্রীলঙ্কা
দানুশকা গুনাথিলাকা, কুসাল পেরেরা (অ), কুসাল মেন্ডিস, পাথুম নিসাঙ্কা, আশেন বান্দারা/নিরোশান ডিকওয়েলা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন শানাকা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, লাকশান সান্দাকান, ইসুরু উদানা, দুশমন্থ চামিরা
সংখ্যার খেলা
- আর ২ উইকেট হলেই বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেটের তালিকায় মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ছুঁয়ে ফেলবেন সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭০ উইকেট নেওয়া মাশরাফি এশিয়া একাদশের হয়ে নিয়েছিলেন একটি উইকেট
- ২ উইকেট হলে এক মাঠে সবচেয়ে বেশি উইকেটে ওয়াসিম আকরামকেও ছুঁয়ে ফেলবেন সাকিব। শারজায় ওয়াসিমের উইকেট ১২২টি, মিরপুরের শের-ই-বাংলায় এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সাকিব নিয়েছেন ১২০ উইকেট
তারা বলেন
আই অ্যাম নট আ বিগ গাই। সহজে বাউন্ডারি মারতে পারি না আমি। আমি পোলার্ড বা রাসেল নই। আমি নিজের শক্তির জায়গায় থাকার চেষ্টা করি।
মুশফিকুর রহিম, বাংলাদেশ
হারাটা কখনোই ভাল কিছু নয়, তবে এতেও ইতিবাচক দিক আছে। দুই ম্যাচ আছে, আমাদের ভালভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
কুসাল পেরেরা, শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক