লেখা হল না ডেনিশ রূপকথা, ৫৫ বছর পর ফাইনালে ইংল্যান্ড
মঞ্চটা সাজানো ছিল দু'দলের জন্যই। একদিকে '৬৬ বিশ্বকাপের পর আবারও কোনো বড় আসরের ফাইনালে ওঠার হাতছানি ছিল ইংল্যান্ডের, আর অন্যদিকে '৯২ ইউরোর পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আরেকটি রূপকথার গল্প সাজানোর উপলক্ষ ডেনমার্কের। শেষ পর্যন্ত হাসিটা থাকল ইংল্যান্ডেরই। ওয়েম্বলিতে অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইনের গোলে ডেনিশদের বুক ভেঙ্গে ফাইনালে চলে গেল সাউথগেটের দল। অক্ষুণ্ণ থাকল ওয়েম্বলিতে এখনও বড় আসরে ইংলিশদের কোনো ম্যাচ না হারার রেকর্ডও। রোববারের ফাইনালে সেখানে অপেক্ষায় আছে ইতালি।
তবে ম্যাচের সবচেয়ে বিতর্কিত মুহূর্তটি এসেছে ঐ জয়সূচক গোলকে ঘিরেই। নির্ধারিত সময়ে সমতার পর ম্যাচ তখন গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। ১০১ মিনিটের সময় মেহলের ধাক্কায় স্টারলিং বক্সে পড়ে গেলে রেফারি বাঁশি বাজান পেনাল্টির। রিপ্লেতে দেখে 'সফট টাচ' মনে হলেও রেফারি ভিএআর মনিটরে গিয়ে দেখেন নি, ইয়ারফোনে কথা বলেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন নিজের। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ক্যাসপার স্মাইকেল প্রথম দফায় পেনাল্টি ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়ে ওয়েম্বলিকে আনন্দে ভাসান কেইন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে ইউরো-বিশ্বকাপ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের (১০) রেকর্ডে গ্যারি লিনেকারের পাশে বসলেন তিনি।
ওয়েম্বলিতে ম্যাচের শুরু থেকে ডেনমার্কের উপর চেপে বসেছিল ইংল্যান্ড। মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডেনিশ রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন স্টারলিং-কেইন-সাকারা। তবে খেলার ধারার বিপরীতে প্রথম গোল করে বসে ডেনমার্ক। ম্যাচের ৩০ মিনিটে ডামসগার্ড দুর্দান্ত এক ফ্রিকিকে পরাস্ত করেন পিকফোর্ডকে। এবারের ইউরোতে এই প্রথম গোল খেল ইংল্যান্ড। ৬৯১ মিনিট পর ইংল্যান্ডের জালে ঢুকল বল।
গোলশোধের জন্য এরপর আরও মরিয়া হয়ে উঠে স্বাগতিকরা। ফলও আসে দ্রুতই। ৪০ মিনিটের দিকে হ্যারি কেইনের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে সাকা বল পেয়ে গেলে মাইনাস করেন ডিবক্সে। সেখানে আগুয়ান স্টারলিংকে বাধা দিতে গিয়ে উলটো নিজের জালেই বল জড়িয়ে ফেলেন ডেনিশ অধিনায়ক সাইমন জার। এবারের ইউরোতে ভূতুড়ে আত্মঘাতী গোলের মিছিল যেন চলছেই, জারের গোলটি ছিল আসরের একাদশ আত্মঘাতী গোল। এক গোলের সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর আক্রমণের আরও ধার বাড়ায় ইংল্যান্ড। অন্যদিকে ডেনমার্ককে মনে হচ্ছিল বেশ ক্লান্ত। সাকার বদলে জ্যাক গ্রিলিশ নামার পর একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে ইংলিশরা। তবে ডেনমার্কের গোলবারের নিচে এদিন প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ক্যাসপার স্মাইকেল। বাবাকে মনে করিয়ে দেওয়া ক্যাসপার এই ম্যাচে করেন নয়টি সেইভ, যার মধ্যে তিনটি ছিল প্রায় নিশ্চিত গোল। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা তাই শেষ হয় সমতায়।
বড় আসরে অতিরিক্ত সময়ে ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক রেকর্ড পক্ষে ছিল না, তবে এদিন ভাগ্যদেবী ছিলেন তাদের পক্ষে সুপ্রসন্ন। হ্যারি কেইনের গোলের পর আরেকটু রক্ষণাত্মক ফর্মেশনে গিয়ে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডকে ইউরো ফাইনালে নিয়ে গেলেন গ্যারেথ সাউথগেট।