• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ইউএফওর ছায়া, বোমাতংক, বন্দুক নিয়ে মাঠে ও ম্যাচ বাতিলের অদ্ভুত পাঁচ ঘটনা

    ইউএফওর ছায়া, বোমাতংক, বন্দুক নিয়ে মাঠে ও ম্যাচ বাতিলের অদ্ভুত পাঁচ ঘটনা    

    ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের কাণ্ড আপনি ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন। পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনা জেনে চায়ের টেবিলে আপনি হয়ত সেই ঘটনা নিয়ে যুক্তিতর্কেও শামিল হয়েছেন। তবে সেই রাতে কিন্তু আরও একটই ম্যাচ বাতিল হয়ে গিয়েছে। গিনিতে সামরিক অভ্যুত্থানের রাতে বাতিল হয়ে গিয়েছে মরক্কোর সাথে  ম্যাচ, কোনওমতে হোটেলবন্দী আশরাফ হাকিমিরা ফিরেছেন দেশে। তা সে মাঠের মারামারিই হোক বা বাইরের কারও হস্তক্ষেপ- উদ্ভট এরকম নানাবিধ কারণে ফুটবল ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ার নজির আছে আরও। চলুন জেনে আসা যাক সেরকম কিছু অদ্ভুত ম্যাচের কথা। 

     

    অ্যালিয়েন এলো নাকি!

    ১৯৫৪ সালের ২৭ অক্টোবরের কথা। ফ্লোরেন্সের স্তাদিও আরতেমি ফ্রাঙ্কি কানায় কানায় দর্শকঠাসা। স্থানীয় ডার্বি বলে কথা। ফিওরেন্তিনার সাথে পিস্তোইজির সেই ম্যাচে হাফটাইমের বিরতি শেষে মাঠে নেমেছে খেলোয়াড়েরা, বলে লাথি দিয়ে খেলা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু হুট করেই খেলার মাঠ থেকে দর্শকদের মন চলে গেল অন্যদিকে। আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে তখন পুরো স্টেডিয়াম, এমনকি মাঠের খেলোয়াড়েরাও বল ফেলে রেখে চেয়ে আছে আকাশপানে। “ ডিম্বক আকৃতির” কোন এক বস্তুর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে গোটা মাঠ, সবার ভেতরেই একইসাথে কাজ করছে বিস্ময় আর কিছুটা চাপা ভয়। তুষারশুভ্র ঐ চাকতি যদি নেমে এসে মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন করে দেয় সবকিছু! বিদঘুটে সেই দিনটায় সবাই ভেবেছিল তারা ইউএফও দেখেছে। 

    সেদিন মাঠে থাকা ইতালির জাতীয় দলের খেলোয়াড় আরদিকো মানিইনি পরে বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,”সবকিছু আমার অক্ষরে অক্ষরে মনে আছে। জিনিসটা দেখতে ডিমের মত ছিল। খুবই আস্তে আস্তে নড়ছিল। সবাই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল আর মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে রুপালি কিছু নেমে আসছিল, চিকমিকও করছিল! এরকম কিছু আমরা জীবনেও দেখিনি। আমরা একদম তব্দা খেয়ে গিয়েছিলাম।” 

    রেফারি সেদিন খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ম্যাচ রিপোর্টে লিখেছিলেন,”দর্শকরা আকাশে কিছু একটা দেখেছিল”। পরে সেদিন টাসকানি থেকেও এরকম অনেক ইউএফওর দর্শন মেলার খবর এসেছিল। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছিলেন বাদুড়রা সেদিন দল বেঁধে অভিবাসনের জন্য উড়াল দেওয়াতে এমনটি হয়েছিল। তবে সেদিন ফ্লোরেন্সে খেলা দেখতে যাওয়া দর্শকরা আজও সেটা মানতে নারাজ। 


     

