ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসি: 'বাঁচতে' হলে জানতে হবে (পর্ব ১)
করোনাভাইরাসের কালো গ্রাস থেকে এখনও পুরোপুরি মুক্তি পায়নি পৃথিবী। গত বছরের মার্চ থেকে চলতে থাকা এই অনিশ্চয়তার এক সময়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধই হয়ে গিয়েছিল ইউরোপের সেরা লিগগুলো। পিছিয়ে দিতে হয়েছিল অলিম্পিক, কোপা আমেরিকা, ইউরোর মত বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলো। তবে গত বছরের থেকে এবারের চিত্র কিছুটা হলেও আশাজাগানিয়া। অনেক আগেই মাঠে ফিরেছে ক্লাব ফুটবল। আগামী সপ্তাহে মাঠে গড়াবে 'ইউরোপের বিশ্বকাপ' খ্যাত ইউরো-এর ২০২০ সংস্করণ। এক বছর পরে হলেও টুর্নামেন্টের নাম যেমন অপরিবর্তিত আছে, তেমনি অপরিবর্তিত আছে টুর্নামেন্ট ঘিরে রোমাঞ্চের। সেই রোমাঞ্চে নতুন মাত্রা যোগ করছে ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসি। কেমন হবে এই ফ্যান্টাসি? কারা আপনাকে এনে দিতে পারে সাফল্য? এসবই নিয়েই লিখবো আজ। তিন পর্বের এই লেখায় আশা করি কিছু ধোঁয়াশা/প্রশ্ন দূর করতে পারবো।
আরও পড়ুন:
ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসি নিয়মকানুন: পর্ব ২ এবং পর্ব ৩
বাজেট, দল বাছাইয়ের ফরম্যাট, ফরমেশন, ডেডলাইন
ফুটবল ফ্যান্টাসি শুনলেই স্বাভাবিকভাবে সবার আগে মাথায় আসে ফ্যান্টাসি প্রিমিয়ার লিগের কথা। বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের খেলা 'এফপিএল'-এর সাথে সাদৃশ্যের চেয়ে বৈসাদৃশ্যই হয়তো বেশি ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসির। এজন্যেই যারা 'এফপিএল' ছাড়া আর কোনো ফুটবল ফ্যান্টাসি খেলেননি, তাদের জন্য নিয়মগুলো কিছুটা গুবলেটে মনে হতে পারে। তবে যারা চ্যাম্পিয়নস লিগের ফ্যান্টাসি খেলেছেন, তাদের কাছে ব্যাপারগুলো একদমই পরিচিত। অন্তত দল বাছাইয়ের দিক দিয়ে মিল আছে ইউরো ফ্যান্টাসির।
১০০ মিলিয়ন ইউরো বাজেট, দলে ভেড়াতে হবে ১৫জন ফুটবলার (২জন গোলরক্ষক, ৫জন ডিফেন্ডার, ৫জন মিডফিল্ডার, ৩জন ফরোয়ার্ড)। গ্রুপপর্বে এক দল থেকে সর্বোচ্চ ৩জন ফুটবলার নিতে পারবেন, যা শেষ ষোল, কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমি ফাইনালে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৪জন, ৫জন, এবং ৬জন করে। একদম ফাইনাল ম্যাচের আগে আপনি চাইলে দুই ফাইনালিস্টের যেকোনো এক দল থেকে সর্বোচ্চ ৮জন নিতে পারবেন। টুর্নামেন্ট যত এগুবে, এক দল থেকে সর্বোচ্চ ফুটবলার দলে ভেড়ানোর সংখ্যার সাথে বাড়বে আপনার বাজেট। ১০০ মিলিয়নের জায়গায় শেষ ষোল থেকে বাজেট হবে ১০৫ মিলিয়ন।
এবার আসি ফরমেশন কেমন হবে, সে বিষয়ে। অন্তত ১জন গোলরক্ষক, অন্তত ৩জন ডিফেন্ডার, অন্তত ২জন মিডফিল্ডার, এবং অন্তত ১জন ফরোয়ার্ড রেখে নিজের পছন্দমত ফরমেশন সাজাতে পারবেন আপনি। সত্যি বলতে এবার বাজেট ফরোয়ার্ডদের পয়েন্ট আনার সম্ভাবনা বেশ প্রশ্নবিদ্ধই বলা যায়। সেক্ষেত্রে ৩-৫-২/৪-৪-২ ফরমেশনগুলো আপনার জন্য হতে পারে সেরা সিদ্ধান্ত। তবে বাজেট ফরোয়ার্ডরা ভাল করতেও পারেন। বাজেট ঠিক রেখে দল বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত এবার আপনার। প্রতি ম্যাচডের প্রথম ম্যাচ শুরু হওয়ার সময়টিই ঐ ম্যাচডের ডেডলাইন। যেমন আগামী শুক্রবার রাত ১টায় (শনিবার) তুরস্ক-ইতালি ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে ইউরো ২০২০। ১ম ম্যাচডে-এর ডেডলাইন তাই রাত ১টা। এফপিএল-এর চেয়ে এক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধাই দিচ্ছে ইউরো ফ্যান্টাসি। অনেক সময়ই ডেডলাইনের আগে একাদশের অফিশিয়াল খবর জেনে যাওয়া যায়।
সাবস্টিটিউশন: ম্যাচডে-তেই বদলাতে পারবেন অধিনায়ক!
