• ইউরো ২০২০
  • " />

     

    ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসি: মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ড (পর্ব ৩)

    ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসি: মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ড (পর্ব ৩)    

    ইউরো ফ্যান্টাসির প্রথম দুই পর্বে লিখেছিলাম নিয়মকানুন, গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডারদের নিয়ে। তৃতীয় এবং শেষ পর্ব থাকছে দাম অনুযায়ী সেরা মিডফিল্ডার এবং ফরোয়ার্ডদের নিয়ে। প্রিমিয়াম থেকে বাজেট- আলোকপাত করার চেষ্টা করছি সবদিকেই। সাথে থাকছে পরিসংখ্যান, সাম্প্রতিক ফর্ম এবং ‘হোম’ বা ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচের পারফরম্যান্সের হিসাবনিকাশ। গোলরক্ষক এবং ডিফেন্ডারদের মত এই পর্বে মূল একাদশে জায়গা নিশ্চিত- এমন ফুটবলারদের নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে...


    আরও পড়ুন: ইউরো ২০২০ ফ্যান্টাসি নিয়মকানুন: পর্ব ১ এবং পর্ব ২


     

    মিডফিল্ডার

    প্রিমিয়াম (৮-১০.৫ মিলিয়ন)

    দামের বিচারে ইউরো ফ্যান্টাসিতে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন দুই ম্যানচেস্টারের দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, কেভিন ডি ব্রুইন এবং ব্রুনো ফার্নান্দেজ (উভয়ই ১০.৫ মিলিয়ন)। কিন্তু এফপিএল-এর মত এবার অবশ্য কেডিবি এবং ব্রুনো নেই প্রায় সব ফ্যান্টাসি দলেই। ডি ব্রুইনের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার মূল কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে তার ফেসিয়াল ইনজুরি। বেলজিয়ান কোচ রবার্তো মার্টিনেজ জানিয়েই দিয়েছেন, রাশিয়ার বিপক্ষে ইউরোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচ মিস করার সম্ভাবনাই প্রবল ডি ব্রুইনের। ব্রুনোর অবশ্য ফিটনেস সংক্রান্ত তেমন নয়। ‘গ্রুপ অফ ডেথ’-এ পড়ায় এবং চড়া দামের কারণেই হয়তো ব্রুনো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। তবে বাজেটে সম্ভব হলে এ দুজনের যেকোনো কাউকেই নিয়ে রাখাটাই হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ।

     



    ৯-১০ মিলিয়ন দামে আছেন রিয়াল মাদ্রিদের দুই তারকা গ্যারেথ বেল (৯.৫ মিলিয়ন) এবং এডেন হ্যাজার্ড (১০ মিলিয়ন)। ওয়েলসের ‘মেইন ম্যান’ অবশ্যই বেল, তবে ইতালি, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ডের গ্রুপে বেলের পারফরম্যান্স নিয়ে হয়তো সন্দিহানই হওয়ার কথা। রিয়ালের হয়ে প্রায় পুরো মৌসুমই ইনজুরিতে থাকা হ্যাজার্ডের দিকেও তেমন মনযোগ নেই ফ্যান্টাসি ম্যানেজারদের। ৯.৫ মিলিয়নে দুই জার্মান উইঙ্গার সার্জ গ্যানাব্রি, লিরয় সানে এবং ফ্রেঞ্চ উইঙ্গার কিংসলি কোমান রয়েছেন; তবে এই বাজেটে নিশ্চিতভাবেই একাদশে সুযোগ পাওয়ার কারণে এগিয়ে থাকবেন গ্যানাব্রিই।

    ৯ মিলিয়ন দামে দলে ভেড়াতে পারেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে জয়সূচক গোল করা কাই হাভের্টজকে; তবে সানে, কোমানের মত নিজ দলে তার জায়গা অনিশ্চিত। তবে এই দামে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন হতে পারেন অসাধারণ চয়েস। নিজেদের সবগুলো ম্যাচই আবার ‘হোম’-এ খেলবেন এরিকসেন। ৮-৮.৫ মিলিয়নে সেরা চয়েস হতে পারেন হাকান চালহানগলু, বের্নার্দো সিলভা, ইভান পেরিসিচ, লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে, ডিয়েগো জোটা, ফেরান তোরেস, মারেক হামসিক, জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডাম, মার্সেল সাবিটজাররা। স্পেনের হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে থাকা তোরেস সব ম্যাচ খেলবেন নিজেদের মাঠেই।

