• " />

     

    কোন পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট?

    কোন পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট?    

    ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসোর সুরটা কেমন কেটে কেটে যাচ্ছে বেশ ক’ বছর ধরেই। আশি-নব্বইয়ের দশকে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটা একটানা পনেরো বছর অজেয় ছিল টেস্ট সিরিজে, সেই ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডসদের উত্তর প্রজন্ম কিনা টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের দুই-তিন- চার নম্বরে নয়, একেবারে আট নম্বরে! ইতিহাস নতুন করে লিখে আগামী বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আসর বসবে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের ছাড়াই! ক্যারিবিয় ক্রিকেটার বলতে এখন কেবল দুনিয়াজোড়া ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে ক্ষণিকের বিনোদন? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কি স্যামি-গেইলদের আবেদন আসলেই ফুরিয়ে গেছে? জবাবটা যে অবশ্যই ‘না’ তার প্রমাণ তো সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই। তবে কেন একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালীদের এমন ত্রাহি মধুসূদন দশা? উইন্ডিজ ক্রিকেটের নিকট অতীত ঘুরে এসে সে প্রশ্নেরই শুলুক সন্ধানের চেষ্টা করা যাক।

     

    সেই সময়

     

    ক্যারিবিয়ান সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরকে পৃথককারী অনেকগুলো দ্বীপ ও দ্বীপরাষ্ট্রের সমষ্টি আধুনিককালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে পরিচিত। বাহামাস (বা লুকেয়ানা) এবং অ্যান্টিলিজ দ্বীপপুঞ্জের কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই অঞ্চল। সপ্তদশ থেকে উনবিংশ শতক পর্যন্ত বিভিন্ন ইউরোপিয়ান দেশের উপনিবেশ হিসেবে বিভক্ত থাকা অঞ্চলটি বর্তমানে নয়টি স্বাধীন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু উপনিবেশের একটি সমন্বয়।

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল সে অর্থে পুরো ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জেরও প্রতিনিধিত্ব করে না। বিগত প্রায় একশ বছরের ইতিহাসে অনেক রূপান্তরের পর বর্তমানে ছয়টি আঞ্চলিক ক্রিকেট বোর্ড মিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড গঠিত রয়েছে। এই ছয় বোর্ডের চারটি হল চারটি স্বাধীন দেশ বার্বাডোজ, গায়ানা, জ্যামাইকা ও ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর; এছাড়া ওয়াইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের চারটি স্বাধীন রাষ্ট্র মিলে 'ওয়াইন্ডওয়ার্ড আইসল্যান্ডস ক্রিকেট বোর্ড' এবং লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের ছয়টি উপনিবেশ মিলে 'লিওয়ার্ড আইসল্যান্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন' হিসেবে উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্গত।

     

    সত্তরের দশকে প্রথম স্যার গ্যারি সোবার্সের নেতৃত্বে ও পরবর্তীতে আশি-নব্বইয়ের দশকে ক্লাইভ লয়েড, ভিভ রিচার্ডস ও রিচি রিচার্ডসনদের অধীনে ক্যারিবিয় ক্রিকেট পার করে আক্ষরিক অর্থেই সোনালি যুগ। ওই সময়ে উইন্ডিজ দল টানা ঊনত্রিশটি টেস্ট সিরিজে অপরাজিত থাকার নজিরবিহীন রেকর্ড গড়ে। ১৯৮৪ সালে টানা এগারোটি টেস্ট জিতে ভেঙে দেয় অস্ট্রেলিয়ার টানা ছয়টি টেস্ট জেতার ৬৪ বছরের পুরনো রেকর্ড। একদিনের ক্রিকেটের প্রথম দুটো বিশ্বকাপেরই শিরোপা ঘরে তোলে লয়েড বাহিনী। একের পর এক দুর্ধর্ষ সব পেসারের আগমন, ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ, দুর্দান্ত ফিল্ডিং-উইকেটকিপিং আর সামনে থেকে অসাধারণ নেতৃত্ব...এসব পুঁজি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ক্রিকেটে একক আধিপত্য ধরে রেখেছিল নব্বইয়ের দশক পেরিয়ে আরও চার-পাঁচ বছর।

