মুশফিক আর বোলাররা মিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে 'প্রথম' সিরিজ এনে দিলেন বাংলাদেশকে
২য় ওয়ানডে, মিরপুর (টস- বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ২৪৮ অল-আউট, ৪৮.১ ওভার (মুশফিক ১২৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, লিটন ২৫, চামিরা ৩/৪৪, সান্দাকান ৩/৫৪, উদানা ২/৪৯)
শ্রীলঙ্কা ১৪১/৯, ৪০ (৪০) ওভার (গুনাথিলাকা ২৪, নিসাঙ্কা ২০, মিরাজ ৩/২৮, মোস্তাফিজ ৩/১৬, সাকিব ২/৩৮)
বাংলাদেশ ১০৩ রানে জয়ী (ডিএলএস) ও সিরিজে ২-০তে এগিয়ে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয় বা আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের টেবিলের শীর্ষে ওঠা- দুটির তাৎপর্যের তুলনা হয়তো একটু জটিল হয়ে পড়বে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের অংশ বলে এখন সব সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে টেবিলের শীর্ষে ওঠা অন্তত মানসিক দিক দিয়ে তো একটু উজ্জীবক হতেই পারে ভবিষ্যতের জন্য। আবার কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রথমবার সিরিজ জয়ের ঐতিহাসিক মূল্যটাও তো কম নয়! বাংলাদেশকে অবশ্য কোনটা-বেশি-কোনটা-কম-গুরুত্বপূর্ণ-এর হিসাবে যেতে হলো না, এক ম্যাচ জয়েই হয়ে গেল দুটি। মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির পর বোলারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সে এই-মেঘ-এই-বৃষ্টির ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো তাদের সিরিজ জিতেছে তারা এক ম্যাচ বাকি রেখেই, সঙ্গে ৮ ম্যাচে ৫ জয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে উঠে গেছে ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের শীর্ষেও।
মিরাজ-সাকিব-মোস্তাফিজরা ম্যাচের পরের অংশে লড়াইটা বানিয়ে ফেলেছিলেন একপেশে, অথচ প্রথমভাগে মুশফিকের সেঞ্চুরিটাকে বলতে হয় ‘লড়াকু’। দলের মোট রানের ৫০.৮১ শতাংশ রান একাই করেছেন তিনি, ১৫ রানে ২ উইকেট যাওয়ার পর নেমে আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। আগেরদিন সেঞ্চুরির আক্ষেপটা ঘুঁচেছে তার, বাংলাদেশকেও এনে দিয়েছিলেন লড়াই করার মতো সংগ্রহ, যেটি পরে পরিণত হয়েছে যথেষ্টর চেয়েও বেশি।
টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কার প্রথম ওভারে শুরুটা হয়েছিল বীভৎস, ইসুরু উদানার এক বৈধ ডেলিভারির বিপরীতে তামিমের দুই চার ও নো-বলে এসেছিল ৯ রান। তবে গল্পটা বদলে গেছে শীঘ্রই- পরের ওভারে দুশমন্থ চামিরা আসার পর। আগেরদিন শুরুতে অফস্টাম্পের বাইরের চ্যানেল ধরে করা চামিরা এদিন স্টাম্প লাইন হিট করা শুরু করেছিলেন, সফল হয়েছেন তাতেই। দারুণ দুই ইনসুইংয়ে ৪ বলের ব্যবধানে ফিরিয়েছেন তামিম ও সাকিবকে। আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন এর আগে পয়েন্টে একটা জীবন পাওয়া তামিম, শ্রীলঙ্কা সে উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। সাকিব অবশ্য বলের লাইনেই যেতে পারেননি, তার আগেই হয়েছেন প্লাম্ব। এবার আম্পায়ার শরাফউদ্দৌলা আউটই দিয়েছেন, সাকিবও রিভিউ নেননি।
সে চাপ সামাল দিতে সময় নিচ্ছিলেন এরপর মুশফিক। আর অফফর্মে থাকা লিটন অবশ্য ছিলেন অতি-সতর্ক। তবে কাজে আসেনি সেসব, লাকশান সান্দাকানের অফস্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে আলগা কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েছেন তিনি ৪২ বলে ২৫ রান করার পর- শেষ ৮ ইনিংসে যা তার সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালের পর আবারও ওয়ানডে খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন এসেছিলেন এরপর, তবে তিনি টেকেননি বেশিক্ষণ। ফলে আবারও সব গিয়ে ঠেকেছিল মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটির ওপরই।