    মিড বাজেট (৬.৫-৭.৫ মিলিয়ন)

    মিড বাজেটে রীতিমত মধুর সমস্যায়ই ভুগতে হবে ফ্যান্টাসি ম্যানেজারদের। ৭-৭.৫ মিলিয়নে দলে ভেড়াতে পারবেন এমিল ফর্সবার্গ, আলেকজান্ডার গলোভিনকে। ফেদেরিকো বার্নার্দেশি এবং জ্যাক গ্রিলিশও আছেন ৭.৫ মিলিয়নে, তবে নিজ নিজ দেশের মূল একাদশে তাদের জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কম। ৭ মিলিয়ন বাজেটে দলে ভেড়াতে পারবেন জের্দান শাকিরি, ইয়ানিক ফেরেইরা-কারাস্কো, পিওতর জিয়েলিন্সকি, মেসন মাউন্ট, রুসলান মালিনভস্কি, ফেদেরিকো কিয়েসা। ডাচ উইঙ্গার স্টেফান বার্গুইস, স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ড্যানি ওলমোর দামও ৭ মিলিয়ন; তবে একাদশে নিশ্চিত নন কেউই।

    বাজেট (৪-৬ মিলিয়ন)

    ৬ মিলিয়ন বাজেটে নিঃসন্দেহে সেরা চয়েস হতে পারেন ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড ডমেনিকো বেরার্দি। নিজেদের শেষ প্রীতি ম্যাচে মূল একাদশে ছিলেন, পেয়েছেন গোলও। গ্রুপপর্বের ৩টি ম্যাচই তিনি খেলবেন ‘হোম’-এ। তবে বেরার্দিকে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, মানচিনি মূল একাদশে যাকেই রাখুন; ৬৫-৭০ মিনিটের দিকে ফরোয়ার্ড লাইনে বদলি আসার সম্ভাবনা প্রবল। তার ওপর বেরার্দি খারাপ করলে এই বাজেটে তেমন আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারা ফুটবলারের সংখ্যা একেবারেই কম, এবং তার বদলে অন্য কোনো দামী মিডফিল্ডারে ‘আপগ্রেড’ করাও বেশ কষ্টসাধ্য। ৬ মিলিয়ন বাজেটে আছেন এনিস বার্দি, সেবাস্তিয়ান লারসন, এলজিফ এলমাস, জর্জিনহো, জশুয়া কিমিখরা। ৫.৫ মিলিয়নে মূল একাদশে খেলবেন কেবল ডেভিড আলাবা এবং তুরষ্কের ইউসুফ ইয়াজিচি। ৪-৫ মিলিয়নে মূল একাদশে খেলে পারফর্ম করার মত ফুটবলার নেই তেমন কেউই।


    ফরোয়ার্ড

    প্রিমিয়াম (৮.৫-১২ মিলিয়ন)

    দেখতে দেখতে এসে পড়লাম ৩য় এবং শেষ পর্বের শেষ অংশে। শেষটা করছি খুব সম্ভবত অধিকাংশ ফ্যান্টাসি ম্যানেজারের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণের দিক দিয়ে। ফরোয়ার্ডদের মধ্যে ইউরো ফ্যান্টাসিতে সবচেয়ে বেশি দাম স্বাভাবিকভাবেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের (উভয়ই ১২ মিলিয়ন)। তবে চড়া দাম এবং দলের বাজেট ব্যালান্স ঠিক রাখার জন্যই হয়তো অধিকাংশ দলেই নেই রোনালদো-এমবাপ্পে। ১১.৫ মিলিয়নে হ্যারি কেইনকে নিয়েছেন ফ্যান্টাসি ম্যানেজারদের শতকরা ৪৩ ভাগ। একই বাজেটে রবার্ট লেভানডফস্কির চাহিদাও অনেক। বুন্দেসলিগায় জার্ড মুলারের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ভাঙা পোলিশ স্ট্রাইকার ইউরোতে আসছেন দুর্ধর্ষ ফর্মে। স্লোভাকিয়া এবং সুইডেনের বিপক্ষে তার থেকে দারুণ কিছুরই প্রত্যাশায় আছেন ম্যানেজাররা।

     

     