খুব সম্ভবত ইউরো ফ্যান্টাসির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল ম্যাচডে-র মধ্যেই অধিনায়ক বদল। প্রতি ম্যাচডে-র শুরুতে আপনি যাকে অধিনায়ক দিবেন, ঐ দিনের ম্যাচগুলো শেষে পরের দিনের ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে চাইলে বদলে নিতে পারেন অধিনায়ক। ধরুন, ম্যাচডে ১-এর গেমডে ১-এ আপনার মূল একাদশের অধিনায়ক রোমেলু লুকাকু হতাশ করলো আপনাকে। গেমডে ২, মানে পরদিন খেলবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। গেমডে ২-এর সব ম্যাচ শুরুর আগে আপনি চাইলে লুকাকু থেকে এমবাপ্পে-কে অধিনায়ক বানাতে পারেন। আবার গেমডে ৩-এ খেলবেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এমবাপ্পে থেকেও আশানুরূপ ফল না পেলে গেমডে ৩ শুরুর আগে আপনি চাইলে অধিনায়ক করতে পারেন রোনালদোকে।
এভাবে প্রতি ম্যাচডের প্রতি গেমডের প্রথম ম্যাচের আগে চাইলে আপনি বদলে নিতে পারেন আপনার অধিনায়ক। মূল কথা হল, সব শেষে আপনি যাকে অধিনায়ক রাখবেন; শুধুমাত্র তার পয়েন্টই দ্বিগুণ হবে। ধরুন, লুকাকু এক ম্যাচে পেল ৬ পয়েন্ট, আপনার অধিনায়ক হওয়ায় সে পাবে ১২ পয়েন্ট। এবার আপনি তার বদলে এমবাপ্পেকে অধিনায়ক দিলে লুকাকু-এর পয়েন্ট হয়ে যাবে ৬, এমবাপ্পে ঐ ম্যাচডেতে আপনার সর্বশেষ অধিনায়ক হলে তার পয়েন্ট তখন হবে দ্বিগুণ।
এ তো গেল মুদ্রার এপিঠ, এবার শুনুন তাহলে মুদ্রার ওপিঠ। কোনো ম্যাচডেতে আপনার অধিনায়ক না খেললে এবং আপনি বেঞ্চ থেকে অন্য কাউকে একাদশে না আনলে, আপনার অধিনায়কের বদলে আপনার বেঞ্চে বদলি ফুটবলারদের ক্রমিক অনুসারে একজন খেলবেন অধিনায়কের বদলে; তবে অধিনায়কের মত তার পয়েন্ট দ্বিগুণ হবে না। একইভাবে, অধিনায়ক না খেললে এবং আপনি অন্য কাউকে বেঞ্চ থেকে একাদশে আনলে আবার অধিনায়ক বদলি হবেন না। অধিনায়ক থেকে তখন আপনি পাবেন '০' (শূন্য) পয়েন্ট এবং ঐ ম্যাচডে-তে কোনো ফুটবলারই দ্বিগুণ পয়েন্ট পাবেন না।
ট্রান্সফারস: জেনে নিন কোন রাউন্ডে কত
এই আর্টিকেলটি যখন লিখছি, তখন ইউরোর বাকি ঠিক ১ সপ্তাহ। কিন্তু দল বানানো শুরু হয়েছে ঢের আগে। এর মধ্যে অসংখ্যবার দলে পরিবর্তন আনেননি, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ইউরো শুরু হওয়ার আগে আনলিমিটেড ট্রান্সফারস পাবেন সবাই। গ্রুপপর্বের প্রতি ম্যাচডে-তে পাবেন ২টি করে। অনেকে হয়তো ম্যাচডে এবং গেমডে মিলিয়ে ফেলতে পারেন। তাদের জন্য বলছি, প্রতি ম্যাচডে সমাপ্তি হয় ইউরোর ২৪ দল ১ রাউন্ড ম্যাচ খেলার পর। আর গেমডে সমাপ্ত হয় একদিনের সব ম্যাচ শেষে। যেমন আগামী শনিবার তুরস্ক-ইতালি দিয়ে শুরু হয়ে বেলজিয়াম-রাশিয়া ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে ম্যাচডে ১-এর গেমডে ১। আর তুরস্ক-ইতালি দিয়ে শুরু হয়ে ম্যাচডে ১ শেষ হবে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় (বুধবার) ফ্রান্স-জার্মানি ম্যাচ দিয়ে; যখন ২৪ দলের প্রত্যেকেই ১টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।
ইউরো শুরুর আগের মত শেষ ষোল শুরুর আগেও পাবেন আনলিমিটেড ট্রান্সফারস। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে আর থাকবে না আনলিমিটেড ট্রান্সফারের সুযোগ; অতিরিক্ত ট্রান্সফার করলে প্রতি ট্রান্সফারের জন্য পয়েন্ট কাটা যাবে ৪ করে। যেমন গ্রুপপর্বে প্রতি ম্যাচডে-তে ট্রান্সফার পাবেন ২টি করে, আপনি ৩টি ট্রান্সফার করলে পয়েন্ট কাটা যাবে ৪; ৪টি ট্রান্সফার করলে পয়েন্ট কাটা যাবে ৮। কোয়ার্টার ফাইনাল শুরুর আগে ট্রান্সফার পাবেন ৩টি; এবং সেমিফাইনাল-ফাইনালের আগে পাবেন ৫টি করে। আপনি চাইলে কোনো ম্যাচডে-এর পর ট্রান্সফার না-ও করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ট্রান্সফার ব্যবহার না করার/একটি ব্যবহার করার পরের রাউন্ডে আপনার প্রাপ্য ট্রান্সফারের সাথে যোগ হবে ১টি অতিরিক্ত ট্রান্সফার।
চিপস, পয়েন্ট স্কোরিং: মারপ্যাঁচ আছে এখানেও!