দুজন আবারও বেশ কিছুক্ষণ টেনেছেন বাংলাদেশকে, টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি থেকে ১৩ রান দূরে থেমেছে তাদের জুটি। মাহমুদউল্লাহ বড় শট খেলেছেন, মুশফিককে সঙ্গ দিয়েছেন ভালই। তবে সান্দাকানকে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কুসাল পেরেরার দারুণ উপস্থিত-বুদ্ধির শিকার হয়ে ধরা পড়েছেন তিনি ৪১ রান করে।
১৬.৩ ওভার বাকি থাকতে নেমেছেন আফিফ হোসেন, মঞ্চটা আদর্শ ছিল তার জন্য। সান্দাকানকে মিড-অন দিয়ে একটির পর চামিরাকে র্যাম্প শটে আরেকটি চারে শুরুটাও দারুণ হয়েছিল তার। উদানাকে মিড-অনের ইনফিল্ড ক্লিয়ার করে মারতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় সেটি হয়নি। আগেরদিনই ওপরের দিকে ব্যাটিং করার ইচ্ছা প্রকাশ করা সাইফউদ্দিনের বদলে এরপর পাঠানো হয়েছিল মিরাজকে, তবে তিনি টিকেছেন মাত্র দুই বল- ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ক্ল্যাসিকাল স্পিনিং ডেলিভারিতে স্টাম্প হারিয়ে ফেরার আগে।
এরপরই নেমেছে বৃষ্টি, যাতে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় আধাঘন্টার মতো। এরপর হয়েছে ১৪ বল, এবার প্রায় ৩৬ মিনিট বিরতি দিতে হয়েছে তাতে। প্রথমদফা বৃষ্টির আগে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকা মুশফিক এবার গিয়েছিলেন ৯৬ রান পর্যন্ত। ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে আরেকবার বৃষ্টির মুখে পড়েছিলেন, তবে আম্পায়াররা বন্ধ করেননি খেলা। চামিরাকে ফ্লিক করে মারা চারে ১১৪ বলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়েছেন তাই মুশফিক। চামিরার বাউন্সারে মাথায় আঘাত পাওয়া সাইফউদ্দিন এরপর কুসাল মেন্ডিসের ডিরেক্ট থ্রোয়ে হয়েছেন রান-আউট, আর শরিফুল উদানার বলে হয়েছেন এজড। মুশফিকও চামিরার বলেই ধরা পড়েছেন পয়েন্টে। তবে সেঞ্চুরির পর তার মারা চার চারে বাংলাদেশ এগিয়েছে আরেকটু।
নিজেদের বোলিং শুরুর আগেই একটা ‘আঘাত’ পেয়েছিল বাংলাদেশ, কনকাশন-শঙ্কায় ফিল্ডিংয়ে আর নামানো হয়নি সাইফউদ্দিনকে। ওয়ানডেতে প্রথম কনকাশন-বদলি হিসেবে নেমেছেন তাসকিন, যিনি আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন। তৃতীয় ওভারেই বোলিংয়ে এসেছেন তিনি আজ, উইকেট না পেলেও আগেরদিনের চেয়ে বেশ ভাল ছিল তার পারফরম্যান্স।
আগেরদিন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা লড়াই করেছিলেন, এদিন শ্রীলঙ্কার হয়ে সেটি করতে পারেননি কেউই। ৬ষ্ঠ ওভারে অভিষিক্ত শরিফুল ইসলামকে টেনে মারতে গিয়ে মিড-অনে কুসাল পেরেরা ধরা পড়েছিলেন তামিমের হাতে, শ্রীলঙ্কার সেই পিচ্ছিল পথচলা থামেনি আর। দানুশকা গুনাথিলাকা এদিন ছিলেন ধীরগতির, তাসকিনের বলে গ্লাভড হয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায়, তবে মোস্তাফিজের শর্ট অফ আ লেংথ থেকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি ৪৬ বলে ২৪ রান করে।
সাকিব ও মিরাজের যৌথ তোপে পড়েছে এরপর শ্রীলঙ্কা- পরের ৫ উইকেটই নিয়েছেন তারা। পাথুম নিসাঙ্কা পুল করতে গিয়ে টপ-এজড, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা প্লাম্বড হয়েছেন সাকিবের বলে। পরের উইকেট দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডে মাশরাফিকে ছুঁয়েছেন তিনি। সাকিবের এ দুই উইকেটের আগে-পরে মিরাজ ফিরিয়েছেন কুসাল মেন্ডিস ও দাশুন শানাকাকে। মেন্ডিস এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউ করেও বাঁচেননি, আর শানাকা হয়েছেন টপ-এজড। এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা হয়েছেন বোল্ড। বোলিংয়ে ফিরে আশেন বান্দারা ও লাকশান সান্দাকানকে মোস্তাফিজ ফেরানোর পর আবারও নেমেছিল বৃষ্টি। সেটি পেরিয়ে আবারও যখন শুরু হলো ম্যাচ, ততক্ষণে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৪০ ওভারে ২৪৫। শরিফুলের করা শেষ ওভারে উদানা মেরেছেন দুটি ছয়, তবে তাতে কিছু যায়-আসেনি আর।