• আইপিএল ২০২১
  • " />

     

    সানরাইজার্সকে ডুবিয়ে সবার ওপরে ধাওয়ান-আইয়ারের দিল্লি

    সানরাইজার্সকে ডুবিয়ে সবার ওপরে ধাওয়ান-আইয়ারের দিল্লি    

    গ্রুপ পর্ব, দুবাই (টস- হায়দরাবাদ/ ব্যাটিং)
    সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৩৪/৯,  ২০ ওভার (সামাদ ২৮, রশিদ ২২, উইলিয়ামসন ১৮, নরকিয়া ২/১২, রাবাদা ৩/৩৭, আক্সার ২/২১)

    দিল্লি ক্যাপিটালস ১৩৯/২, ১৭.৫ ওভার (আয়ার ৪৭, ধাওয়ান ৪১, পান্ট ৩৫, রশিদ ১/২৬)

    দিল্লি ক্যাপিটালস ৮ উইকেটে জয়ী


    যেখান থেকে আগের পর্ব শেষ করেছিল, যেন সেখান থেকেই শুরু করল দিল্লী ক্যাপিটালস। আর হায়দরাবাদ সান্রাইজার্সের দুর্দশা বাড়ল আরও। তাদের গড়ে দেওয়া লক্ষ্যটা দিল্লী পেরিয়ে গেছে সহজেই।

    আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগে দুদলের অবস্থা ছিল একেবারেই বিপরীত। আজকের ম্যাচেও সে পার্থক্যটাই যে ফুটে উঠলো। নরকিয়া-রাবাদার পেসে হাবুডুবু খাওয়া হায়দরাবাদ পুরো ২০ ওভার খেলে দিল্লিকে লক্ষ্য দিয়েছিল ১৩৫ রানের। ধাওয়ানের ৪১ এর পরে আয়ারের অপরাজিত ৪২ এর সাথে পান্টের কুইক ফায়ার ৩৫ রানের ইনিংসে ১৩ বল হাতে রেখেই সহজেই যা পেরিয়ে গেছে দিল্লি। 

    অবশ্য শুরুটা ধীরেসুস্থেই করে দিল্লি। চার রানের প্রথম ওভারের পরের দুই ওভারেই দুটি করে বাউন্ডারি এনে তৃতীয় ওভারেই তারা পৌছে যায় ২০ রানে। তবে প্রথমার্ধে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পৃথ্বী শর উইকেটও হারিয়ে ফেলে তারা। খলিলের বেশ বাইরের স্লোয়ারে ব্যাট চালিয়ে খাড়া ক্যাচ তুলে শ আউট হয়েছেন ১১ রানে। তবে শয়ের উইকেট কিছুটা চাপে পড়ার যে সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল, সেটি দারুণভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ান। স্ট্রাইক রোটেশনের পাশাপাশি নিয়মিত হারে বাউন্ডারি মেরে আস্কিং রেট বাড়তে দিচ্ছিলেন না। 

    ভুবনেশ্বর ও হোল্ডারের কিপটে দুই ওভারে পঞ্চম ওভার শেষে যদিও দিল্লির রান ছিল ২৯। তবে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে রশিদ খানকে স্লগ সুইপে ছয় মেরে মোট ১০ রান এনে দিল্লি ছয় ওভারে তুলেছে ৩৯ রান। সান্দিপ ও হোল্ডারের পরের দুই ওভার মিলিয়ে তারা আনতে পারে মোটে ৮ রান। এরপর রশিদ খানের করা নবম ওভারে স্লগ সুইপে আরেকটি ছয় মারেন শ্রেয়াস আয়ার, সে ওভারে আসে ৯ রান। পরের ওভারে সান্দিপকে টানা দুই বাউন্ডারি মারেন ধাওয়ান। ১০ ওভারে দিল্লির রান ৬৯। উইকেটের প্রয়োজনে আবার রশিদ খানকে আনেন উইলিয়ামসন। 

    আবার স্লগ সুইপ করতে গিয়ে এবার বাউন্ডারি ক্লিয়ার করতে পারেন না ধাওয়ান। ৩৭ বলে ৪২ রানে যখন ধাওয়ান আউট হচ্ছেন, তখনও অপর প্রান্তে সতর্কতার সাথে খেলছিলেন আয়ার। এরপর ১৪তম ওভারে সান্দিপ শর্মাকে তিনিও টানা দুই বাউন্ডারি মেরে খেলাটাকে তাদের মুঠোয় নিয়ে আসেন। যদিও আইপিএলের গেল ম্যাচের অকল্পনীয় ঘটনায় তখনও খেলা শেষ বলার সাহস করতে যে কেউ দ্বিধাবোধ করবে। তবে সেটি ছিল ‘হাজারে এক দিন’ হওয়া ঘটনা, আজ পান্টের ঝড়ে শেষ পর্যন্ত ১৩ বল হাতে রেখেই জিতেছে দিল্লি। প্যান্ট-আয়ারের পঞ্চাশোর্ধ জুটি ম্যাচ জিতিয়েছে মাঠ ছেড়েছে। পান্ট অপরাজিত ছিলেন ২১ বলে ৩৫ রান করে। ইনজুরি থেকে ফেরা আয়ার অপরাজিত থেকেছেন ৪১ বলে ৪৭ রানে।