     

    দুর্দিনের শুরু

     

    লয়েড, রিচার্ডস, রিচার্ডসনদের যুগ শেষ হতে না হতেই ক্যারিবিয় ক্রিকেটের দুঃসময় শুরু হতে থাকে। টানা ১৫ বছর ২৯টি টেস্ট সিরিজে অজেয় থাকা দলটা ১৯৯৫ সালে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজ হেরে বসে নিজের মাঠেই। এর বছর দুয়েক পর পাকিস্তানের কাছে শোচনীয় পরাজয়ে উইন্ডিজ ক্রিকেটের দুর্দশার চিত্রটা আরও প্রকট হয়। ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যাম্ব্রোস, কোর্টনি ওয়ালসদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য সাফল্যের পালে আরও ক’ বছর হাওয়া দিয়ে যায় বটে। কিন্তু এর সাথে আশি-নব্বইয়ের দশকের সেই প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনা চলে কই?

     

    টানা পনেরো বছর (জুন '৮০-ফেব্রুয়ারি '৯৫) টেস্ট সিরিজে অজেয় থাকা দলটা গত পনেরো বছরে জিতেছে মাত্র ২৬টি টেস্ট, হেরেছে ৭৭টিতে! একদিনের ক্রিকেটেও চিত্রটা হতাশাজনকই, গত পনেরো বছরে ১৩২ জয়ের বিপরীতে পরাজয়ের সংখ্যা ১৭৬। ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে নয় নম্বরে নেমে গিয়ে প্রথমবারের মতো উইন্ডিজ দল ছিটকে পড়েছে আইসিসির প্রথম সারির কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্ট থেকে (২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি)।

     

    সমস্যার উৎস সন্ধানে

     

    ২০০৭ সালে ক্যারিবিয় ক্রিকেটের পুনর্জাগরণের লক্ষ্যে জ্যামাইকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিজে প্যাটারসনকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটির এক প্রতিবেদনে বেশ ক’টি কারণকে এমন দুরবস্থার জন্য দায়ী করা হয়। এসবের মধ্যে সহজাত প্রতিভাবান ক্রিকেটারের সংকট, খেলোয়াড়দের মধ্যে কৌশলগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সৃজনশীলতার অভাব, সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্বাভাবিক দূরত্বের মতো ব্যাপারকে যেমন দায়ী করা হয়েছে, তেমনি অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রশাসনিক আধুনিকায়নে ব্যর্থ উইন্ডিজ ক্রিকেটের কর্তাব্যক্তিদেরও। বলা হয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর যে স্কুল ক্রিকেট, সেটার উন্নয়নে যুগোপযোগী ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আঞ্চলিক বোর্ডগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য খেলার কাছে ক্রিকেটের গুরুত্ব হারাতে থাকা, জনসাধারণের মাঝে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে শ্লথগতিকেও দুর্দশার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সবশেষে ক্রিকেটারদের সাথে বোর্ডের ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের জের ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একাধিকবার লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ার জন্য বোর্ডের দুর্বলতাকেই কাঠগড়ায় তুলেছে ওই কমিটি।

     

    এসব সমস্যার সমাধান করার জন্য কমিটির প্রস্তাবিত সুপারিশ কতোটুকু বাস্তবায়ন বা সাফল্যের মুখ দেখেছে সেটা বাইরে থেকে বলা কঠিন। তবে বোর্ড-ক্রিকেটার দ্বন্দ্বটা যে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের আট বছর পেরিয়েও অপরিবর্তিত রয়ে গেছে, এবং ক্ষেত্রবিশেষে আরও শোচনীয় অবস্থাই ধারণ করেছে তাঁর প্রমাণ তো সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী স্যামিদের বয়ানেই স্পষ্ট।

     

    অবিশ্বাস ও সংকট

     

