'পারফেক্ট' শেষের আশায় এসে শ্রীলঙ্কার দাপুটে পারফরম্যান্সে পিষ্ট বাংলাদেশ
তৃতীয় ওয়ানডে, মিরপুর (টস- শ্রীলঙ্কা/ব্যাটিং)
শ্রীলঙ্কা ২৮৬/৬, ৫০ ওভার (পেরেরা ১২০, ডি সিলভা ৫৫*, গুনাথিলাকা ৩৯, তাসকিন ৪/৪৬, শরিফুল ১/৫৬)
বাংলাদেশ ১৮৯ অল-আউট, ৪২.৩ ওভার(মাহমুদউল্লাহ ৫৩, মোসাদ্দেক ৫১, মুশফিক ২৮, চামিরা ৫/১৬, মেন্ডিস ২/৪০, হাসারাঙ্গা ২/৪৭)
শ্রীলঙ্কা ৯৭ রানে জয়ী, বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয়ী
শেষটা ‘পারফেক্ট’ করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে কুসাল পেরেরার সেঞ্চুরি, দুশমন্থ চামিরার ১৬ রানে ৫ উইকেটে শেষে এসে দাপুটে পারফরম্যান্সটা এলো শ্রীলঙ্কার কাছ থেকেই। প্রথমে সিরিজের সর্বোচ্চ স্কোর গড়ার পর বোলিং-ফিল্ডিংয়ে শ্রীলঙ্কা দেখিয়েছে উন্নতির ছাপ। সঙ্গে ছিল বাংলাদেশের বিবর্ণ ব্যাটিং, আগের দুই ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের বড় দুটি ইনিংস থাকলেও এদিন তেমন কিছু করতে পারেননি কেউ। ৯৭ রানের বড় জয়ে ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগে প্রথম পয়েন্ট পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
জিততে হলে মিরপুরে ২০১৪ সালের পর সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে হতো বাংলাদেশকে, কিন্তু তাদের শুরুটা হয়েছিল যেমন দরকার তার ঠিক উলটো। এ ম্যাচের আগে স্কোয়াড ও শেষ পর্যন্ত একাদশে আসা নাইম শেখ তার প্রথম ওয়ানডে ইনিংসে আউট হয়েছেন চামিরার অফস্টাম্পের বাইরে অ্যাঙ্গেল করে বেরিয়ে যাওয়া বলে পা না নাড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে এজড হয়ে। সাকিব আল হাসান ফিরেছেন পরের ওভারে, শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে। সিরিজে তিন ইনিংস মিলিয়ে ১৯ রান করলেন সাকিব, দ্বিপক্ষীয় সিরিজে কমপক্ষে ৩ ইনিংস ব্যাটিং করে এর চেয়ে কম রান তিনি করেছেন আর মাত্র দুইবার।
শুরুতেই উইকেট হারানোর ধাক্কায় বাংলাদেশের ব্যাটিংও ছিল ধীরগতির, ৭ম ওভারে গিয়ে বিনুরা ফার্নান্ডোকে মারা তামিমের স্ট্রেইট ড্রাইভে চারই ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি। তামিমকে অবশ্য ফিরতে হয়েছে একটু দুর্ভাগ্যজনকভাবেই, চামিরার ফুললেংথের বলে ব্যাট বাড়ানোর পর আম্পায়ারের কট-বিহাইন্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত রিভিউ করেছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই, তবে ব্যাটের কাছে বল থাকা অবস্থায় সেটি মাটিতে লেগেছিল বলে আল্ট্রা-এজ দেখে অন-ফিল্ডের সিদ্ধান্ত ওভারটার্ন করার মতো কিছু পাননি টিভি আম্পায়ার। ফলে পাওয়ারপ্লের মাঝেই ২৯ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৩ উইকেট।
প্রথম দুই ম্যাচের নায়ক মুশফিক নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি, রমেশ মেন্ডিসকে সামনে এসে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ৫৪ বলে ২৮। মোসাদ্দেক হোসেন ফিফটি করেছেন, তবে তার শেষটা হয়েছে বীভৎস এক শটে- মেন্ডিসকে নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই রিভার্স সুইপে ধরা পড়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে। হাসারাঙ্গাকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়া আফিফের উইকেটে অন্যদিকে থাকা মাহমুদউল্লাহর ওপর চাপটাই বেড়েছে শুধু।
চামিরা সেটি বাড়িয়েছেন আরও- এক ওভারে মিরাজ ও তাসকিনকে ফিরিয়ে। তাসকিনকে বোল্ড করে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। মাহমুদউল্লাহ সিরিজে দ্বিতীয় ফিফটি পেয়েছেন, তবে হাসারাঙ্গার বলে শরিফুলের পর বিনুরা ফার্নান্ডোর শিকার হয়েছেন তিনি নিজে, বাংলাদেশ থেমেছে ৪৫ বল বাকি থাকতেই।
আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ইনিংস যেমন ছিল, মোটামুটি তেমনই ছিল এদিন টসে জেতা শ্রীলঙ্কার। একসময় যেটিকে মনে হচ্ছিল ৩০০-পেরুনো স্কোর, সেটি থেমেছে আগেভাগেই। সেখানে তাসকিন আহমেদের দারুণ স্পেলেরও অবদান আছে ভালই। তবে এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাটিংয়ে সেরা পারফরম্যান্সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কুসাল পেরেরা। শুরু থেকেই চড়াও হয়েছিলেন তিনি।
আগের দুই ম্যাচেও টস ছিল গুরুত্বপূর্ণ, এদিন বৃষ্টির কারণে সেটি একটু বিলম্বিত হলেও জেতার পর ব্যাটিং-ই নিয়েছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক পেরেরা। এরপর শুরু থেকেই দানুশকা গুনাথিলাকার সঙ্গে চড়াও হয়েছিলেন তিনি। পেরেরাকে আটকাতে মেহেদি হাসান মিরাজের পর মোসাদ্দেক হোসেনের অফস্পিনেও ভর করেছিলেন তামিম, তবে সফল হয়নি সেসব। স্কয়ার অফ দ্য উইকেটে দুজনই ছিলেন দারুণ, বাংলাদেশ বোলার- পেসার বা স্পিনাররা- ছিলেন শর্ট লেংথে বোলিংয়ের দায়ে দায়ী।
দশম ওভারে গিয়ে হয়েছিল ইনিংসের প্রথম ছয়, কিন্তু প্রথম পাওয়ারপ্লেতে দুজন মিলে তুলেছিলেন ৭৭ রান। এরপর তাসকিনের এক ওভারে প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল শ্রীলঙ্কা- জোড়া ধাক্কা। প্রথম ২ ওভারে ১৫ রান দেওয়া তাসকিন তৃতীয় ওভারে এসে তিন বলের ব্যবধানে ফিরিয়েছেন গুনাথিলাকা ও পাথুম নিসাঙ্কাকে- গুনাথিলাকা ইনসাইড-এজে হয়েছেন বোল্ড, নিসাঙ্কা পুশ করতে গিয়ে হয়েছেন এজড।
তবে পেরেরা থামেননি শীঘ্রই। ৪৪ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি। এরপর জীবন পেয়েছেন কয়েকদফা, সাকিবের বলে প্রথম রিভার্স সুইপ করলেও সেটি শুধু ফিল্ডারের আঙুলই ছুঁয়ে গেছে, পরের ক্যাচটি অবশ্য নেওয়ার মতই ছিল- মিড-অনে পেছন ফিরে হাতে পুরলেও রাখতে পারেননি আফিফ। সাকিব শেষ পর্যন্ত থেকেছেন এ ইনিংসে উইকেটশূন্যই, ফলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডে মাশরাফি বিন মুর্তজা বা এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডে ওয়াসিম আকরামকে ছাড়িয়ে যাওয়া হয়নি তার।
৯৭ রানে একদফা রান-আউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া পেরেরা ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে পেয়েছেন আরেকদফা জীবন- এবার মোস্তাফিজের বলে মিড-অনে পেছন ছুটে গিয়েও নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। শেষ পর্যন্ত ৯৯ বলেই পূর্ণ করেছেন সেঞ্চুরি, যেটি তার ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ, বাংলাদেশের বিপক্ষেই তৃতীয়। সেঞ্চুরির পরপরই অবশ্য উড়ান দেওয়া হয়নি তার, শেষ পর্যন্ত শরিফুলের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১২২ বলের ইনিংসে মেরেছেন ১১টি চার ও ১ ছয়। সে ক্যাচটি মিড-অনে দারুণভাবে নিয়ে একটু দায়মোচন করেছেন মাহমুদউল্লাহ। পেরেরার আগেই ফিরেছেন কুসাল মেন্ডিস, তাসকিনের বলে মিড-অফে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে এরপরের হাইলাইটস ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ইনিংস, যদিও একটু ধীরগতিরই ছিলেন তিনি। ৭০ বলে ৫৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। অন্যদিকে তাসকিন ফিরিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে, যেটি ম্যাচে তার চতুর্থ উইকেট। শেষ ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ৬৯ রান।