ছোট্ট একটা ইনিংস, তবুও!
“আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমাদের সময়ে ক্রিকেটটা এভাবে খেলার মত সাহসই ছিল না আমাদের”- কথাগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের। কার ব্যাপারে বলছেন তিনি এখানে? একটু আভাস দেয়া যাক। ১৭ বছর বয়সে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। টেস্ট অভিষেকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ছিল ৮৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। তাঁর সবচেয়ে পছন্দের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, এবং জহির খান।
এতক্ষণে হয়তো বুঝে ফেলেছেন আলোচ্য ব্যক্তিটি কে। হ্যাঁ, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালের কথাই এখানে বলা হচ্ছে। আট বছরের ক্যারিয়ারে অর্জনের সংখ্যা কম নয়। তবে সব কিছু বাদ দিলেও ২০০৭ বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচে ‘ডাউন দা উইকেট’-এ এসে জহির খানকে মারা সেই ছয়টার জন্যই ক্রিকেটপ্রেমীরা বহুদিন মনে রাখবেন তাঁকে।
সেবারের আসর শুরুর পূর্বে তামিম ইকবাল নামক ১৭ বছরের এই তরুণ বিশ্ব-ক্রিকেটে একেবারেই অপরিচিত এক নাম। ভারতের সাথে ম্যাচটার আগে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ‘ভিডিও ফুটেজ’ নিয়ে গবেষণা করছে- এরকম খবর বেশ আশ্চর্যজনকই ছিল অনেকের কাছে। তাঁরা যে বৃথা সময় নষ্ট করেননি, ক্রিকেট দুনিয়া এটা বুঝে গেল ম্যাচটা দেখেই।
গতির ঝড় তুলে ১৯১ রানে ভারতকে অল-আউট করায় নেতৃত্ব দিয়ে ম্যাচজয়ে সেদিন বড় ভূমিকাটা পালন করেন নিঃসন্দেহে মাশরাফি। তবে ১৯২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশকে একটা উড়ন্ত সূচনা কিন্তু তামিমই এনে দিয়েছেন। এটা ঠিক যে, আরও দুজন অর্ধশতকধারী সেদিন টাইগার শিবিরে ছিলেন, তাঁদের রানও তামিমের তুলনায় বেশিই ছিল কিছুটা। তবে ম্যাচটা যারা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, বিশেষ একটা কিছু ছিল সেদিন তামিমের ইনিংসটায়।
আগ্রাসন ছিল অবশ্যই, তবে আরও কি যেন একটা ছিল। ব্যাপারটা ঠিক ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এমন একটা কিছু, যেটার মাধ্যমে এক ইনিংস দিয়েই পুরো ক্রিকেট বিশ্বের নজর নিজের দিকে ফেরাতে বাধ্য করেন তামিম। হয়তো সেটা ‘ক্লাস’, হয়তোবা অন্যকিছু।
তবে একথা ঠিক, ঐদিন তামিমের প্রতিটি শট যেন জানান দিচ্ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন দিগন্তের। আভিজাত্য যেন ঠিকরে বেরুচ্ছিল প্রতিটি ‘কাভার ড্রাইভ’, ‘স্ট্রেইট ড্রাইভ’ থেকে। আর জহির খানকে মারা সেই ছয়টা তো তর্কসাপেক্ষে ২০০৭ বিশ্বকাপের সেরা শট। ”মাশরাফি যদি ভারতীয় দলের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়ে থাকে সেদিন, তাদের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার কাজটা করে তামিম”- দিনশেষে আকরাম খানের এমন মন্তব্য তাই অত্যুক্তি মনে হয়না মোটেই।