    ব্রামাল লেনে কুরুক্ষেত্র

    ইংলিশ ফার্স্ট ডিভিশনের পয়েন্ট তালিকায় শেফিল্ড ইউনাইটেড আছে মাঝামাঝি, অবনমনের চিন্তাও নাই আবার প্রিমিয়ার লিগে উত্তীর্ণ হওয়ারও কোনও সুযোগ নাই। কিন্তু ওয়েস্টব্রমউইচ অ্যালবিওন লড়ছে প্রিমিয়ার লিগে জায়গা করে নেওয়ার জন্য। দুই দলের মধ্যে কোনও ইতিহাস নেই বললেই চলে, নেই কোনও স্থানীয় শত্রুতাও। তবে ম্যাচ শুরুর আগে দুই শিবিরে ছিল চাপা ক্ষোভ। দুই দলের আগের দেখায় অ্যান্ডি জনসনের সাথে সংঘর্ষের পর বাজে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ইউনাইটেড মিডফিল্ডার জর্জেস সান্তোসকে। তো যাই হোক, কোনও তর্ক-বিতর্ক ছাড়াই ২০০২ সালের ১৬ই মার্চ মাঠে গড়াল ম্যাচ। 

    ম্যাচের ৯ম মিনিটের মাথায় শেফিল্ড গোলকিপার সাইমন ট্রেসির মাথায় কোন ভূত ভর করে বসল উনিই জানেন, ডি-বক্সের বাইরে ইচ্ছা করেই হাত লাগিয়ে বসলেন বলে। ফলাফল যথারীতি লাল কার্ড। সেই সুযোগেই ৬৩ মিনিটে ডেরেক ম্যাককিনসের গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্টব্রম। ইউনাইটেড কোচ নিল ওয়ারনক অবশ্য হারার আগেই হার মানতে নারাজ। গোল খাওয়ার সাথে সাথে বেঞ্চ থেকে দুজনকে ডেকে পাঠালেন প্রস্তুত হতে। তবে সেই সিদ্ধান্ত ম্যাচ তো বাঁচালোই না উল্টা আরও আগুনে ঘি ঢেলে দিল, মাঠে যে নেমেছেন সান্তোস। মাঠে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই জনসনের ওপর বীভৎস ট্যাকল দিয়ে বসেন সান্তোস, লাল কার্ড যে অবধারিত সেটা নিয়ে তিনি কোনও পরোয়া করলেন না। প্রতিশোধ নিতে পেরেই খুশি তিনি। বদলি হিসেবে নামা আরেকজন প্যাট্রিক সাফোর মাথায়ও যেন রক্ত চড়ে বসেছিল, ঐ লাল কার্ডের হট্টগোলের মধ্যেই উড়ে এসে গোলদাতা ম্যাককিনসকে সজোরে মাথা দিয়ে ঢুঁস মেরে বসেন তিনি। বদলি নেমে দুইজনই লালা কার্ড দেখায় শেফিল্ড পরিণত হয় ৮ জনের দলে। মরার উপার খাঁড়ার ঘা হয়ে এলো মিডফিল্ডার মাইকেল ব্রাউন আর ডিফেন্ডার রবার্ট উলাথর্নের ইনজুরি। এর আগেও ম্যাচ রেফারি এডি ভলফস্টেনহম শেফিল্ডকে দুটো পরিষ্কার লাল কার্ড দেখাননি শুধু ম্যাচ শেষ করার চিন্তা করেই। তবে এই দুই ইনজুরির কারণে ৮২ মিনিটে বাধ্য হয়েই তাকে খেলা বাতিলের ঘোষণা দিতে হয় যেহেতু শেফিল্ডের বদলির কোটাও পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। খেলোয়াড়ের অভাবে ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ার একমাত্র ঘটনা হিসেবে ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসে তাই জায়গা করে নিয়েছে “ব্যাটল অফ ব্রামাল লেন”।

     

    বোমাতংক

    ২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজেদের শেষ ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের খেলার কথা বোর্নমাউথের বিপক্ষে। ১৫ই মের সেই ম্যাচের ওপর শীর্ষ চারে তাদের টিকে থাকা অনেকটাই নির্ভর করছিল। ৭৫,০০০ দর্শক সেদিন থিয়েটার অফ ড্রিমসে হাজির। ম্যাচ শুরুর আগেই সেই উত্তেজনা রুপ নিল ভীতিতে, পুরো স্টেডিয়াম খালি করার নির্দেশ আসা শুরু হল মাইকে। বলা হচ্ছিল, একটি শৌচাগারে পাওয়া গিয়েছে “সন্দেহজনক যন্ত্র”। পুরো স্টেডিয়ামে মুহূর্তের মধ্যে ছেয়ে গেল জঙ্গি হামলার শঙ্কা। 

