চিলিকে হারিয়ে সেমিফাইনালে দশজনের ব্রাজিল
ফুলটাইম স্কোর: ব্রাজিল ১-০ চিলি
দুই দলের কোপায় শেষবারের দেখাও ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে, ২০০৭ সালের সেই ম্যাচে চিলিকে ব্রাজিল হারিয়েছিল ৬-১ ব্যবধানে। গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ড্র করে টানা ১০ ম্যাচের জয়রথ থেমেছিল ব্রাজিলের। ওদিকে জয় দিয়ে কোপা শুরু করা চিলি শেষপর্যন্ত গ্রুপ থেকে চতুর্থ হয়ে উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। এবারের ব্যবধানটা অত বড় না হলেও জয়ের দেখা তাই ঠিকই পেয়েছে ব্রাজিল। নাটকীয় ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা দশ জন নিয়ে খেলা ব্রাজিল লুকাস পাকেতার একমাত্র গোলে চলে গেল সেমিফাইনালে।
ম্যাচের শুরুটা ভালই করেছিল চিলি। ১০ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের গোলপোস্টের নিচে থাকা এডারসনের পরীক্ষা নেয় তারা। ডান প্রান্ত থেকে দৌড়ে সামনে গিয়ে ক্রসের সুযোগ না পেয়ে মরিসিও ইসলা ভেগাসের উদ্দেশ্যে বল বাড়ালে বক্সের বেশ বাইরে থেকে শট নিলে তাকে ফিরিয়ে দেন এডারসন। তবে ম্যাচের ধারার বিপরীতে ২২ মিনিটের মাথায় সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বের হয়ে বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ ক্রস বাড়ান নেইমার, পা বাড়ালেও সংযোগটা ঠিকমত না হওয়ায় গোলের দেখা পাননি ফিরমিনো। ২৭ মিনিটের মাথায় ভারগাস একাই বেশ খানিকটা দৌড়ে বক্সে ঢুকে গেলে কাউকে না পেয়ে কঠিন জায়গা থেকে নেন জোরালো শট, তবে বিপদ হতে দেননি এডারসন।
এরপরেই ব্রাজিল তাদের খেলা গুছিয়ে নেয়। ৩২ মিনিটের সময় দানিলো নিয়েছিলেন বক্সের বাইরে থেকে শট, তবে সেটা পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ৪৩ মিনিটের মাথায় নেইমারের থ্রু ডিফেন্ডার আটকাতে না পারায় বল পেয়ে যান জেসুস, সেখান থেকে জোরালো শট নিলে তাকে ফিরিয়ে দেন চিলি গোলরক্ষক ব্রাভো। প্রথমার্ধ তাই শেষ হয় গোলশূন্য অবস্থায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফিরমিনোর জায়গায় নামেন লুকাস পাকেতা, আর সাথে সাথেই পেয়ে যান গোলের দেখা। নেইমারের সাথে পাস আদান প্রদান করে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করলে ভেগাস তাদের থামাতে পারেননি। ক্লিয়ার করতে গিয়ে সেই পাকেতার পায়েই বল ঠেলে দিলে তাকে ছিটকে বেরিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ব্রাভোকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান পাকেতা।
৪৮ মিনিটে অবশ্য বিপদে পড়ে ব্রাজিল। আকাশে ভাসতে থাকা বলে পা লাগাতে গিয়ে জেসুস করে বসেন ভয়াবহ এক ফাউল। উড়ে গিয়ে মেনার মুখে বুট বসিয়ে দিলে দেখেন সরাসরি লাল কার্ড। তিতের অধীনে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে লাল কার্ড দেখেছিলেন জেসুসই (কোপা ২০১৯, বিপক্ষ পেরু), দ্বিতীয়বারের মত এই ফরওয়ার্ড লাল কার্ড দেখে দলকে ফেলেন বিপদে।
১০ জনের ব্রাজিলের উপর এরপর চেপে বসে চিলি। ৫৩ মিনিটে পুলগারের ফ্রি-কিক বার ঘেঁষে উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৬২ মিনিটে তারা পেয়েছিলো গোলের দেখাও। ফ্রি-কিক থেকে বক্সে বাড়ানো বল ভারগাসের উদ্দেশ্যে বাড়ানো হল তিনি বল জালে জড়ান। তবে ভিএআরে অফসাইড ধরা পড়ায় বাতিল হয় চিলির গোল।
চিলির মুহুর্মুহু আক্রমণের সুযোগ নিয়ে পাল্টা আক্রমণে উঠে নেইমার চলে গিয়েছিলেন গোলের খুব কাছাকাছি। মেদেলকে কাটানোর পর পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা ব্রাভোর পায়ের নিচ দিয়ে বল জালে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে দ্রুততার সাথে বলে হাত লাগিয়ে সেই প্রচেষ্টা প্রতিহত করেন ব্রাভো।
একজন কম নিয়ে খেলে যাওয়া ব্রাজিলের অর্ধে বেশিরভাগ সময় কাটালেও চিলির খেলোয়াড়েরা বক্সে খুব একটা ঢুকতে পারেনি। ৭৯ মিনিটে অবশ্য ভারগাসের শট ভিদালের গায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে পেয়ে যান মেনেসেস, বুক দিয়ে নামিয়ে এনে তিনি নিয়েছিলেন জোরালো নিচু শট। তবে এদিন ব্রাজিল গোলবারের নিচে আস্থার প্রতীক হয়ে থাকা এডারসন দক্ষতার সাথে রুখে দেন তাকে।
ব্রাজিল চাপে থাকলেও শেষ দশ মিনিটে ঘুরে দাঁড়িয়ে চিলির রক্ষণকে বেশ কয়েকবার কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তারা। বেশ কয়েকবার পাল্টা আক্রমণে নেইমার বল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন, রক্ষণবুহ্য ভেদ করে বক্সের কাছাকাছি গিয়েও সহায়তা না পাওয়ায় সুবিধা করতে পারেননি। সুবিধা অবশ্য করতে পারেনি চিলিও। ব্রাজিলের বক্সের আশেপাশেই বলের দখল রাখলেও লা রোহারা এডারসনকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি তেমন। দশ জন নিয়েও ব্রাজিল তাই জয় পেয়ে যায় ওই এক গোলের ব্যবধানেই। কষ্টার্জিত হলেও দশ জন নিয়ে খেলে যাওয়া ব্রাজিলের রক্ষণ নিয়ে খুশি থাকতেই পারেন তিতে।
অন্যদিকে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে প্যারাগুয়েকে রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিতে পা রেখেছে পেরু। গত কোপার ফাইনালিস্টরা এবার তাই মুখোমুখি হতে চলেছে সেমিফাইনালেই। ৬ জুলাই ভোর ৫টায় হবে ব্রাজিল-পেরুর প্রথম সেমিফাইনাল।