লোকাতেল্লি-ইম্মোবিলেতে সুইস-ঘড়ি থামিয়ে শেষ ষোলোতে ইতালি
প্রথম ম্যাচে তুরস্ককে হারিয়েই বার্তা দিয়েছিল ইতালি। এবার সেটা আরও জানান দিল পরিষ্কার করে- ইতালি এবার শেষ পর্যন্ত যাওয়ার জন্যই এসেছে। সুইজারল্যান্ডকে ৩-০ গোলে উড়িয়েই দিয়ে সবার আগে চলে গেছে শেষ ষোলোতে। তাতে উজ্জ্বল সাসসুওলো মিডফিল্ডার ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি, জোড়া গোল করে রাতটা করে নিয়েছেন নিজের। আর অন্য গোলটা করেছেন ইনফর্ম স্ট্রাইকার চিরো ইম্মোবিলে।
আগের ম্যাচের মতো আজও বাঁ পাশে স্পিনাজ্জোলা-ইনসিনিয়ে জুটি দাপট দেখিয়েছে। গোলের প্রথম সুযোগও এসেছিলো সে পাশ থেকেই। স্পিনাজ্জোলার দারুণ ক্রসে বারের উপর দিয়ে ইম্মোবিলের হেডারে সে যাত্রায় বেঁচে যায় সুইজারল্যান্ড। এরপর ইনসিনিয়ের কর্নারে ডিফেন্ডারদের জটলায় লেগে বল নিচে পড়লে ইতালি অধিনায়ক আবার বল পেয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালে। গোলের স্বাদ পেয়ে বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসেও মেতে উঠেন ৩৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। কিন্ত পরে ভিএআরে হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্তে বাতিল হয়ে যায় তার গোল। দুর্ভাগ্যবশত এরপর ম্যাচের ২৪ মিনিটে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে কিয়েলিনিকে।
এর মিনিট দুয়েক পরে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় ইতালি। চমৎকার সে গোলের শুরুটা হয়েছিল লোকাতেল্লির পা থেকে, শেষটাও হয়েছিল তারই পায়ে। সেন্ট্রাল লাইনের কিছুটা নিচে থেকে লং পাসে মার্কো বেরার্দির দিকে বল বাড়িয়েছিলেন লোকাতেল্লি। এরপর বেরার্দি ডানদিক থেকে বক্সে ঢুকে লো ক্রস করেছেন, লোকাতেল্লি ততক্ষণে ফাঁকা জালের সামনে এসে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছেন অনায়াসেই। প্রথমার্ধে ওই গোল নিয়েই বিরতিতে গেছে ইতালি। অবশ্য ব্যবধানটা আরও বাড়ারও কিছু সুযোগ তৈরি হয়েছিল। বাঁ পাশ থেকে করা ইম্মোবিলের ক্রস কাউকে খুঁজে পায়নি। স্পিনাজ্জোলার শট গেছে সামান্য বাইরে দিয়ে। সুইজারল্যান্ড কিছু প্রতি-আক্রমণের সূচনা করলেও সেভাবে বড় কোনও পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেনি ইতালি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমাকে।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর বাঁশি বাজার কয়েক মিনিট পরেই আবার লোকাতেল্লির গোলে এগিয়ে যায় ইতালি। প্রথম গোলের মতো এ গোলটাও ছিল দুর্দান্ত। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ে নেয়া লোকাতেল্লির বুলেট গতির শটটা ছিল দেখার মতো। নিজের ক্যারিয়ারে এর আগে কখনো এক ম্যাচে দুই গোল পাননি এই মিডফিল্ডার। ২০১২ ইউরোতে বালোতেল্লির পর আবার ইতালির হয়ে ইউরোতে ম্যাচে জোড়া গোল করলেন কেউ। ৫২ মিনিটে ওই গোলের পরে সুইজারল্যান্ড কিছুটা খেলায় ফেরে। তবে সেভাবে গোলের খুব কাছে যাওয়া হয়নি তাদের। শাকিরির ভালো শট একবার গেছে বারের উপর দিয়ে। স্টিভেন জুবেরের ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের অনটার্গেটে একমাত্র শট দারুণ সেভে ফিরিয়ে দিয়েছেন ডোনারুমা।
৭২ মিনিটে আরেকটা গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ইম্মোবিলে। বনুচ্চির লং ক্রসে বল পেয়ে তবু ফিনিশিংটা ঠিকঠাক করতে পারেননি। ভুল শুধরানোর সুযোগও মিনিট দুয়েক পরে পেয়ে গিয়েছিলেন ইম্মোবিলে। ইনসিনিয়ের বদলি হিসেবে নামা ফেদেরিকো কিয়েসা ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়ে বল বাড়িয়েছিলেন ইম্মোবিলের দিকে। ইম্মোবিলে ব্যর্থ হয়েছেন সেবারও। অবশেষে ৮৯ মিনিটে বল জালে জড়াতে সক্ষম হন তিনি। ডিবক্সের বাইরে থেকে নেয়া তার দ্রুতগতির শট রুখতে পারেননি ইয়ান সোম্মার।
ইতালি শেষ তাদের জালে বল ঢুকতে দেখেছিল ২০২০ সালের অক্টোবরে। এরপর। টানা ১০ ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছে। ইতালির টানা ৩০ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে। টানা ২৯ জয়ে সে রেকর্ড ছোঁয়া থেকেও বেশ দূরে নেই রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। অপরদিকে নকআউট পর্বে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে তুরস্কের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই ব্লাদিমির পেটকোভিচের শিষ্যদের।।