শেষের ঝড়ে হাঙ্গেরির প্রতিরোধ ভেঙেচুরে দিলেন রোনালদোরা
পুসকাস অ্যারেনায় অনেকক্ষণ রোনালদোদের আটকে রেখেছিল হাঙ্গেরি। কিছুতেই যখন কিছু হচ্ছিল না, তখন রাফায়েল সিলভা নেমে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। প্রথমে তার পাস থেকে রাফায়েল গেরেরোর ডিফ্লেক্টেড শটে গোল পেল পর্তুগাল। এরপররের গল্পটা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। পেনাল্টি থেকে গোল করে ভাঙলেন রেকর্ড, এরপর আরেকটি গোল করে ৩-০ গোলের জয় নিশ্চিত করলেন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের শুরুটা হলো দারুণ।
গেল বছর দেড়েকে ফুটবল এমন কিছু দেখেনি। প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে পুসকাস অ্যারেনায় এদিন বর্তমান পরিস্থিতিতে ভিন্ন এক আবহেরই সৃষ্টি হয়েছিল। অন্যরকম উন্মাদনা-উত্তেজনা বিরাজ করছিল বুদাপেষ্টের স্টেডিয়ামটিতে। এমন মঞ্চই তো চান রোনালদো। হাঙ্গেরিয়ান দর্শকদের হতাশ করে সে মঞ্চ রাঙানোর সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার মিনিট কয়েক আগে। ব্রুনো ফার্নান্দের বাঁ পাশ থেকে করা দারুণ এক ক্রস ফাকা অবস্থায় খুঁজে নিয়েছিলো তাকে। সিক্স ইয়ার্ড বক্সের সামনে থেকেও পর্তুগিজ তারকা ফার্স্ট টাচে বল জালে জড়াতে পারেননি। আরেকবার ডিয়েগো জটার ক্রসে তার হেডে বল যায় বেশ বাইরে দিয়ে। অবশ্য রোনালদো তার পায়ের জাদু ও স্কিলের প্রদর্শনী দেখিয়েছিলেন ঠিকই।
বার্নার্দো সিলভার দিকে দারুণ এক থ্রু বল বাড়িয়েছিলেন বক্সে, কিন্ত উইলি অরবানের ট্যাকলে সিলভা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। তবে কয়েকবার এর চেয়েও ভালো সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন দিয়েগো জোটা। একবার ডিবক্সে ডান পাশ থেকে দ্রুতগতির শট সোজা মেরে ব্যর্থ হয়েছেন। জোটার পাশে সেসময় ফাঁকা অবস্থায়ই ছিলেন রোনালদো। আরেকবার জোটা ডান পাশ থেকে আসা সেমেডোর ক্রস ফার্স্ট টাচে রিসিভের পর টার্ন করে মেরেছেন আবারও সোজা গুলাস্কির দিকে।. দারুণ রিফ্লেক্সে সেটি সেভ দিয়েছেন হাঙ্গেরির গোলকিপার। জোটার ওই শটের সময়েও তার পেছনেই ছিলেন ফার্নান্দেজ। সে অবস্থান থেকে ফার্নান্দেজের জন্যই বল জালে জড়ানো সহজ ছিল।
অপরদিকে বেশ নিচে গিয়েই খেলছিল হাঙ্গেরি। পুরো ৪৫ মিনিটে তারা মাত্র একবারের বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। এডাম জালাইয়ের সোজা প্যাট্রিসিওর দিকে মারা হেড সেভ দিতে কোনও অসুবিধা হয়নি। তবু গোল হজম বিহীন প্রথমার্ধ শেষ করে স্বস্তিতেই বিরতিতে গেছে হাঙ্গেরি।
দ্বিতীয়ার্ধে হাঙ্গেরির কাউন্টার অ্যাটাক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো পর্তুগালের জন্য। একটা গোলও পেয়ে যায় তারা, যদিও সেটা পরে অফসাইডে বাতিল হয়ে যায়। গোলের জন্য দিশেহারা পর্তুগাল দ্বিতীয়ার্ধে খুব বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। তবে ব্রুনো ফার্নান্দেজের শটে গোলের খুব কাছেই গিয়েছিল পর্তুগাল। ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডের এই মিডফিল্ডারের বক্সের বাইরে থেকে ডানদিকে মারা দারুণ এক শট সেভ দিয়ে হাঙ্গেরিকে রক্ষা করেছিলেন গুলাসি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। ৮৪ মিনিট পর্যন্ত খেলা ড্রতেই ছিল। তারপরও তাদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে বেদনাদায়ক সমাপ্তিতেই।
৮৫ মিনিটে রাফায়েল গেরেরোর শট হাঙ্গেরি ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদলে জড়িয়েছে জালে। এরপর বক্সে ওরবান ফাউল করলে হলুদ কার্ড পান, পর্তুগাল পায় পেনাল্টি। এরপর ডানদিকে বল জালে পাঠিয়ে মিশেল প্লাতিনিকে ছাড়িয়ে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল করার মালিক বনে যান ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অতিরিক্ত সময়ে আবার গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে বল জাড়ে জড়ান রোনালদো। রোনালদোর বয়সে কেউ ইউরোতে এক ম্যাচে দুই গোল করতে পারেনি কোনওদিন। ইউরো কাপে এর আগে শেষ দশ মিনিটে কোনও দল ৩ গোল দিতে পারেনি, এ ম্যাচেই প্রথম তা করে দেখালো পর্তুগাল। সেই সঙ্গে বার্তা দিয়ে রাখল গ্রুপের অন্য দুই দল ফ্রান্স-জার্মানিকেও।