• ইউরো ২০২০
  • " />

     

    টাইব্রেকারে ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে রোমেই এলো ইউরো

    টাইব্রেকারে ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে রোমেই এলো ইউরো    

    হলো না ইটস কামিং হোম। শিরোপা হোমে না, যাচ্ছে রোমেই। নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে সমতা ছিল ইতালি-ইংল্যান্ডের। এরপর ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানেও নাটক। শেষ পর্যন্ত বুকায়ো সাকার শেষ কিকটি ঠেকিয়ে দিয়ে নায়ক বনে গেলেন জিয়ানলুইজি ডোনারুমা। ১৯৬৮ সালের পর আরও একবার ইউরো জিতল ইতালি। আর বড় শিরোপার জন্য অপেক্ষা বাড়ল ইংল্যান্ডের। 

    শুরুটা স্বপ্নের মতো হয়েছিল ইংল্যান্ডের। ইউরো ফাইনালের পরদিন লুক শয়ের জন্মদিন। ওয়েম্বলিতে নিজের উপলক্ষটা রাঙানোর সুযোগটা পেয়ে গেলেন তিনি নিজেই। সেন্টার লাইনের নিচ থেকে শ পাস দিয়েছিলেন কেইনকে, কেইন এরপর লং পাস বল বাড়িয়েছেন বাঁ পাশ থেকে ডান পাশে থাকা ট্রিপিয়ারের দিকে। ট্রিপিয়ার বল পেয়ে যখন অসাধারণ ক্রসটা করলেন, তখন পোষ্টের সামনে হাজির লুক শ। ফাঁকা থাকলেও যে পজিশনে ছিলেন, সেখান থেকে বল জালে জড়ানো অতটা সহজ বিষয়ও ছিল না। লুক শ দুর্দান্ত ভলিতে এমনভাবে ফিনিশিং করলেন, দেখে মনে হবে খুব একটা কঠিন ছিল না। 



    এর আগে তার জীবনে কখনো ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে লুক শ কোনও গোল করতে পারেননি। এদিন ওয়েম্বলিতে নিজ দর্শকদের সামনে যে গোলটা করলেন, সেটিও রেকর্ড গড়ে। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের মাথায়ই লুক শ করেছিলেন নিজের প্রথম গোলটা। এত কম সময়ের মধ্যে ইউরো ফাইনাল এর আগে কোন গোল দেখেনি। ওয়েম্বলিতে হাজার ষাটেক দর্শক গোলটা দেখে মেতেছিলেন বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে। স্টেডিয়ামে থাকা ইংলিশদের মধ্যে সবচেয়ে কম উদযাপন করেছেন বোধহয় গ্যারেথ সাউথগেটই। শুধু একবার যেন বললেন, ইয়েসস। ব্যাস। বাকিটুকু হয়তো জমিয়ে রেখেছিলেন জয় নিশ্চিতের পরের জন্য। 

    তার প্রতিপক্ষ কোচ মানচিনি ম্যাচের আগে ইংল্যান্ড দর্শক সুবিধা পাওয়া নিয়ে বলেছিলেন, শুরুতে গোল দিতে পারলে ইংল্যান্ডের ওই শক্তিটাই বরং বাড়তি চাপের কারণ হতে পারে। এমনটা হয়নি, লিড নেওয়ার পর ইংলিশ সমর্থকদের আওয়াজের মাত্রাটা বেড়েছে আরও। তবে ইতালি ম্যাচের ফেরার চেষ্টা করে গেছে। লং রেঞ্জ থেকে কয়েকটা শট নিয়েছিল, যদিও গোলের খুব কাছে যাওয়া হয়নি। অন্যদিকে ইংল্যান্ডও গোলের পরিষ্কার কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি আর। তবু প্রথমার্ধে অন টার্গেটে থাকা একমাত্র শটটাই তাদের বিরতিতে নিয়ে গেছে স্বস্তিতে। 

    ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট, এবারের ইউরোতে সবচেয়ে বেশি গোল হয়েছে এই পনেরো মিনিটেই। গোল পেতে মরিয়া ইতালিও এ ম্যাচে সেসময়ে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে। তবু সমতায় ফেরা হচ্ছিলো না কোনমতেই। ৬১ মিনিটে অবশ্য গোলের দেখা পেয়ে যেতে পারতো ইতালি। বক্সের ভেতর থেকে নেওয়া কিয়েসার শট দুর্দান্ত সেভে পিকফোর্ড ফিরিয়ে দিলে গোলবঞ্চিত হয় আজ্জুরিরা। তবে গোল আসতে যে বেশ দেরি নেই, সেটা ইতালি তাদের খেলায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলো ভালোভাবেই। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আধা ঘন্টায় খেলা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ইতালি শেষমেশ গোল পেয়েই যায় ৬৭ মিনিটে। 


