সোহান-জিয়া ঝড়ে বিধ্বস্ত মোহামেডান, মিঠুন, সৌম্যে বড় জয় গাজি, প্রাইম ব্যাংকের
শেখ জামাল-মোহামেডান, মিরপুর
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ১৬১/৫, ২০ ওভার (নুরুল ৬৬*, জিয়াউর ৩৫*, সৈকত ২০, আশরাফুল ১৫, সাকিব ২/১২, আবু হায়দার ২/৫৩, আসিফ ১/১৮)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ১৪৫/৮, ২০ ওভার (নাদিফ ৫৭, শামসুর ২৯, আবু হায়দার ১৪, এনামুল ৩/১৩, জিয়াউর ২/২০, এবাদত ১/২৭, শাকিল ১/৩৪)
শেখ জামাল ১৬ রানে জয়ী
আগের ম্যাচে শাইনপুকুরে ডুবেছিল শেখ জামাল, তার আগের ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরেছিল গাজি গ্রুপের কাছে। এদিনও ১৫ ওভার শেষেও তাদের রান ছিল ৫ উইকেটে ৮৫, একপাশে ১৯ বলে ২৫ রানে অপরাজিত অধিনায়ক নুরুল হাসান, জিয়াউর রহমান তখন মাত্র নেমেছেন। মোহামেডানের সামনে আরেকবার হুমড়ি খেয়ে পড়ার আশঙ্কা এরপর সরিয়ে দিলেন নুরুল হাসান সোহান ও জিয়াউর রহমান।
মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৪ ওভারর কোটা পূর্ণ করেছেন আগেই, ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। তবে তিন পেসার আবু হায়দার রনি, আবু জায়েদ রাহি ও তাসকিন আহমেদের রানের ট্যালি বাড়তে লাগলো এরপর, নুরুল-জিয়ার জুটিতে উঠলো ৮০ রান, শেষ ৫ ওভারে শেখ জামাল তুললো ৭৬! সেই যে মোমেন্টাম গেল তাদের দিকে, সেটি আর ফিরলো না মোহামেডানের কাছে। শেষ পর্যন্ত মৌসুমে প্রথম হারের স্বাদও পেতে হলো তাই সাকিবদের, চতুর্থ ম্যাচে এসে।
শুরু থেকেই রান করতে ভুগছিলেন শেখ জামালের দুই ওপেনার সৈকত আলি ও মোহাম্মদ আশরাফুল, মোহামেডানের দুই বাঁহাতি স্পিনার সাকিব-আসিফের বিপক্ষে বিশেষ করে। ৭ম ওভারে সাকিবের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে আশরাফুল করেছেন ২৪ বলে ১৫। এরপর ফারদিন হাসান, নাসির হোসেনরা ফিরে গেছেন আগেভাগেই, ১২তম ওভারে আসিফের বলে শেষ হয়েছে সৈকতের ২৯ বলে ২০ রানের সংগ্রামও।
সেই আসিফকেই প্রথম বাউন্ডারি মেরেছিলেন সোহান- ছয়। জিয়া নামার আগে তাসকিনকে মেরেছিলেন আরেকটি। এরপর ৩৪ বলে ৬৬ রানের ইনিংসে মেরেছেন আরও ৩টি, আর ১৭ বলে ৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে একটি চারের সঙ্গে জিয়া ছয় মেরেছেন ৩টি। প্রথম দুই ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়া আবু হায়দার শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে দিয়েছেন ৫৩ রান।
রানতাড়ায় একসময় ১৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়েছিল মোহামেডান। পারভেজ হোসেন ইমন, সাকিব ও ইরফান শুক্কুরকে ফিরিয়েছেন অফস্পিনার মোহাম্মদ এনামুল, মাঝে মাহমুদুল হাসানের উইকেট নিয়েছিলেন এবাদত। এরপর শামসুর রহমান, শুভাগত হোম ও এবাদত হোসেনকে নিয়ে এগুনোর চেষ্টা করেছিলেন নাদিফ চৌধুরি, তবে কাজে দেয়নি তা। শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি থাকতে ৪৩ বলে ৫৭ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এনামুল ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ওই ৩ উইকেট, জিয়া ২ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ২০ রান।
****
প্রাইম ব্যাংক-পারটেক্স, বিকেএসপি-৩
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৬৭/৫, ২০ ওভার (মিঠুন ৫৭*, তামিম ৪৭, আরাফাত সানি জুনিয়র ১৮, নাহিদুল ১৩*, জুবাইর ১/২২, রাজিবুল ১/৩০, জয়নুল ১/৩৩)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ৯৫ অল-আউট, ১৭.২ ওভার (মুসা ২৯, রাজিবুল ২৩, রুবেল ৪/৩০, নাঈম ২/১৪, নাহিদুল ২/২৩, শরিফুল ১/৯)
প্রাইম ব্যাংক ৭২ রানে জয়ী
