মেসিময় ম্যাচে বলিভিয়াকে উড়িয়ে দিল আর্জেন্টিনা
ফুলটাইম স্কোর: আর্জেন্টিনা ৪-১ বলিভিয়া
আগের ম্যাচেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় লিওনেল স্কালোনি এদিন একাদশ সাজিয়েছিলেন ছয়টি পরিবর্তন এনে। তবে যার জন্য মঞ্চ সাজিয়ে অপেক্ষা করছিল অ্যারেনা পান্তানাল সেই লিওনেল মেসি রাতটি একান্তই নিজের করে রেখেছেন। হাভিয়ের মাশ্চেরানোকে টপকে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়ার রাত স্মরণীয় করে রেখেছেন দুই গোল আর এক অ্যাসিস্টে। সাথে পাপু গোমেজ ও লাওতারো মার্টিনেজের গোলে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪-১ গোলের বড় জয় দিয়ে গ্রুপ এ’র শীর্ষে থেকেই গ্রুপপর্ব শেষ করেছে আর্জেন্টিনা।
আকাশী নীল জার্সি গায়ে ১৪৮তম ম্যাচ খেলতে নামা যে মেসির জন্য অন্যরকম অনুপ্রেরণার জায়গা হয়ে থাকবে সেটা অনুমিতই ছিল। ম্যাচের শুরু থেকেই তার পায়েও মিলেছে সেটার প্রমাণ। ৬ মিনিটের মাথায় বক্সের সামনে বল পেয়ে হালকা করে শরীর বাঁকালেন, মুহূর্তেই পড়ে নিলেন রক্ষণভাগ আর নিজের সতীর্থদের অবস্থান। এরপর আলতো টোকায় দুই ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে বল তুলে দিলেন পাপু গোমেজের উদ্দেশ্যে। দারুণ এই থ্রু বলকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো ভলিতে বল জালে জড়াতেও ভুল করেননি পাপু গোমেজ। সে তো সবে শুরু!
এরপরও বলের সিংহভাগ দখল ছিল আর্জেন্টাইনদের। তারই ফলাফল তারা পেয়ে যায় ৩৩ মিনিটের মাথায়। বক্সের বাম কোণায় বল পেয়ে একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পাপু গোমেজ বেরিয়ে গেলে তাকে অনর্থক এক ট্যাকলে ফেলে দেন জাস্টিনিয়ানো। সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টি থেকেই গোলের খাতা খোলেন মেসি।
দুই গোল খাওয়ার পরে অবশ্য একটু নড়েচড়ে বসে বলিভিয়া। দূরপাল্লার শটে ৩৯ মিনিটের মাথায় এদিন এই আসরে প্রথম নামা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক আরমানির পরীক্ষা নেন চুরা, সেই পরীক্ষায় ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হন তিনি। তবে বলিভিয়ার এই ক্ষণিকের ঝলককে ম্লান করে দিয়ে আবারও গোলের দেখা পান মেসি; রাতটা যে তার করে নেবেন বলেই মাঠে নেমেছেন তিনি। ৪২ মিনিটের মাথায় আলবিসেলেস্তেদের হয়ে ১০০তম ম্যাচ খেলতে নামা আগুয়েরোর বাড়ানো দারুণ এক লম্বা থ্রু থেকে বলিভিয়ার রক্ষণ লাইন ভেঙে সময়মত বেরিয়ে যান মেসি। পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে চিপ করে সুনিপুণভাবে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। বল জালে জড়ানোর আগেই অসহায়ভাবে মেসির উদযাপন দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না বলিভিয়া গোলরক্ষক কার্লোস লাম্পের। দুর্দান্ত মেসিতে উজ্জীবিত আর্জেন্টিনা তাই প্রথমার্ধ শেষ করে তিন গোলের ব্যবধানে এগিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই পূর্ণ উদ্যমে বলিভিয়ার উপরে চেপে বসে মেসি-আগুয়েরো-পাপু গোমেজ ত্রয়ী। তবে স্রোতের বিপরীতে গোল পেয়ে যায় বলিভিয়া। ৬০ মিনিটে জাস্টিনিয়ানোর বাড়ানো পাস থেকে প্রথম প্রচেষ্টাতেই দারুণভাবে জালে বল জড়ান এরউইন সাভেদ্রা।
তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে আর্জেন্টাইনরা অবশ্য তাদের আক্রমণের মন্ত্র ধরে রাখে। মাঠে নামার দুই মিনিটের মাথায় গোলও পেয়ে যান লাওতারো মার্টিনেজ । ৬৭ মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডারদের ছিটকে দারুণভাবে বেরিয়ে আকুনার উদ্দেশ্যে বল বাড়ান মেসি। সেখান থেকে তিনি ভেতরে বল বাড়ালে গোলকিপার তাতে হাত লাগান, বল অবশ্য গিয়ে পড়ে আর্জেন্টাইন ফরওয়ার্ডের পায়েই। সেখান থেকে তিনি শট নিলে ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকা লাওতারোর পায়ে বল গেলে লক্ষ্যভেদে কোন ভুল করেননি তিনি।
আর্জেন্টাইনদের মুহুর্মুহু আক্রমণে একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েছিল বলিভিয়া। গোলরক্ষক লাম্পের দ্বিতীয়ার্ধের বীরত্বে বড় হার থেকেই বেঁচে গেছে তারা। ৭০ মিনিটের মাথায় ফাঁকায় বল পেয়ে যাওয়া লাওতারোর জোরালো শট ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিহত করলে বল গিয়ে আবারও পড়ে তার পায়েই। ফিরতি শট অবশ্য গোলকিপার বরাবর মারলেও মাটিতে থাকা লাম্পে দারুণভাবে লাফিয়ে উঠে করেন টানা দ্বিতীয় সেভ। ৭৭ মিনিটের মাথায় আবারও সেই লাওতারোকেই ফিরিয়ে দেন লাম্পে। মেসির নেওয়া নিচু ফ্রি-কিক দক্ষতার সাথে ফিরিয়ে দিলে কঠিন এক জায়গায় বল পেয়ে জোরালো শট নিলেও লাম্পেকে ফাঁকি দিতে পারেননি লাওতারো। ম্যাচের শেষ মিনিটে হ্যাটট্রিকের কাছাকাছি গিয়েছিলেন মেসি, বক্সের ভিতরে ঢুকে বাঁ প্রান্ত থেকে জোরালো নিচু শট নিলে আবারও বাধ সাধেন সেই লাম্পে। একের পর এক আক্রমণের পর মেসিদের রাত তাই শেষ হয় ওই চার গোল নিয়েই।
বলিভিয়ার বিপক্ষে বড় জয়ে এই নিয়ে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকল আর্জেন্টিনা। ২০১৯ কোপায় ব্রাজিলের মাঠে ব্রাজিলের কাছে হারের পর থেকেই শুরু হয়েছিলো এই অপরাজিত যাত্রা। মেসির রেকর্ড গড়ার রাতে বলিভিয়ার বিপক্ষে বড় জয়ে এবার তাই তিনি বার্তা দিয়ে রাখলেন ব্রাজিলের মাঠ থেকে শিরোপা নিয়েই ঘরে ফেরার। ৪ জুলাই সকাল ৭টায় কোয়ার্টার ফাইনালে ইকুয়েডরের মুখোমুখি হবেন মেসিরা।