     

    ভেরাত্তির হেড পোষ্টে লেগে ফিরে আসলে সিক্স-ইয়ার্ড বক্সে গোলের সামনেই থাকা বনুচ্চি বল পেয়ে যান। বনুচ্চির বয়স ৩৪ বছর ৭১ দিন, এই বয়সে ইউরো ফাইনালে কারো গোল করার সৌভাগ্য হয়নি। বনুচ্চি এদিন গোল করলে বেঁচে থাকে ইতালির স্বপ্ন। দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময়ে বিবর্ণ থাকা ইংল্যান্ড শেষের মিনিট পনেরোতে কিছুটা খেলায় ফিরেছিলো। সাউথগেটের শিষ্যরা ভালো সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো ইতালি। লং বলে ডিফেন্স ভেদ করে বেরার্দি এগিয়ে গিয়ে এরপর ভলিতে মেরেছেন বারের উপর দিয়ে। ওয়েম্বলিতে হওয়া আগের তিন ফাইনালেই জয়ী নির্ধারণের জন্য নির্ধারিত সময় যথেষ্ট হয়নি। ১-১ স্কোরলাইনে অমীমাংসিত এ ম্যাচেও খেলা গড়িয়েছে অতিরিক্ত সময়ে। ডিফেন্সিভ দিক দিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা দুটি দলের খেলায় সেসময়ও কোনও ব্যবধান গড়ে দিতে পারেনা। ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো তাই ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন খুঁজে নিতে টাইব্রেকারে যেতে হয়।

    ইতালির হয়ে প্রথম শটটা নেন বেরার্দি, ইংল্যান্ডের হয়ে হ্যারি কেইন। দুজনেই গোল করলে পরে বেলোত্তি এসে মিস করে ফেলেন। ম্যাগুয়ের এসে এরপর গোল করলে দুটি শট শেষে এগিয়ে থাকে ইংল্যান্ড। এরপর বনুচ্চিও এসে বল জালে জড়ান। কিন্ত ইংল্যান্ড তাদের পরের দুটি শটেই ব্যর্থ হয় বল জালে জড়াতে। শেষের বাঁশি বাজার মিনিট কয়েক আগেই দুজন ডিফেন্সিভ মনোভাবের খেলোয়াড়কে তুলে শুধুমাত্র টাইব্রেকারের জন্যেই রাশফোর্ড ও সাঞ্চোকে নামিয়েছিলেন সাউথগেট। বনুচ্চির গোলের পরে পোষ্টে মেরে রাশফোর্ড মিস করলে তিনটি শট শেষে দুদল থাকে সমতায়। কিন্ত ইংল্যান্ডের পরের শটটা সাঞ্চো মিস করলে এগিয়ে যায় ইতালি, এর আগেই বার্নাদেস্কি গোল করেছিলেন বলে। 

    শটের আগে স্কোরলাইন এমন- ইতালি ৩-২ ইংল্যান্ড। শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা তাই বাঁচিয়ে রাখতে হলে পিকফোর্ড সেভ দিতেই হতো শেষ শটটা। পেনাল্টিতে বিশ্বের সেরাদের একজন জর্জিনহো এলেন, সেমিফাইনালেও ঠিক এমনই এক সময়ে এসেছিলেন। সেদিন পেরেছিলেন, এদিন পারলেন না। কিন্ত সাডেন ডেথে খেলা নিয়ে যাওয়ার জন্য ইংল্যান্ডকে শেষ শটটায় গোল করতে হতো। কিন্তু সাকা সেটা পারেননি। প্রথম দুটি শটে গোলের পর শেষের তিনটি শটেই ব্যর্থ হয়ে ইংল্যান্ডকে তাই রানার্সআপ হয়েই সন্তষ্ট থাকতে হলো। রোমে শুরু হওয়া ইউরো আরো দশটি শহর ভ্রমণ শেষে শিরোপাটা পৌছলো রোমেতেই। ক্যামেরার সামনে এসে যেমনটা বলছিলেন বনুচ্চি, ‘ইট ইজ কামিং টু রোম’। তাতে ইংল্যান্ডের ইউরো স্বপ্নটা অধরাই থেকে গেলো। সাউথগেটও তার জমিয়ে রাখা উদযাপনটুকুও করতে পারলেন না। লুক শয়ের জন্মদিনটাও আনন্দের হওয়ার নয়। সকল আনন্দ-উচ্ছ্বাস যে এখন বরাদ্দ শুধু ইতালির জন্যেই!