এফপিএল-এর মত ইউরো ফ্যান্টাসিতেও আছে 'ওয়াইল্ডকার্ড' চিপ। এই চিপ ব্যবহারে আপনি পুরো দল বদলে ফেলতে পারবেন। ওয়াইল্ডকার্ডের ডেডলাইন হবে চিপটি অ্যাক্টিভ করার পরের ম্যাচডে-এর প্রথম ম্যাচের ডেডলাইন। খুব সম্ভবত ইউরো ফ্যান্টাসির সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপারটি থাকছে এই চিপেই। 'লিমিটলেস' নামক চিপটি এফপিএল-এর 'ফ্রি হিট'-এর মতই; এক সপ্তাহের জন্য আনলিমিটেড ট্রান্সফারস; কিন্তু ঐ উইক পরে আবার আপনার আগের দল ফেরত আসবে। 'লিমিটলেস'-কে তাই 'এক সপ্তাহের ওয়াইল্ডকার্ড' বললেও হয়তো ভুল বলা হবে না। কিন্তু আকর্ষণীয় ব্যাপার হল; 'লিমিটলেস' চিপ ব্যবহার করলে ঐ সপ্তাহে কোনো বাঁধাধরা বাজেট থাকছে না। আপনি আক্ষরিক অর্থেই দলে নয়্যার-ডি ব্রুইন-লুকাকু-এমবাপ্পে-রোনালদোদের সবাইকেই নিতে পারবেন। চিপ দুটির কোনোটিই একবার অ্যাক্টিভ করলে আবার ক্যান্সেল করা যাবে না। এফপিএল-এ যেমন 'ট্রিপল ক্যাপ্টেন' বা 'ফ্রি হিট' চিপ ক্যান্সেল করা যেত; এখানে সে সুযোগ থাকছে না।
পয়েন্ট স্কোরিংয়ে দুটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল; আপনার কোনো ফুটবলার ডিবক্সের বাইরে থেকে গোল করলে আপনি গোলের সাথে অতিরিক্ত ১ পয়েন্ট পাবেন। 'এফপিএল'-এ কোনো ফুটবলার পেনাল্টি আদায় করলে আর পেনাল্টি মিস হইলে; পেনাল্টি পাওয়া ফুটবলারের অ্যাসিস্টের পয়েন্ট যোগ হত না। কিন্তু ইউরো ফ্যান্টাসিতে পেনাল্টি মিস করলেও অ্যাসিস্টের পয়েন্ট পাবেন পেনাল্টি আদায় করা ফুটবলার। তাই দল বাছাইয়ের সময় ডি ব্রুইন, রোনালদোদের মত দূরপাল্লার শটে পারদর্শী এবং জর্জিনহোদের মত পেনাল্টি নেওয়া ফুটবলারদের দিকে খেয়াল রাখতেই হবে আপনাকে।
ফুটনোট: ইউরো ফ্যান্টাসির মূল স্ট্র্যাটেজিই আসলে এর নিয়মকানুনগুলো। আপনার দল যতই ভাল হোক, নিয়মকানুন অনুযায়ী দারুণ স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে অনেক খর্বশক্তির দল নিয়েও বেশি পয়েন্ট পেয়ে আপনাকে টপকে যেতে পারে যে কেউই। সেজন্যই নিয়মকানুন নিয়েই পুরো এক পর্ব লেখা। আশা করি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। ৩ পর্ব বিশিষ্ট এই লেখার পরের পর্বগুলোতে থাকছে পজিশন এবং প্রাইস রেঞ্জ অনুযায়ী সেরা ফুটবলারদের বিশ্লেষণ।