কাপালি-শঙ্কা কাটিয়ে অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনে শিরোপা আবাহনীর
সুপার লিগ, মিরপুর
আবাহনী ১৫০/৭, ২০ ওভার (শান্ত ৪৫, মোসাদ্দেক ৪০, সাইফউদ্দিন ২১, লিটন ১৯, রুবেল ২/২২, রুবেল মিয়া ১/১৮, নাহিদুল ১/২০, শরিফুল ১/২২, মোস্তাফিজুর ১/৩৭)
প্রাইম ব্যাংক ১৪২/৯, ২০ ওভার (রুবেল মিয়া ৪১, কাপালি ৩৪*, নাঈম ১৯, সাইফউদ্দিন ৪/৩৬, মেহেদি ২/৩০, আরাফাত সানি ১/১৮, তানজিম ১/৩১)
আবাহনী ৮ রানে জয়ী
উল্লাসে মত্ত আবাহনীর জন্য অপেক্ষা করলেন না অলক কাপালি, মোস্তাফিজুর রহমানরা। ততক্ষণে আক্ষরিক অর্থেই সব শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রাইম ব্যাংকের। ১৭ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংসে প্রাইম ব্যাংককে অসম্ভবের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন কাপালি, তবে শেষ পর্যন্ত পার করাতে পারেননি। শেষ রাউন্ডে অলিখিত ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচে অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনে ভর করে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আবাহনীই, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এবার হলেও ঢাকার শীর্ষ লিগে এটি তাদের ২১তম শিরোপা, এ নিয়ে টানা তৃতীয়।
১৫১ রানতাড়ায় প্রাইম ব্যাংক হোঁচট খেয়েছিল শুরুতেই। সাইফউদ্দিনের তৃতীয় বলেই টেনে মারতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ তুলেছিলেন লিগে প্রাইম ব্যাংকের অন্যতম ব্যাটিং নায়ক রনি তালুকদার। পরের ওভারে সাইফউদ্দিন আঘাত করেছেন আবারও, এবার ফিরেছেন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। ২ উইকেটের ধাক্কার পর পাওয়ারপ্লেতে প্রাইম ব্যাংক তুলেছিল ৩৮ রান। এরপর রকিবুল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুন ক্যাচ দিয়েছেন যথাক্রমে মেহেদি হাসান রান ও আরাফাত সানির বলে।
একপাশে টিকে ছিলেন রুবেল মিয়া, তবে ম্যাচ পরিস্থিতিতে ৯৫.৩৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। ৯ বলে ১০ রান করা নাহিদুল ইসলাম রানার দ্বিতীয় শিকার, এরপর অবশ্য রুবেলকে খানিকটা সঙ্গ দিয়েছিলেন নাঈম হাসান। দুজনের জুটিতে উঠেছিল ৩২ রান, তানজিম হাসান সাকিবের বলে রুবেল বোল্ড হওয়াতে ভেঙেছে সে জুটি। সাইফউদ্দিন ফিরে পরপর বলে ফিরিয়েছেন নাঈম শেখ, শিরোপা তখন নাগালে চলে এসেছিল আবাহনী।
কাপালি বাধ সেধেছিলেন এরপরই। সাইফউদ্দিনের সে ওভারেই একটা চারের পর শেষ ৩ ওভারে প্রাইম ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। তানজিমকে এক ছয়ের পর সাইফউদ্দিনকে মারা চার-ছয়ে আশা জুগিয়েছিলেন তিনি। ১৯তম ওভারের শেষ বলে শরিফুল ইসলাম রান-আউট হলেও শেষ ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন কাপালি। শহিদুলের করা প্রথম বলটা ছিল অফস্টাম্পের বাইরে ফুলটস, তবে সেটি আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিস করেছিলেন কাপালি। স্কয়ার লেগে থাকা আম্পায়ার তানভীর ইসলাম নো ডাকেননি, যেটিতে স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্ট ছিলেন কাপালি। পরের দুই বল ডটের পর চতুর্থ বলে একটি ছয় মেরেছিলেন, তবে ততক্ষণে ম্যাচ পরিণত হয়েছে ওয়ান-শট গেমে। পরের বলে এরপর শুধু একটা সিঙ্গেল নিতে পেরেছিলেন কাপালি।
অবশ্য আগে ফিল্ডিং করা প্রাইম ব্যাংকের শুরুটা ছিল দারুণ, আবাহনীকে বেশ কিছুক্ষণ দারুণ চাপে রেখেছিল তারা। মোস্তাফিজুর রহমানের করা ইনিংসের প্রথম বলটা ছিল অফস্টাম্পের বেশ বাইরে, তবে লেট মুভমেন্টে এজড হয়েছেন ব্যাট চালানো নাইম শেখ। পরের বলে লেগবাইয়ে একটা চারের পর শঙ্কা ছিল লিটনেরও, বেশ ফুললেংথের বলটা মিস করে গেলেও আম্পায়ার সাড়া দেননি মোস্তাফিজের এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে।
পরের ওভারে রুবেল হোসেনের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে টপ-এজড হয়েছেন আবাহনীর টপ অর্ডারের অন্যতম সেরা পারফরমার মুনিম শাহরিয়ার। লিটন দাস শুরুটা ভালই করেছিলেন, তবে নাহিদুলকে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অফ থেকে পেছন ছুটে নেওয়া বিজয়ের ভাল ক্যাচে পরিণত হয়েছেন তিনি, এর আগে করেছেন ১৩ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ১৯ রান।
৩১ রানে ৩ উইকেট হারানো আবাহনী পাওয়ারপ্লেতে তুলতে পেরেছিল ৩৬ রান। তবে ৪র্থ উইকেটে অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্তর জুটি হতাশ করেছে প্রাইম ব্যাংককে। দুজন মিলে যোগ করেছেন ৭০ রান, ৪০ বলে ৪৫ রান করে শান্ত রুবেল মিয়ার বলে ক্যাচ দিলে ভেঙেছে সে জুটি। শান্ত তার ইনিংসে মেরেছিলেন ৩টি চার ও ২টি ছয়।
শরিফুলের শিকার হওয়ার আগে আফিফ করেছেন ৭ বলে ১২, আর রুবেলকে পুল করতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হওয়ার আগে মোসাদ্দেক করেছেন ৩৯ বলে ৪০। ১৫ থেকে ১৯তম ওভারে আবাহনী তুলতে পেরেছিল মাত্র ২৪ রান। তবে শেষ ওভারে মোস্তাফিজের ওপর চড়াও হয়েছিলেন সাইফউদ্দিন, ২য় ও ৫ম বলে তার মারা দুটি ছয়ের পর একটা নো-বলে ভর করে আবাহনী গিয়েছিল ১৫০ পর্যন্ত।