    ২০০৪ সাল। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে বাড়ি ফিরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। প্রথম দুটো বিশ্বকাপ জয়ের দুই যুগ বাদে আসা এক শিরোপায় স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে চাঙ্গা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল ক্যারিবিয় অঞ্চলের ক্রিকেট। কিন্তু স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের রূপ নিতে বেশী সময় লাগে নি। সপ্তাহ না ঘুরতেই অস্থিরতা মাথাচাড়া দিতে শুরু করে উইন্ডিজ ক্রিকেটে। দলটির ১৮ বছরের স্পন্সর ক্যাবল এন্ড ওয়্যারলেসকে (সিএন্ডডব্লিউ) সরিয়ে নবীশ এক আইরিশ মোবাইল অপারেটর সংস্থা ডিজিসেলের সাথে চুক্তি করে বোর্ড।

     

    মোবাইল মার্কেটের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় ক্যারিবিয়ায় তখন সিঅ্যান্ডডব্লিউর সাথে ডিজিসেলের বিবাদ চরমে। তবে সেটা নিয়ে তো আর ক্রিকেট মাঠে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। তবে মাথা ঘামাতে হল ভিন্ন কারণে। ডিজিসেলের চুক্তিপত্রে ক্রিকেটারদেরকে ব্যক্তিগতভাবে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে- এমন দাবী তুলে উইন্ডিজের ক্রিকেটারদের সংগঠন থেকে বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে নিষেধ করা হয়।

     

    যাই হোক, প্রাদেশিক এক আদালতের আদেশে ক্রিকেটাররা পরের বছরের (২০০৫) জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানসহ তিন জাতির ভিবি সিরিজে সদলবলেই অংশ নেয়। তবে ছয় ম্যাচের পাঁচটিতেই হেরে বসে মাস চারেক আগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা দলটি। দেশে ফিরেই অধিনায়কত্ব হারান ব্রায়ান লারা।

     

    সে বছরের মার্চে ঘরের মাঠে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট থেকে বাদ পড়েন ছয়জন ক্রিকেটার, ডিজিসেলের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সিঅ্যান্ডডব্লিউর সাথে যার যার ব্যক্তিগত চুক্তি অব্যাহত রাখায়। প্রতিবাদে স্বেচ্ছায় দল থেকে সরে দাঁড়ান ব্রায়ান লারাও। পরবর্তীতে সিঅ্যান্ডডব্লিউ ওই খেলোয়াড়দের জন্য চুক্তির বাধ্যবাধকতা শিথিল করলে তাঁরা দ্বিতীয় টেস্ট থেকে আবার দলে ফেরেন। অবশ্য তাতে প্রোটিয়াদের কাছে চার টেস্টের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হার আর পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হওয়া আটকে থাকে নি।

     

    বোর্ড-খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব ক্রমেই আরও জটিল আকার ধারণ করতে থাকে। একই বছরের জুলাইয়ে শ্রীলংকা সফরের জন্য ঘোষিত তেরো সদস্যের দল থেকে লারাসহ দশজনই নাম প্রত্যাহার করে নেন। ক্রিকেটারদের সংগঠন থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, “রীতিমতো অত্যাচারি স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ন্যায়-নীতির ধার না ধেরে বোর্ড যে কোনো মূল্যে তাঁদের নতুন স্পন্সরের সাথে চুক্তি রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

     

    উপায়ন্তর না দেখে সে সময় শ্রীলংকা সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলের আটজন সদস্যকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পুরো স্কোয়াডে কেবল অধিনায়ক চন্দরপলের ছিল দশের বেশী টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা!

