কাসেমিরোর শেষ মুহূর্তের গোলে জয় ব্রাজিলের
ফুলটাইম: ব্রাজিল ২-১ কলম্বিয়া
লুইস দিয়াজের দারুণ এক ভলিতে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল কলম্বিয়া। ৭৮ মিনিটে লদির বাঁ প্রান্ত থেকে বাড়ানো ক্রসে ফিরমিনোর হেডে সমতা ফেরায় ব্রাজিল। কিন্তু সেই গোল নিয়েই বাধে গোলমাল। তবে ভিএআর দেখেও গোল বহালই থাকে। আর ইনজুরি সময়ের নবম মিনিটে নেইমারের নেওয়া কর্নার থেকে মাথা ছুঁয়ে স্বাগতিকদের আনন্দে ভাসান কাসেমিরো। তিন ম্যাচে তিন জয় নিয়ে গ্রুপ 'বি'-এর শীর্ষেই থাকল ব্রাজিল।
পেরুর সাথে বড় জয় পেলেও একাদশে এদিন পাঁচটি পরিবর্তন আনেন তিতে। গোলকিপার পরিবর্তনের ধারা বজায় রেখে তৃতীয় ম্যাচে নামেন তৃতীয় গোলরক্ষক ওয়েভারটন। অবশ্য ম্যাচের শুরুতেই এবারে আসরে নিজেদের প্রথম গোল খেয়ে বসে ব্রাজিল। ৯ মিনিটের মাথায় ডান প্রান্ত থেকে হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ভাসানো ক্রস খুঁজে নেয় খানিকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকা লুইস দিয়াজকে। ডিফেন্ডার পেছনে ওঁত পেতে থাকা থাকা দিয়াজ উড়ন্ত অবস্থায় দারুণ এক ভলিতে স্তব্ধ করে দেন ব্রাজিল শিবিরকে।
৬ ম্যাচ পর প্রথমে গোল খাওয়া ব্রাজিল নড়েচড়ে বসে এরপর। মিডফিল্ডের দখল নিয়ে কলম্বিয়ানদের তটস্থ করে রাখে স্বাগতিকরা। নেইমার তার স্বভাবসুলভ ড্রিবলিংয়ে বেশ কয়েকবার বক্সে ঢুকে গেলেও গোলমুখে শট নিতে পারেননি। ৩৬ মিনিটের মাথায় অবশ্য সুযোগ এসেছিল একবার। ডান উইং থেকে দানিলোর বাড়ানো ক্রস নেইমারের মাথা ঘুরে আসে রিচার্লিসনের কাছে, তবে নিরীহ এক হেডে তিনি তা তুলে দেন ওসপিনার কোলে। এরপরেও অবশ্য বল কলম্বিয়ার ডিবক্সের আশেপাশে থাকলেও বলার মত কোনো আক্রমণ হয়নি, তাই এক গোলে পিছিয়েই বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
গত দুই ম্যাচে ব্রাজিলের করা সাত গোলের পাঁচটিই এসেছে দ্বিতীয়ার্ধে। বিরতির পর সেলেসাওরা শুরুটাও করেছিল তেড়েফুঁড়ে। ৫৬ মিনিটে থিয়াগো সিলভার বাড়ানো লম্বা থ্রু বল খুঁজে নেয় নেইমারকে। তবে তাতে পা বাড়ালেও নেইমার বল তুলে দেন কলম্বিয়ান গোলকিপারের হাতে। ৬৪ মিনিটের সময় বেশ কয়েকটা পাস খেলার পর বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো দানিলো বল পেয়ে গেলেও তার শট সামান্যের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে সবচেয়ে বড় সুযোগটা এসেছিল ৬৬ মিনিটে। বদলি হিসেবে নামা ফিরমিনোর দারুণ এক ডিফেন্সচেরা ব্যাকফ্লিক নেইমার পেয়ে গেলে তিনি ওসপিনাকে কাটিয়ে বেরিয়েও যান। তবে সামনে জেসুস এসে পড়ায় কিছুটা বিভ্রান্ত হয়েই শট নিলে বারে চুমু খেয়ে বল ফিরে আসে।
ম্যাচের সবচেয়ে বিতর্কিত মুহূর্তটা আসে এরপরেই। উপর্যুপরি আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া ব্রাজিল গোলের দেখা পায় ৭৮ মিনিটের মাথায়। বদলি হিসেবে নামা রেনান লদির বাঁ প্রান্ত থেকে বাড়ানো ক্রসে ফিরমিনোর হেড ওসপিনার হাত ফস্কে জড়িয়ে যায় জালে। ব্রাজিলিয়ানরা উল্লাসে মাতলেও ক্ষোভে ফেটে পড়েন কলম্বিয়ানরা। এই আক্রমণের বিল্ডআপের সময় নেইমারের দেওয়া পাস ডিবক্সের সামনে গিয়ে লাগে রেফারির গায়ে। তবুও তিনি খেলা না থামালে সেখান থেকেই বল পেয়েছিলেন লদি। তাই গোলের পর কলম্বিয়ানরা রেফারির সাথে তর্ক জুড়ে দেন রীতিমত। ভিএআরে দেখার পরেও রেফারি তার সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল। তাও মানতে পারছিলেন না ওসপিনা-কুয়াদ্রাদোরা। খেলা বন্ধও থাকে বেশ খানিকক্ষণ।
তর্ক করে যাওয়ার মাশুল অবশ্য পরে গুণতে হয়েছে কলম্বিয়াকে। অপচয় হওয়া সময়ের জন্য দেওয়া হয় ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময়। ইনজুরি সময়ে সাঁড়াশি আক্রমণে কলম্বিয়াকে চেপে ধরে ব্রাজিল। ম্যাচের শেষদিকে নিজেদের ৮ম কর্নারও পায় স্বাগতিকরা। নেইমারের নেওয়া কর্নার ফাঁকায় থাকা ক্যাসেমিরোকে খুঁজে নিলে সেখান থেকে বল জালে জড়াতে কোনও ভুল করেননি তিনি। পুরো ম্যাচজুড়ে ব্রাজিলের আক্রমণ প্রতিহত করে যাওয়া কলম্বিয়ার তরী ডুবল তাই তীরে এসেই।
‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে যাচ্ছে ব্রাজিল। গ্রুপপর্বে স্বাগতিকদের শেষ ম্যাচ ২৮ জুন, বাংলাদেশ সময় রাত তিনটায় ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবে তারা।