    ঘটনা কিছুই না, ঐ সপ্তাহে মাঠের নিরাপত্তারক্ষীদের নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মশালা। সেখানেই ব্যবহৃত একটি ডামি যন্ত্র মনের ভুলে ফেলে এসেছিল কোনও এক নিরাপত্তারক্ষী। এই ঘটনা নিয়ে থিয়েটার অফ ড্রিমস কর্তৃপক্ষ অবশ্য বেশ লজ্জার মুখেই পড়েছিল, পরে ক্ষমা চেয়ে দিয়েছিল আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও।

     

    সূর্যগ্রহণ

    ১৯৯৯ সালের ১১ই আগস্ট, বুধবারে ঘরের মাঠে টর্কে ইউনাইটেড মুখোমুখি হবে পোর্টসমাউথের। টর্কের মাঠ প্লেইনমুর আবার ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর। তারিখ আর জায়গা দুইয়ে মিলেই ঘটে গেল বিপদ। ১৯২৭ সালের পর সেবার প্রথম ইংল্যান্ডের আকাশে দেখা মিলবে সূর্যগ্রহণের। আর ততদিনে চারপাশে খবর চাউর হয়ে গেছে বুধবার রাতে ইংল্যান্ডে সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমে, আরও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচারে গেলে ঐ প্লেইনমুর শহরে। স্থানীয় পুলিশ তাই ওর্দিংটন কাপ কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানালেন ম্যাচ স্থগিত করার। কারণ সূর্যগ্রহণ দেখেতে শহরে আসা মানুষের দেখভালের জন্য কয়েক দল পুলিশ নিয়োজিত থাকলে মাঠে পাঠানোর মত লোকবল তাদের নাকি অবশিষ্ট থাকবে না। সূর্যগ্রহণ তো বেশিরভাগ মানুষের জীবনে একবারই দেখার সৌভাগ্য হয়। সেটা ভেবেই কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছিল পুলিশের এই আবেদন। 


     

    সভাপতির হাতে বন্দুক

    কি, খুবই পরিচিত ঠেকছে নাকি? না, এটা বাংলাদেশের মাঠের কোনও ঘটনা নয়। ন্যাড়া মাথার কোনও সাবেক খেলোয়াড়ও মাঠে নেমে বন্দুক তাক করে বসেননি। তবে ঘটনা কিছুটা ওরকমই। গ্রিক লিগের ম্যাচে পাওক সালোনিকার মুখোমুখি এইকে অ্যাথেন্স। উত্তেজনাময় সেই ম্যাচে ফার্নান্দো ভ্যারেলা খুললেন গোলের খাতা, তবে মুহূর্তেই সেই গোল বাতিল হয়ে যায় লাইন্সম্যানের অফসাইডের ডাকে। সাথে সাথে মাঠে নেমে আসে দর্শক, আজ একটা এসপারওসপার করেই ছাড়বে তারা। দর্শকদের সাথে মাঠে নেমে এলেন পাওক সভাপতি গ্রিক-রাশিয়ান ব্যবসায়ী ইভান সাভিদিস, পকেটে বন্দুক! ৮৯ মিনিটে বাতিল হওয়া সেই গোলের জন্য তিনি নাকি রেফারিকে শাসাতেই ছুটে যাচ্ছিলেন। বন্দুকের দেখা মিলতেই ঘাবড়ে যান নেমে আসা দর্শক। ম্যাচও সাথে সাথে বাতিল হয়ে যায়।

    ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ী পরে বলেছিলেন,”পাওক ভক্তরা যাতে কোনোভাবেই প্রলুব্ধ না হয়, কোনও সংঘর্ষে না জড়ায় সেজন্যই আমি নেমেছিলাম, আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল রক্তপাত ঠেকানো। বিশ্বাস করুন, রেফারি বা প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের শাসানোর কোনও উদ্দেশ্যই আমার ছিল না। আর আমি তো কারও দিকে আঙুলও তুলিনি।” সে তার মনে যাই থাকুক না কেন, আর তিনি মাঠে নেমে যাই করুন না কেন, তার এই বন্দুক-প্রদর্শনীর মাশুল গুণতে হয়েছিল তার দলকেই। ম্যাচ বাতিল হওয়ার কারণে এইকে অ্যাথেন্সকে দেওয়া হয়েছিল ৩-০ জয় আর সাভিদিস ৩ বছরের জন্য গ্রিসের সব মাঠ থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।