    ওদিকে টসে হেরে বল করতে নেমে একাদশে ফিরেই গতির ঝড় তুলেছেন নরকিয়া। ওয়ার্নারও ফিরেছেন, তবে দুঃসময় কাটছেই না তাঁর। নরকিয়ার গতি ও বাউন্সে পরাস্ত হয়ে তাকে ফিরতে হয়েছে রানের খাতা খোলার আগেই। নরকিয়ার ব্যাক অফ লেংথের বলে লেগ সাইডে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টায় খাড়া ক্যাচ তুলে দিয়েছেন পয়েন্টে থাকা আক্সার প্যাটেলের হাতে। পরের ওভারে আভেশ খানের বাইরের বলে সাহার কাটে সানরাইজার্স পেয়েছে প্রথম বাউন্ডারি। তবে নরকিয়ার দুই ও আভেশ খানের এক ওভার শেষে তাদের রান ছিল ১৬। 

    চতুর্থ ওভারে আক্সারের বলে মারমুখী মনোভাবের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন সাহা। বাঁহাতি স্পিনারের প্রথম বলেই স্লগ সুইপে চার মেরেছেন। রাবাদার পরের ওভারের প্রথম বলেই পায়ের বলে স্কোয়ার লেগ দিয়ে কবজির মোচড়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তবে সে ওভারের শেষ বলেই ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। রাবাদার দক্ষতার পরিচয় ও চতুরতায় টানা চার বল ডট দিতে হয়েছে সাহাকে, ওভারের শেষ বলে শর্ট লেংথের বল পুল করতে গিয়ে টপ এজে ধরা খেয়েছেন মিড উইকেটে। এবারের আইপিএলের প্রথামার্ধে হায়দরবাদের অবস্থা খারাপ হলেও পাওয়ারপ্লেতে তারা ছিল দুর্দান্ত। কিন্ত আজ তারা পাওয়ারপ্লেতে দুই উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছে মাত্র ৩২ রান।

    দিল্লির শক্তিশালী বোলিং অ্যাটাক ভালো জায়গায় বল করে হায়দরবাদকে সহজে রান তুলার সুযোগ দিচ্ছিলো না। উইলিয়ামসন এক পাশ আগলে রাখছিলেন, তবে রান রেটে উন্নতি হচ্ছিলো না তাদের। নবম ওভারে এরপর ১৫ রান এলে তাদের রানের চাকা কিছুটা গতি লাভ করে। ইনজুরিতে নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল করেই মাঠ ছাড়েন স্টোইনিস, বাকি পাঁচ বলে অশ্বিন রান দেন ১৩। তবে তাঁর শেষ বলে উইলিয়ামসন এজ করেছিলেন, উইকেটের পিছনে রিশাব পান্ট তা গ্লাভসবন্দী করতে পারেননি যদিও। উইলিয়ামসন পরের ওভারেও কাভারে থাকা পৃথ্বী শয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পেয়েছেন। আক্সার প্যাটেলের সে ওভারেই এরপর ডাউন দ্যা উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লং অফে হেটমায়ারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। হেটমায়ারের ক্যাচে ২৮ বলে তাঁর ১৮ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটেছে। 

    ১০ ওভারে ৬১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল সানরাইজার্স। সে চাপটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন পরের ওভারেই রাবাদা এসে মানিশ পান্ডেকে লিডিং এজে কট এন্ড বোল্ডে ফিরিয়ে দিয়ে। ১৭ রানে পান্ডে আউট হওয়ার পর কেদার যাদব এসেও ভুগছিলেন। ৮ বলে ৩ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে নরকিয়ার বলে ফিরে গেলে লড়াই করার মতো পুজি গড়ার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো হোল্ডার ও সামাদের উপর। হোল্ডার ৯ বলে ১০ রান করে আক্সারের বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। সামাদকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন রশিদ খান। আভেশের ফ্রি হিটে ছক্কা মেরেছেন সামাদ, রাবাদের বলে সোজা বোলারের মাথার উপর দিয়ে মেরেছেন চার। তবে ২১ বলে ২৮ রান করে তিনিও ফিরে গেছেন রাবাদার বলে টপ এজে। রশিদ খান ভাগ্যের সহায়তায় এজে ছক্কা-চার পেয়েছেন, শেষমেশ ইনিংসের শেষ ওভারে ১৯ বলে ২২ রান করে হয়েছেন রান আউট। 

    নরকিয়ার পেসে হাবুডুবু খেয়েছে হায়দরাবাদ, ১২ রানে নিয়েছেন ২। আক্সারও সমান সংখ্যক উইকেট নিয়েছেন ২১ রানে। রাবাদা কিছুটা খরুচে হলেও ৩৭ রানে শিকার করেছেন ৩টি উইকেট। আভেশ খান ও অশ্বিন উইকেট না পেলেও ছিলেন ইকোনমিকাল। দিল্লির ডিসিপ্লিন্ড বোলিংয়ে সানরাইজার্স তাই ২০ ওভারে থেমে গেছে ১৩৪ রানেই। দিল্লির দারুণ ব্যাটিং লাইনআপের জন্য এ লক্ষ্য তাড়া ছিল সময়েরই ব্যাপার। ৮ উইকেটের জয়ে দিল্লি পেয়েছে লক্ষ্য তাড়ায় দুবাইয়ে তাদের প্রথম জয়। যে জয়ে তারা পৌছে গেছে টেবিলের সবার উপরে। হায়দরবাদ যেখানে ছিল সেখানেই আছে, সবার নিচে।