    ১১ মিলিয়নে দুই ফরোয়ার্ড আঁতোয়া গ্রিযমান এবং রোমেলু লুকাকু-কে দলে নিয়েছেন লক্ষাধিক ম্যানেজার। বার্সেলোনায় ফর্ম তেমন প্রত্যাশিত না হলেও ফ্রান্সের হয়ে গ্রিযমান দুর্দান্ত। অন্যদিকে লেভানডফস্কির মতই লিগ জিতে অসাধারণ ফর্মে ইউরোতে আসছেন লুকাকু। ১০ মিলিয়ন বাজেটে মেমফিস ডিপাই ডাচদের ‘মেইন ম্যান’; ইউরোর পর বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব এবং প্রীতি ম্যাচে অসাধারণ খেলছেন ডিপাই; পাচ্ছেন গোলও। চিরো ইম্মোবিলে ইতালির মূল স্ট্রাইকার; ‘আজ্জুরি’দের হয়ে তার ফর্ম আশাজাগানিয়া না হলেও গ্রুপপর্বের ৩টি ম্যাচই লাৎসিওর মাঠে হওয়ায় ইম্মোবিলের চাহিদাও অনেক। ১০ মিলিয়নের অন্য স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছেন ৬ বছর পর। কিছুটা কম দামে ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড দলে নিতে চাইলে নিঃসন্দেহে নিতে পারেন বেনজেমাকে। 

    ৮.৫-৯.৫ মিলিয়ন বাজেটে আছেন জার্মান দলে ৩ বছর পর ফেরা থমাস মুলার (৯ মিলিয়ন), আন্দ্রে সিলভা (৯ মিলিয়ন), মার্কাস রাশফোর্ড (৯.৫ মিলিয়ন), দ্রিস মার্টেন্স (৯ মিলিয়ন), টিমো ভার্নার (৮.৫ মিলিয়ন)। তবে এদের কারোই নিজ একাদশে জায়গা পাকা নয়। এই বাজেটে নিশ্চিতভাবেই একাদশে থাকবেন আর্টেম জুবা (৮.৫ মিলিয়ন), আলভারো মোরাতা (৯ মিলিয়ন)। 

     

     

    মিড বাজেট (৭-৮ মিলিয়ন)

    এই বাজেটে দলে ভেড়াতে পারবেন বুরাক ইলমাজ (৮ মিলিয়ন), ইউসেফ পলসেন (৮ মিলিয়ন), আর্কাদিউজ মিলিক (৮ মিলিয়ন), মার্টিন ব্র্যাথওয়েট (৭.৫ মিলিয়ন), মার্কো আর্নাউটোভিচ (৭ মিলিয়ন), রোমান ইয়ারেমচুক (৭ মিলিয়ন), টিমু পুক্কি (৭ মিলিয়ন)। একাদশে সু্যোগ নিশ্চিত নয় তবে বেঞ্চ থেকে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন এমন অনেককেই পাবেন এই বাজেটে। আন্তে রেবিচ (৭ মিলিয়ন), সাসা কালাজিচ (৭.৫ মিলিয়ন),ওয়ুট ওয়েগহর্স্ট (৭ মিলিয়ন), মারিও গাভ্রানোভিচের (৭.৫ মিলিয়ন) একাদশে সু্যোগ পাওয়া নিশ্চিত না হলেও ‘সুপার সাব’ হওয়ার সামর্থ্য আছে সবারই।

    বাজেট (৫-৬ মিলিয়ন)

    একেবারে বাজেট ফরোয়ার্ডদের নিয়ে হয়তো সুবিধা করে উঠতে পারবেন না ফ্যান্টাসি ম্যানেজাররা। ৫-৬ মিলিয়ন বাজেটে নিশ্চিতভাবে একাদশে থাকবেন কেবল হাঙ্গেরির অ্যাডাম সালাই (৬ মিলিয়ন) এবং ওলেগজান্ডার যুবকভ (৬ মিলিয়ন)। এছাড়া এনেস উনাল (৬ মিলিয়ন), জোনাস উইন্ড (৬ মিলিয়ন), ডনইয়েল মালেন (৬ মিলিয়ন) ‘থার্ড চয়েস স্ট্রাইকার’ হিসেবে দারুণ ‘ভ্যালু ফর মানি’ হতে পারেন।


    [পুনশ্চ: এই লেখাটির ৩টি পর্বই লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত। চাইলে আপনি আমলে নিতে পারেন, আবার লেখককে দু’পশলা গাল দিয়ে নিজের মত দল সাজাতে পারেন। তবে লেখকের লিস্টে থাকা কাউকে দলে নিতে চেয়েও তার কথা শুনে না নিয়ে ভুক্তভোগী হলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। হ্যাপি ইউরো ফ্যান্টাসি…]