• ইউরো ২০২০
  • " />

     

    টাইব্রেকারে স্পেনের হৃদয়-ভেঙে নয় বছর পর ফাইনালে ইতালি

    টাইব্রেকারে স্পেনের হৃদয়-ভেঙে নয় বছর পর ফাইনালে ইতালি    

    ঠাণ্ডা মাথায় জর্জিনহো যেভাবে পেনাল্টি নিলেন, ওই মুহূর্তে এর চেয়ে ভালোভাবে স্নায়ু ধরে রাখা যেত না। আর সেই পেনাল্টিতে হলো ইতালির বাজিমাত। স্পেনকে ৪-২ গোলে টাইব্রেকারে হারিয়ে ২০১২ সালের পর আবারও ইউরোর ফাইনালে চলে গেল ইতালি। নির্ধারিত সময়ে ফেদেরিকো কিয়েসা গোল করার পর স্পেনের হয়ে সমতা ফিরিয়েছিলেন আলভারো মোরাতা। এরপর অতিরিক্ত সময়ে গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ৪-২ গোলে জিতে ওয়েম্বলিতে উদযাপনে ভাসল ইতালি, স্পেনের হৃদয় ভেঙে ইতালি চলে গেল ফাইনালে। 

    শুরুর মিনিট কয়েক ছন্নছাড়া খেলেছে দুই দলই। এরপর পনেরো-বিশ মিনিটের এমন একটা পর্যায় গেছে যেখানে স্পেন একপেশেভাবে খেলে গেছে। পেদ্রির দুরদর্শীতায় অয়ারজাবাল সুবর্ণ সুযোগও পেয়েছিলেন। ইতালিয়ান ডিফেন্সচেরা পেদ্রির পাস অয়ারজাবাল রিসিভ করতে ব্যর্থ হলে স্পেন এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করে। এরপর প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময়েই খেলার নিয়ন্ত্রণ ছিল স্পেনের হাতে। স্পেনের সমস্যার জায়গাটাতে এদিনও সমস্যা থেকে গেছে। ফিনিশিং দুর্বলতায় শেষমেশ গোলের দেখা না পেয়েই তাই প্রথমার্ধ শেষ করতে হয়েছে স্পেনকে। 



    এবং অয়ারজাবালের সাথে এতে সবচেয়ে বড় আক্ষেপ থাকবে দানি অলমোরও। বক্সের ভেতর মোক্ষম সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন, পরাস্ত করতে পারেননি ডোনারুমাকে। আর এতে কারো সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পাওয়ার কথা থাকলে সেটি ডোনারুমারই। তার ভুলেই সেন্টারলাইনের কাছ থেকে স্পেন ইন্টারসেপ্ট করে আক্রমণটার সুচনা করেছিলো। স্পেন গোলকিপার সিমোনের ভুলে কপাল পুড়তে পারতো স্পেনেরও। বাঁ পাশে স্পেন ডিফেন্স ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন এমারসেন, সিমোন এরপর এগিয়ে এসেছেন বেশ উপরে।  এমারসেন সিমোনের পাশ দিয়ে ডানদিকে ইম্মোবিলের দিকে বল বাড়ানোর পর ইম্মোবিলে পাস দিয়েছেন বারেলাকে। ততক্ষণে স্পেন ডিফেন্স জটলা হাজির। ইতালির কয়েক শট ব্লকে তাই সে যাত্রায় বাঁচে স্পেন। স্পেনের হাই-প্রেসিং ফুটবলের বিপরীতে ইতালি কয়েকবার কাউন্টার অ্যাটাকে চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি। তবু গোল নিয়েই বিরতিতে যেতে পারতো ইতালি। প্রথম অর্ধের একেবারে শেষের দিকে এমারসেনের শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসলে গোলবঞ্চিত হয় ইতালি। প্রথমার্ধে ইতালির একমাত্র শট ছিল সেটিই। 

