• ইউরো ২০২০
  • " />

     

    ইউক্রেনকে উড়িয়ে 'ইটস কামিং হোমের' আরও কাছে ইংল্যান্ড

    ইউক্রেনকে উড়িয়ে 'ইটস কামিং হোমের' আরও কাছে ইংল্যান্ড    

    ইউরোতে তাদের শুরুটা ছিল ভীষণ একঘেয়ে, স্লথ। কিন্তু সময় যতই যাচ্ছে, ইংল্যান্ড যেন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে জানান দিচ্ছে, তারা এবার শেষ পর্যন্ত যেতে এসেছে। সবচেয়ে ভয়ংকর রূপটা আজ দেখল ইউক্রেন, রোমে স্রেফ উড়ে গেল ৪-০ গোলে। হ্যারি কেইন করেছেন জোড়া গোল, হ্যারি ম্যাগুয়ের ও জর্দান হেন্ডারসন করেছেন অন্য দুইটি। ইউরোর সেমিতে উঠে গেল ইংল্যান্ড, ২০১৮ বিশ্বকাপের পর আবারও বড় কোনো আসরের শেষ চারে তারা। ইটস কামিং হোমের এখন আরও কাছে কেইনরা, শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক। 

    সর্বশেষ ২৩ ম্যাচে ইংল্যান্ড গোল পেয়েছে ১৯ জনের কাছ থেকে। তবে এবারের ইউরোতে তাদের চারটি গোলের সবকটিই এসেছে স্টার্লিং ও কেইনের পা থেকে। খেলা শুরুর চার মিনিটের ভিতরেই এ যুগলবন্দীর বদৌলতে ইংল্যান্ড পেয়ে যায় প্রথম গোল। বাঁ প্রান্ত থেকে ভেতরে ঢুকে ইউক্রেন ডিফেন্স ভেদ করে থ্রু পাস বাড়ান স্টার্লিং। সামনে আসা ইউক্রেন গোলকিপার বুশচানকে এরপর কেইন দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে পরাস্ত করে বল জড়িয়ে দেন জালে। ইংল্যান্ড অধিনায়কের ফিনিশিংটা যেমন ছিল, স্টার্লিংয়ের পাসটাও ছিল সেরকমই দুর্দান্ত।



    এরপর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় ইংল্যান্ড। ব্যবধান বাড়ানোর কয়েকটা সুযোগও তৈরি করেছিল। বক্সের কিনারা থেকে রাইস জোরালো একটা শট নিয়েছিলেন। তবে সেটি সোজাসুজি হওয়াতে বুশচানের সেভ দিতে কোনও সমস্যা হয়নি। আরেকবার সানচোও একটা ভালো শট নিয়েছিলেন, সেটিও ওই সোজা বুশচানের দিকেই ছিল। কেইনের বারের উপর দিয়ে মারা হেড বাদে প্রথমার্ধে আর খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি থ্রি লায়ন্সরা। শেষের মিনিট দশেকে ইউক্রেন খেলায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইংল্যান্ডকে নিচে নামতে বাধ্য করেছিলো। যদিও ম্যাচের ফেরার ইঙ্গিত দিলেও সেভাবে গোলের খুব কাছে যেতে পারেনি শেভচেঙ্কোর শিষ্যরা। 

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এরপর ম্যাগুয়েরের গোলে ইউক্রেনের জন্য ফেরাটা অনেকটা অসাধ্যের পর্যায়ে চলে যায়। হ্যারি কেইন ফাউলের শিকার হলে ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। এরপর লুক শয়ের নেওয়া ফ্রি-কিক খুঁজে নেয় ম্যাগুয়েরকে। হেডে দুর্দান্ত ম্যাগুয়ের দারুণভাবে বল জালে পাঠিয়ে দিলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। ম্যাচের প্রথম চার মিনিটের মধ্যে ইংল্যান্ড এর আগেও পাঁচবার গোল করেছিলো, হেরেছে সব ম্যাচেই। এ ম্যাচে ম্যাগুয়েরের ওই গোলের মিনিট চারেক পরেই আরেকটি গোলে সে শঙ্কা হাওয়ায় মিলিয়ে দেন কেইন। এবারও অ্যাসিস্ট লুক শয়ের। বাঁ পাশ থেকে করা তার অসাধারণ ক্রসে কেইন মাথা লাগিয়ে বল পৌছে দেন জালে। যদিও কেইনের সে হেডার সেভ দেওয়াটা বুশচানের সাধ্যের মধ্যেই ছিলো। 

    এরপর কেইনেরই দ্রুতগতির আরেক শট তার বাঁ দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ইংল্যান্ডকে গোলবঞ্চিত করেন বুশচান। বক্সের কিনারা থেকে নেওয়া কেইনের ভলিটা বুশচানের সেভের পরে কর্নার পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। এরপর বদলি নামা হেন্ডারসন ৬২তম ম্যাচে এসে ইংল্যান্ডের জার্সিতে নিজের প্রথম গোলের দেখাও পেয়ে যান। ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম গোল পেতে তার থেকে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি আর কাউকেই। মাউন্টের নেওয়া সে কর্নারে হেন্ডারসন হেডে বল জালে জড়ালে হালি পূর্ণ করে ইংল্যান্ড; এবারের ইউরোতে যেখানে আগের চার ম্যাচ মিলেই ইংল্যান্ডের গোল ছিল চারটি। ১৯৬৬ সালের পর মেজর টুর্নামেন্টে এক ম্যাচে এই প্রথম তারা করলো চারটি গোল। যার মধ্যে তিনটিই এসেছে হেড থেকে, ইউরোর ইতিহাসে এক ম্যাচে হেডে প্রতিপক্ষের জালে এতবার বল জড়াতে পারেনি আর কোন দলই।

    ইউরোতে এর আগে কোন দলই টানা পাঁচ ম্যাচে ক্লিনশিট রাখতে পারেনি, ইংল্যান্ডই তা এবার প্রথম করে দেখালো। ৪-০ স্কোরলাইনেই শেষমেশ ইউক্রেনের বিদায়ের বাঁশি বেজে যায়। প্রথমবারের মতো ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে এসে প্রতিভায় পরিপুর্ণ ইংল্যান্ডের কাছে তাদের হার মানতেই হয়। রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড তাই আবার ফিরছে ঘরের মাটিতে। সেই সাথে ‘ইটস কামিং হোম’ সুরটা জোরালো হচ্ছে আরও বেশি করে।