টানা দশ ম্যাচ পর জিততে পারল না ব্রাজিল
ফুলটাইম স্কোর: ব্রাজিল ১-১ ইকুয়েডর
টানা তিন জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল ব্রাজিল। নেইমারকে বিশ্রাম দিয়ে একাদশে আরও কয়েকটি পরিবর্তন এনে তিতে এদিন তাই নামিয়েছিলেন দ্বিতীয় সারির একাদশ। এতে অবশ্য ছেদ পড়েছে ব্রাজিলের টানা দশ ম্যাচের জয়রথে। এডার মিলিতাওয়ের গোলে ব্রাজিল এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে সমতাসূচক গোল করে আনহেল মেনা নিশ্চিত করেছেন ইকুয়েডরের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট।
ম্যাচের শুরুতে গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় নেয় ব্রাজিল। মাঠের খেলায় উভয় দলই শুরুতে নজরকাড়া কিছু না করলেও মাঠে ঘটে অদ্ভুত এক ঘটনা। খেলার ৮ মিনিটের মাথায় হেড দিতে গিয়ে ডগলাস লুইজের সাথে সংঘর্ষ হলে ইনজুরির কারণে মইসেস কাইসেদোকে উঠে যেতে হবে বলেই মনে হচ্ছিল। তবে ইকুয়েডর কোচ তখন বদলি খেলোয়াড়ের বিষয়ে মনস্থির করতে না পারায় আরও দশ মিনিট খেলা চালিয়ে যান কাইসেদো। পরে এক সময় আর না পেরে মাঠের মাঝেই শুয়ে পড়লে তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয় মাঠের বাইরে। বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামানো হয় আনহেল মেনাকে।
এই ঘটনার পরেই অবশ্য ব্রাজিলের পাসিংয়ে কিছুটা ছন্দ ফিরে আসে। লুকার পাকেতার গোলমুখে শট ইকুয়েডর গোলরক্ষক হার্নান গালিনদেজের সামনে বেকায়দায় লাফিয়ে উঠলেও দক্ষতার সাথেই ফিরিয়ে দেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরেই পাকেতার দারুণ এক লব থ্রুতে পা বাড়ালেও গোলের দেখা পাননি গ্যাব্রিয়েল বারবোসা, পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে দারুণভাবে সেই প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন গালিনদেজ। ২৭ মিনিটেও আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে আবার সেই পাকেতাই। বক্সের একটু বাইরে থেকে বাঁ পায়ে নিয়েছিলেন জোরালো শট, তবে ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বার ঘেঁষে বল বেরিয়ে যায়।
মুহুর্মুহু আক্রমণের ফল ব্রাজিল অবশেষে পায় ৩৭ মিনিটে। এভারটনের ফ্রি-কিক থেকে বেশ খানিকটা লাফিয়ে সজোরে হেড দিয়ে বল জালে জড়ান এডার মিলিতাও। অবশ্য এদিনও গোলের উৎস সেই ফ্রি-কিকের সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। রাইটব্যাক এমারসনের পায়ে বল না থাকলেও দৌড়াতে গিয়ে তিনি ডিফেন্ডারের গায়ে বাধিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন বলেই দাবি করছিল ইকুয়েডর খেলোয়াড়েরা। তবে রেফারি তার সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে সেখান থেকেই পরে গোল পেয়ে যায় ব্রাজিল। মিলিতাওয়ের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলে স্বাগতিকদের প্রথমার্ধ শেষ হয় এক গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই অবশ্য দেখা যায় অন্য এক ইকুয়েডরকে। গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ইকুয়েডর চেপে বসে ব্রাজিলের রক্ষণের উপর। ফলাফল পেতেও অপেক্ষা করতে হয়নি বেশিক্ষণ। ব্রাজিল রক্ষণের দুর্বল ক্লিয়ারেন্সের সুযোগ নিয়ে ৫৩ মিনিটের মাথায় এনার ভ্যালেন্সিয়া ফাঁকা পেয়ে যান আনহেল মেনাকে, ভাসতে থাকা বল হেডে বাড়ান মেনার উদ্দেশ্যে। সেখান থেকেই জোরালো নিচু শটে অ্যালিসনকে পরাস্ত করেন মেনা।
৬৬ মিনিটের মাথায় দলকে এগিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন একটু আগেই বদলি হিসেবে নামা ভিনিসিয়াস জুনিয়র। প্রতি-আক্রমণের পর বাঁ প্রান্ত থেকে ভাসানো বলে পাও বাড়িয়েছিলেন তিনি, তবে সংযোগটা ঠিকমত না হওয়ায় সেই যাত্রায় বেঁচে যায় ইকুয়েডর।
ইকুয়েডর অবশ্য এরপরও ছেড়ে কথা বলেনি। আক্রমণ আর পাল্টা-আক্রমণের মাঝে দুই দলই তৈরি করছিল গোলের সুযোগ। ৮০ মিনিটের মাথায় ডান প্রান্ত থেকে দারুণ ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন সেই মেনাই। তবে সেই যাত্রায় তাকে নিরাশ করেন অ্যালিসন। অন্যদিকে ব্রাজিল বেশ কয়েকবার প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকলেও গোলমুখে শট নিতে পারেনি। ইকুয়েডরের আক্রমণগুলোই বরং ছিল বেশ ক্ষুরধার। বদলি নামা ভিনিসিয়াস-রিচার্লিসনরা এদিন অবশ্য দেখাতে পারেন নি কোনও শেষ মুহূর্তের ঝলক। ম্যাচ তাই শেষ হয় সমতায়। অন্য ম্যাচে পেরুর কাছে ভেনেজুয়েলা হেরে যাওয়ায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের চতুর্থ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয় ইকুয়েডরের।
ম্যাচে ড্র সত্ত্বেও গ্রুপ বি’র শীর্ষে থেকেই শেষ করেছে নভেম্বর ২০১৯-এর পর টানা জিততে থাকা সেলেসাওরা। তবে নেইমারকে ছাড়া তাদের আক্রমণ আজ ছিল বেশ নখদন্তহীন। তিতের কপালে তা চিন্তার ভাঁজ ফেলবে বৈকি! ৩ জুলাই ভোর ৬টায় ব্রাজিল খেলবে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে।