গায়কোয়াড়-ব্রাভোতে রোহিতহীন মুম্বাইকে হারিয়ে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু চেন্নাইয়ের
গ্রুপ পর্ব, দুবাই (টস- চেন্নাই/ ব্যাটিং)
চেন্নাই সুপারকিংস ১৫৬/৬, ২০ ওভার (গায়কোয়াড ৮৮*, জাদেজা ২৬, ব্রাভো ২৩, মিলনে ২/২১, বোল্ট ২/৩৫, বুমরাহ ২/৩৩)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ১৩৬/৮, ২০ ওভার ( তিওয়ারি ৫০*, ডি কক ১৭, , ব্রাভো ৩/২৫, চাহার ২/১৯, ঠাকুর ১/২৯)
চেন্নাই সুপারকিংস ২০ রানে জয়ী
বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মরুর বুকে অবশেষে মাঠে গড়ানো আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে ২০ রানে হারিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। পাওয়ারপ্লেতে চার উইকেট হারানোর পর ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াডের ৫৮ বলের অসাধারণ ৮৮* রানের ইনিংসের সাথে শেষদিকে ডোয়াইন ব্রাভোর ঝড়ো ৮ বলে ২৩ রানে লড়াই করার ভিত পায় চেন্নাই। দারুণ ব্যাটিংয়ের পরে ব্রাভোর ৩ উইকেটের সাথে চাহারের দুই উইকেটে সেই ১৫৬ রানের সংগ্রহই যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।
১৫৭ রানের জবাবে নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে কুইন্টন ডি ককের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে নেমেছিলেন আনমোলপ্রিত সিং। দীপক চাহারের করা প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান এলেও জশ হেজলউডের করা দ্বিতীয় ওভারে দুই চারে ১২ রান তোলেন দারুণ ফর্মে থাকা ডি কক। তবে ডি ককের বিদায়ঘন্টা বেজে যায় পরের ওভারেই। চার দিয়ে ওভার শুরু করে পরের বলেই চাহারে শিকার হয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ১২ বলে ১৭ রান করে থামেন ডি কক। উইকেটের পতন হলেও হেজলউডের পরের ওভারে দুই চার এক ছয়ে ১৪ রান নেন আনমোলপ্রিত। হাত খুলতে শুরু করার ইঙ্গিত দিতেই আবারও শিকারি হয়ে ফেরেন চাহার। দারুণ এক নাকলবলে পরাস্ত করে আনমোলপ্রিতের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসে শার্দুল ঠাকুর ফেরান সূর্যকুমার যাদবকে। পাওয়ারপ্লে শেষে তাই মুম্বাইয়ের রান ৪১ হলেও ৩ উইকেটের পতনে খুব একটা স্বস্তি ছিল না মুম্বাই শিবিরে।
যাদবের উইকেটের পরে উইকেটে থিতু হওয়ার দিকে মন দেন উইকেটে দুই নবাগত সৌরভ তিওয়ারি ও ইশান কিষাণ। পরের তিন ওভারে তাই আসেনি কোনও বাউন্ডারি। দশম ওভারটা কিষাণ বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করলেও পরের বলেই হার মারেন অভিজ্ঞতার কাছে। কিষানের গিয়ার পাল্টানোর ইচ্ছা আঁচ করতে পেরেই ফুল লেংথে কিষাণের নাগালের বাইরে বল করেন ব্রাভো। হাত বাড়িয়ে সেই বলে শট খেলতে গেলে কাভারে থাকা সুরেশ রায়নাকে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে ১১ রানে ফেরেন তিনি। তবে দিল্লিতে হওয়া সেই ম্যাচ হয়ত ভোলেনি দুই শিবিরের কেউই। কাইরন পোলার্ড সেদিন একাই যেভাবে ম্যাচ বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন এদিন ততটা না হলেও তার কাছ থেকে প্রয়োজন ছিল আরও একটি বিধ্বংসী ইনিংসের। জাদেজার বলে বিশাল এক ছয় মেরে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন সেরকম কিছুরই। এরপরের দুই ওভারে লাগাম টেনে ধরেন ব্রাভো ও ঠাকুর। ফলাফল ১৪তম ওভারের প্রথম বলেই হেজলউডের শিকার হয়ে মুম্বাইয়ের আশার পাত্র পোলার্ডের ফেরা। নিচু হয়ে আসা বলে ব্যাট লাগাতে ব্যর্থ পোলার্ড এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ১৪ বল ১৫ রান করে।
পোলার্ডের বিদায়ে ম্যাচের পাল্লা ঝুঁকে গিয়েছিল চেন্নাইয়ের দিকেই। পরের ওভারেই মইন আলী ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ফেরালে ম্যাচ কার্যত সেখানেই শেষ হয়ে যায়। উইকেটে অনেক সময় কাটালেও অপর প্রান্তে থাকা তিওয়ারি যে ধুঁকছিলেন। পোলার্ডের বিদায়ের পরে ৫ ওভারে মুম্বাই তুলতে পারে ৩১ রান। ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের দিকে চেন্নাই নিয়ে আসতে পারত ১৮তম ওভারে তিওয়ারিকে ফেরালেই, প্যাডল শট খেলতে গিয়ে বল আকাশে ভাসিয়ে দিলে ব্রাভোর সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন ধোনি। সমীকরণ হয়ে দাঁড়ায় শেষ দুই ওভারে ৩৯ রান, ঠিক যেটা করেছিল চেন্নাই। ধুঁকতে থাকলেও উইকেটেও ছিলেন থিতু হওয়া তিওয়ারি। তিওয়ারির সাথে এদিন দারুণ বল করা অ্যাডাম মিলনে মিলে ১৯তম ওভারে ১৫ রান তুলে জয়ের আশা জিইয়ে রাখেন। শেষ ওভারে অভিজ্ঞ ব্রাভো আক্রমণে এলে মুম্বাই তাই তুলতে পারেন মাত্র ৩ রান আর হারায় দুই উইকেট। ৪০ বলে ৫০ করে তিওয়ারি অপরাজত থাকলেও চেন্নাইয়ের দারুণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের কাছে হার মানতে হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে চেন্নাইয়ের শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ। আইপিএলের দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুটা ট্রেন্ট বোল্ট করেন উইকেট মেইডেন নিয়ে, ফেরান ফাফ ডু প্লেসিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরের ওভারে আবারও আঘাত হানেন আরেক কিউই পেসার অ্যাডাম মিলনে। এবার শিকার মইন আলী, দুজনেই ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। চেন্নাইকে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ না দিয়ে তৃতীয় ওভারে সুরেশ রায়নার ব্যাট থেকে আসে চেন্নাইয়ের প্রথম বাউন্ডারি। তবে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সুযোগ না দিয়ে ঐ ওভারের শেষ বলেই বোল্ট ফেরান রায়নাকে। টানা তিন ওভারেই উইকেট হারানো চেন্নাই পরের দুই ওভারে কোনও উইকেট না খুইয়ে দুই দন্ড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছিলো। তবে পাওয়ারপ্লের শেষ বলেই সেই ক্ষণিকের স্বস্তি মুছে চেন্নাইকে আরও চিন্তায় ফেলে ফিরে যান অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। মিলনের শিকার হয়ে ফেরার আগে করতে পেরেছেন কেবল ৩ রান। পাওয়ারপ্লে শেষে চেন্নাই তুলতে পারে মোটে ২৪ রান। পুরো পাওয়ারপ্লে তিন ওভার করে করা কিউই পেস জুটির বোলিং ফিগারও ছিল প্রায় সমান, ৩ ওভারে ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট। শুধু বোল্টের নামের পাশে ছিল উইকেট মেইডেন।
পাওয়ারপ্লের ধাক্কা সামলে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ওপেনার গায়কোয়াড উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। নবম ওভারের শেষ বলে হয়ত ফিরতে হত তাকেও, তবে ডি কক কঠিন সুযোগ লুফে নিতে পারায় ১৯ রানে থাকার সময় বেঁচে যান তিনি। সেই দ্বিতীয় জীবন তিনি যে এতো দারুণভাবে কাজে লাগাবেন সেটা অবশ্য তখন ঘুনাক্ষরেও বোঝা যায়নি। বাউন্ডারির খোঁজে হাতড়ে ফেরা চেন্নাই ২৯ বল পর বাউন্ডারি পায় ঐ গায়কোয়াডের ছয় থেকেই। ক্রুনালের ঐ ওভারে আরও দুই চারে আসে ১৮ রান। সেখান থেকেই শুরু চেন্নাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
১৫ ওভার শেষেও চেন্নাইয়ের স্কোর বলছিল ৮৭-৪। এক প্রান্ত জাদেজা আগলে রেখে ধরে খেলায় শুরু থেকেই উইকেটে থাকা গায়কোয়াড অপর প্রান্তে হাত খুলে খেলার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ঐ ওভারেই পোলার্ডকে চার মেরে ৪১ বলে নিজের ষষ্ঠ আইপিএল ফিফটি তুলে নেন গায়কোয়াড। ঐ ওভার থেকে আরও এক চারের বিনিময়ে আসে ১১ রান। পরের ওভারে এসে বাধ সাধেন বুমরাহ। মুম্বাইয়ের হয়ে নিজের ১০০তম ম্যাচ খেলতে নামা বুমরাহ ঐ ওভারে জাদেজাকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৮১ রানের জুটি। ৩৩ বলে ২৬ রান করে জাদেজা ফিরলেও বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি গায়কোয়াড। সাথে উইকেটে এসেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন ডোয়াইন ব্রাভো। দুজনে মিলে তিন ছয় আর এক চারে বোল্টের করা ১৯তম ওভার থেকে নেন ২৪ রান। মাত্র ৮ বলে ২৩ রান করে শেষ ওভারে বুমরাহর দ্বিতীয় শিকার হয়ে ব্রাভো ফিরলেও শেষ বলে দারুণ এক ছয় মেরে চেন্নাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর নায়ক গায়কোয়াড ঐ ওভারেও নেন ১৫ রান। একসময় ১২০ পেরুনো যেখানে দুষ্কর মনে হচ্ছিল শেষ ১০ ওভারে ১১২ রান তুলে সেই চেন্নাই গিয়ে থামে ১৫৬ রান । আর পুরো ইনিংসে ব্যাট ক্যারি করে ৫৮ বলে ৮৮ রান করে অপরাজিত থাকেন গায়কোয়াড, যা মুম্বাইয়ের বিপক্ষে কোনও চেন্নাই ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। দিনশেষে চেন্নাই বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই স্কোরটাই অবশ্য পেরুতে পারেনি মুম্বাই।