     

    ওদিকে ক্যারিবিয়ায় তখন সিঅ্যান্ডডব্লিউ আর ডিজিসেলের মধ্যে চলছে তুমুল বাকযুদ্ধ। উইন্ডিজ বোর্ডের সভাপতি পদটা হয়ে ওঠে  ‘ম্যাজিকেল চেয়ার’। কয়েকমাসের মধ্যেই ওই আসনে রদবদল হয় তিনবার। নিজেদের মাঠে ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুই বছর হাতে রেখে পদত্যাগ করেন সাংগঠনিক কমিটির প্রধান। ২০০৪-০৫ মৌসুমে প্রায় সোয়া কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়ে যায়।

     

    সংগত কারণেই মাঠের বাইরের এমন অস্থিরতার প্রভাব পড়তে শুরু করে মাঠের খেলায়ও। ২০০৫ সালে এগারো টেস্টের আটটিতেই হেরে বসে উইন্ডিজ, পনেরোটি পরাজয় একদিনের ক্রিকেটে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়ান কোচ বেনেট কিংসহ দলের ফিজিও-ট্রেনাররা পড়লেন এক অদ্ভুত বিপদে, প্রতিটা সিরিজেই তাঁদের হাতে মোটামুটি আনকোরা নতুন একেকটা দল তুলে দেয়া হতে লাগলো! ওই এক বছরেই যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোয়াডে নাম লিখিয়েছিলেন ৩০ জন ক্রিকেটার! .

     

    জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে এমন অস্থিরতার নেতিবাচকটা প্রভাব এড়াতে পারে নি ঘরোয়া ক্রিকেটও। দলের সংখ্যা কমে যেতে শুরু করে, দুই পর্বের লিগ শেষ হয় এক পর্বে। গ্রেনাডায় তরুণ প্রতিভা অন্বেষণের একাডেমিটা বন্ধ হয়ে যায়। বোর্ডের মধ্যে তৈরি হওয়া দীর্ঘস্থায়ী বিশৃঙ্খলার জেরে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ নাম লেখায় অনেক কলংকের খাতায়। ২০০৯ সালে আদতে আনাড়ি এক উইন্ডিজ দলকে তাঁদের মাটিতে টেস্ট-ওয়ানডেতে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করে আসে বাংলাদেশ।

     

    এরপর বছরের পর বছর গড়িয়েছে, লারা-চন্দরপলদের যুগ গত হয়ে গেইল, স্যামি, ব্র্যাভোদের সময়ও যাই যাই করছে, হোল্ডার-ব্রাথওয়েট-ফ্লেচাররা ক্যারিবিয় ক্যালিপসোর সুরটা ধরতে যাচ্ছেন...কিন্তু বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের সম্পর্কের সেই ভাঙা সেতু আর জোড়া লাগে নি। সময়ে সময়ে আইসিসি ও ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংগঠনের হস্তক্ষেপ সে ক্ষতে সাময়িক প্রলেপ দিয়েছে মাত্র। স্থায়ী কোনো সমাধান যে আসে নি তা প্রমাণ করতেই যেন ২০১৪ সালে ভারত সফরের মাঝপথে সফর বাতিল করে ফিরে যান ব্র্যাভোরা।

     

    এমন অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে অনেকটা ‘ধরে-বেঁধে’ খেলতে নিয়ে আসা স্যামি-ব্র্যাভোদের দলটাই যখন তিন আসরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে যায় তখন স্বভাবতই ক্রিকেটপ্রেমীদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় উইন্ডিজ বোর্ডকে। শিরোপা জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন স্যামিরা বোর্ডের সাথে চুক্তির জন্য হাহাকার করেন, সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে এমন অসাধারণ একটা দল পাবার অধিকারটুকুও উইন্ডিজ বোর্ড রাখে কিনা।

     

    দশককালের বেশী সময় ধরে চলে আসা এই বিবাদের মূলে যে অর্থ তা আর আলাদা করে উল্লেখ করার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে স্যামিরা বলছেন বোর্ড থেকে পর্যাপ্ত অর্থ না পাবার কারণেই তাঁরা দেশী-বিদেশী লিগের পিছনে ছুটছেন। আর বোর্ড বলছে এভাবে সারা বছর লিগ খেলে বেড়ালে তাঁরা ঠিক কি কারণে খেলোয়াড়দের বেতন দিয়ে রাখবে?

     

    এসব প্রশ্নের নিষ্পত্তি যতদিন না হবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংকট ততদিনই জিইয়ে থাকবে।