তামিম ইকবালের ৩৩ বলে ৪৭ রানের সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুনের ৩১ বলে ৫৭ রানের ঝড়ো ইনিংসের পর রুবেল হোসেন, নাঈম হাসানদের বোলিংয়ে পারটেক্সকে উড়িয়ে দিয়েছে প্রাইম ব্যাংক। ১৬ বল বাকি থাকতে ৭২ রানে হেরেছে তারা, প্রিমিয়ার লিগের এ মৌসুমে রানের হিসেবে এখন পর্যন্ত যেটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে পরাজয়।
আগে ব্যাটিং করা প্রাইম ব্যাংক প্রথম ৭ ওভারে তুলেছিল ৪১ রান, রনি তালুকদারের উইকেট হারিয়ে। সে সময় ২৫ বলে ২১ রান ছিল তামিমের। অবশ্য ফিফটিটা পাননি তিনি এদিনও, ৪ ম্যাচে তিনবার ত্রিশ, দুইবার চল্লিশ পেরুলেন তিনি এ নিয়ে। এদিন ৩ রান দূরে থেমেছেন শরীরঘেঁষা বলে জুবাইরকে টেনে মারতে গিয়ে, অবশ্য এর আগে ২য় উইকেটে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে গড়েছেন ৫৫ রানের জুটি। তামিমের আগেই ফিরেছেন এনামুল, এবার দুই অঙ্কে গেলেও প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক থেমেছেন ২০ বলে ১৬ রান করেই।
এরপর মিঠুনের আক্রমণে পড়েছে পারটেক্স। নিজের মুখোমুখি হওয়া ১৪তম বলে প্রথম বাউন্ডারি মেরেছেন মিঠুন, শেষ পর্যন্ত মেরেছেন ৩টি করে চার ও ছয়। মিঠুনের সঙ্গে নাহিদুলের ৫ বলে ১৩ রানের ক্যামিওতে রানরেট কমেনি তাদের, শেষ ৬ ওভারে এসেছে ৬৩ রান।
রানতাড়ায় পারটেক্স উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে, ওপেনিংয়ে নামা আব্বাস মুসার ১৩ বলে ২৯ ছাড়া তাড়া করার পেসে চলা ইনিংসও ছিল না কোনো। এর আগে শ্রীলঙ্কা সিরিজ মিস করা রুবেল হোসেন এদিন প্রথম খেলতে নেমেছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরের পর, ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ফেরাটা ভালই হয়েছে তার। এছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন নাহিদুল ও নাঈম হাসান, একটি নিয়েছেন শরিফুল।
****
গাজি গ্রুপ-রূপগঞ্জ, বিকেএসপি-৪
লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ ১৩২/৮, ২০ ওভার (মারুফ ২৪, সোহাগ ২১, সাব্বির ১৮, মাহমুদউল্লাহ ২/১৯, মাহাদি ২/২৩, মুকিদুল ২/৩৮, নাসুম ১/৯)
গাজি গ্রুপ ক্রিকেটারস ১৩৩/৩, ১৭.৫ ওভার (সৌম্য ৫৩, মুমিনুল ৩৪, মাহমুদউল্লাহ ১৫*, নাবিল ১/১২, শহিদ ১/২২, অনিক ১/৩৪)
গাজি গ্রুপ ৭ উইকেটে জয়ী
প্রাইম ব্যাংকের মতো সহজ জয় পেয়েছে গাজি গ্রুপও। আগেরদিন প্রাইম দোলেশ্বরের কাছে হারা গাজি গ্রুপ এদিন রূপগঞ্জকে উড়িয়ে দিয়েছে বোলারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সের পর সৌম্য সরকারের ফিফটিতে। লিগে গাজি গ্রুপের এটি দ্বিতীয় জয়, অন্যদিকে ৪ ম্যাচ পরও জয়শূন্যই থাকলো রূপগঞ্জ।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রূপগঞ্জ এদিন সুবিধা করতে পারেনি মোটেও। প্রথম ওভার থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে তারাও। ৭ জন দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন, তবে ২৪-এর ওপর যেতে পারেননি কেউ। গাজির নাসুম আহমেদ ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান, উইকেট নিয়েছেন একটি। লিগে ধারাবাহিক বোলিং পারফরম্যান্সটা ধরে রেখেছেন মাহমুদউল্লাহ, ১৯ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন তিনি এদিন ৪ ওভারে। এছাড়া দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন মাহাদি হাসান ও মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধও।
এদিন গাজির হয়ে ওপেনিংয়ে এসেছিলেন আগের ম্যাচে আট নম্বরে ব্যাটিং করা মাহাদি। অবশ্য ১৪ বলে ১৩ রান করেই ফিরে গেছেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য ও মুমিনুল হক যোগ করেছেন ৮২ রান। ২৯ বলে ৩৪ করে মুমিনুল আউট হলেও সৌম্য ফিরেছেন ৪৩ বলে ৫৩ রান করে, ইনিংসে মেরেছেন ৪টি চার ও ২টি ছয়। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে লিগে প্রথমবার নামা ইয়াসির আলি রাব্বি শেষ করেছেন ম্যাচ।