    দ্বিতীয়ার্ধে ইতালির গোলমুখে কয়েকটা শট নিয়েছিলো স্পেন। অয়ারজাবাল বক্সের বেশ বাইরে থেকে ডোনারুমার হাতে মেরেছেন, আরেকবার বুস্কটেসের শট গেছে বারের সামান্য উপর দিয়ে। ৬০ মিনিটে এরপর আরেকটি শট শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সেটা এসেছে ম্যাচের ধারার বিপরীতে। কাউন্টার অ্যাটাকে দ্রুত উঠে গিয়ে ইনসিনিয়ের দুর্দান্ত থ্রু পাসে ইম্মোবিলে বল পেয়ে ড্রিবল করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর লাপোর্তে ট্যাকল করে বিপদ একটু সরিয়েই দিয়েছিলেন শুধু। ইম্মোবিলের পিছু আসা কিয়েসা বাঁ পাশে ফাঁকা অবস্থায় বল পেয়ে যান। এরপর স্প্যানিশ দুই সেন্টারব্যাকের মাঝ দিয়ে অসাধারণ এক শটে বল জড়িয়ে দেন জালে।

    এরপর কিয়েসা দুর্দান্তভাবে আরেকবার ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়ে বল বাড়িয়েছিলেন বেরার্দির দিকে। অরক্ষিত থেকেও এরপর বেরার্দি সোজা মেরে সুযোগ নষ্ট করেছেন। অন্যদিকে স্পেনও বলের দখল রেখে দাপটের সঙ্গেই খেলে যাচ্ছিলো। কোকের চিপ করে বাড়ানো বলে অয়ারজাবাল মাথা লাগাতে পারেননি বলে সমতায় ফেরা হয়নি স্পেনের। এরপর বদলি নামা মোরাতার বদৌলতেই বেঁচে থাকে স্পেন। ফিনিশিং ব্যর্থতার কারণে সমালোচনায় জর্জরিত হওয়া মোরাতার ফিনিশিংটা ছিল অসামান্য। ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়ে বাঁ পাশে থাকা অলমোর দিকে বল বাড়ালে অলমো আবার দারুণভাবে পাস দেন মোরাতাকে। মোরাতা এরপর বিচক্ষণতার সাথে ডোনারুমাকে ফাঁকি দিয়ে ফার্নান্দো তোরেসকে ছাড়িয়ে ইউরোতে স্পেনের হয়ে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার বনে যান।  

    ইউরোতে এ দুদল এর আগে মুখোমুখি হয়েছে ছয়বার, এর মধ্যে পাঁচবারই মীমাংসার জন্যে ৯০ মিনিট যথেষ্ট হয়নি। এ ম্যাচেও খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ম্যাচের নিষ্পত্তি না ঘটলে টাইব্রেকারের শরণাপন্ন হতে হয়। প্রথম শট লোকাতেল্লি নিতে এসে মিস করার পরে স্পেনের হয়ে দানি অলমোও ব্যর্থ। এরপর একে একে বেলোত্তি, মরেনো, বনুচ্চি, থিয়াগো বল জালে পাঠাতে সফল হয়েছেন। বার্নার্দেস্কিও এসে ইতালির চতুর্থ শট জালে জড়ান। কিন্তু মোরাতার শট ঠেকিয়ে দিলে পিছিয়ে পড়ে স্পেন। দুদলের চারটি শট শেষে- ইতালি ৩-২ স্পেন। বেঁচে থাকতে হলে তাই ইতালির পরের শটটা রুখতেই হতো স্পেনের। জর্জিনহোর শটটা রুখতে পারেন না উনাই সিমোন।

     

    কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে সুইজারল্যান্ডের সাথে জয় পেয়েছিল স্পেন। ইউরোর ইতিহাসে টানা দুই ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে কেউ জিততে পারেনি। যে মোরাতা স্পেনকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সেই মোরাতাই টাইব্রেকারে মিস করলেন। তাতে মেজর টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো স্পেনকে। আর মোরাতার সাথে সাথে স্পেনেরও এই ইউরোয় চড়াই-উতরাইয়ের সমাপ্তি ঘটলো। ইতালির এক দর্শক ব্যানারে লিখে নিয়ে এসেছিলেন ’ফুটবল ইজ কামিং রোম’। সেই পথে ইতালির বাকি থাকলো আরেকটি ধাপ। ডেনমার্কের সঙ্গে ইংল্যান্ড জিতলে গ্যালারিতে অন্য খেলা শুরু হয়ে যাবে- ‘ফুটবল ইজ কামিং হোম’ বনাম ‘ফুটবল ইজ কামিং রোম’।