• শ্রীলঙ্কার বাংলাদেশ সফর ২০২১
  • " />

     

    'পারফেক্ট গেম'-এর খোঁজে তামিম, তৃপ্তির সঙ্গে অতৃপ্তি মুশফিকের

    'পারফেক্ট গেম'-এর খোঁজে তামিম, তৃপ্তির সঙ্গে অতৃপ্তি মুশফিকের    

    শুরুতেই গুচ্ছাকারে মূল উইকেটের দুটি হারিয়ে বসা, ফর্ম খুঁজে ফেরা ওপেনারের রানের খোঁজে অতি-সতর্কতা, তারপর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা, মাঝে জুটি বড় হতে হতে থেমে যাওয়া, আদর্শ মঞ্চ পাওয়া ‘ফিনিশিং রোল’-এর ব্যাটসম্যানের ভাল শুরুর ইঙ্গিতের পরও শেষ করতে না পারা, আগের ম্যাচের অন্যতম সেরা পেসারের কনকাশন, বদলি নামা বোলারের বলে রিভিউয়ের সুযোগ হাতছাড়া করা, ব্যাটিংয়ে ১১ বল বাকি থাকতেই অল-আউট হয়ে যাওয়া- আক্ষেপ বা অতৃপ্তির তালিকাটা আপনি চাইলেই লম্বা করতে পারেন। তবে এসবের ভীড়ে, কিংবা ভীড় ঠেলে মাথা উঁচু করে আছে ১৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর নেমে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানের ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত টিকে থাকা, আছে বোলারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। 

    শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেকে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল ‘পারফেক্ট’ মনে করছেন না, টানা দুই জয়ের একটিকেও মনে করছেন না অমন। আশা করছেন, শেষ ম্যাচে তেমন কিছু করে দেখাতে পারবে তার দল। 



    “যদি আপনি আজকের ম্যাচের দিকে তাকান, আমরা শুরুতে বেশ কিছু উইকেট হারিয়ে বসেছিলাম। এক পর্যায়ে ২০০ রানও অনেক কঠিন মনে হচ্ছিল। এরপর মুশফিক দুর্দান্ত খেলেছে, মাহমুদউল্লাহ অবদান রেখেছে। শেষ পর্যন্ত আমরা কোনোরকম লড়াইয়ের মতো এক স্কোর করেছি আমি বলবো। প্রথম ম্যাচের চেয়ে আজকের উইকেট ভালো ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য”, তামিমের কথায় অতৃপ্তি স্পষ্ট।

    অবশ্য তার মানে এই না যে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের তাৎপর্য নেই, ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের শীর্ষে ওঠার তাৎপর্য নেই। বোলিং বা ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে তিনি বেশ খুশিই, “বোলাররা অসাধারণ ছিল। যেভাবে অভিষেকে শরিফুল ইসলাম বল করেছে, কনকাশন ইস্যুর পর তাসকিন হুট করে এসেই যেভাবে বল করেছে- যেটা মোটেও সহজ নয়, কাউকে হুট করে বলা যে নেমে পড়তে- তা দারুণ কিছু। মিরাজ আরও একবার অসাধারণ ছিল, সাকিবও ভালো করেছে। বোলিং ডিপার্টমেন্ট নিয়ে আমি খুশি, ফিল্ডিং ডিপার্টমেন্টে আমরা ভালো ফিল্ডিং করা শুরু করেছি।”

    তামিম নিজে এদিন নিয়েছেন তিনটি ক্যাচ, সেগুলো যে সহজ তা বলা যাবে না। তবে সিরিজের আগে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করার কথা বলা তাকে এসব একটু স্বস্তি দিচ্ছে, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ক্যাচ না নিতে পারার দিকটাও দেখছেন তিনি, “হয়তো আজ এটার দরকার পড়েনি, তবে কাল এটার দরকার পড়তেও পারে। আমরা যদি সেসব ক্যাচও নিতে পারি তাহলে আমি অধিনায়ক হিসেবে আমি খুবই খুশি হবো।”

    অতৃপ্তি আছে টানা দুদিন ম্যাচসেরা হওয়া মুশফিকেরও, “ব্যাটিংয়ে স্বস্তি বলতে আলহামদুলিল্লাহ ভালো লেগেছে অবশ্যই। কিন্তু আরও এগারোটা বল বাকি ছিল। ‘ক্লোজ গেমে’ এই এগারো বলে ১০ বা ২০ রান করতে পারলে আমরা আরও এগিয়ে থাকতাম। সেদিক থেকে আমার ব্যাটিংয়ে আরও উন্নতির জায়গা আছে।”
     


    আগেরদিন সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও থেমে গিয়েছিলেন, এবার পেয়েছেন। তবে মুশফিকের কাছে কন্ডিশন সম্পর্কে সচেতন থাকা, দলের পরিস্থিতিই ছিল আগে, “সেঞ্চুরি তো একটা মাইলফলক। এটা একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। সব মিলিয়ে আপনার দল জিতল কিনা সেটা সবচেয়ে বড় ব্যাপার। একশ করলে হয়তো আমরা ম্যাচটা নাও জিততে পারতাম। আমার মূল লক্ষ্য ছিল যাতে পঞ্চাশ ওভার ব্যাট করতে পারি। যত রানই হোক, সেটা নিয়ে যেন লড়াই করতে পারি।

    “আমি মনে করি ২৪৬ যথেষ্ট ভালো ছিল। এখন হয়তো আমরা বলতে পারি অনেক রান, কিন্তু আমি মনে করি এই উইকেটে লড়াই করার মতো স্কোর ছিল। আমরা মানিসকভাবে তৈরি ছিলাম আজকের আবহাওয়ায় হয়তো ওভার কাটা যেতে পারে, মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম এমন হলে তো আমাদের হাতে নেই। নিশ্চিত ছিলাম আমি যাতে তৈরি থাকতে পারি যখনই খেলা আবার শুরু হবে।”

    বারদুয়েক বৃষ্টি-বাধার মুখে পড়েছিল তার ব্যক্তিগত মাইলফলক, তবে এর মাঝে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তিনি। তবে, “আমার মনে হয় এটা আরেকটা সেঞ্চুরি মাত্র। প্রত্যেকটা সেঞ্চুরিই আমার কাছে স্পেশাল যদি আমার দল জেতে। সেদিক থেকে অবশ্যই স্পেশাল। এটা আরেকটু স্পেশাল কারণ আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কখনো সিরিজ জেতেনি। এটার কারণে জিততে পেরেছি। অবশ্যই সামনের দিনে ভালো করতে আমাকে অনুপ্রেরণা দিবে।”

    এদিন যারা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি-- লিটন দাস, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন- তারা দ্রুত শিক্ষা নেবেন বলেও আশা করেন মুশফিক। সেসব যদি হয়, তার সঙ্গে যদি তামিমের আশা পূরণ হয়, তবে ‘পারফেক্ট’ ম্যাচটাও তারা পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই।