মুম্বাই জুজু কাটিয়ে সাকিববিহীন কলকাতার দাপুটে জয়
গ্রুপ পর্ব, আবু ধাবি (টস- কলকাতা/ বোলিং)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ১৫৫/৬, ২০ ওভার (ডি কক ৫৫, রোহিত ৩৩, পোলার্ড ২১, ফার্গুসন ২/২৭, কৃষ্ণ ২/৪৩, নারাইন ১/২০)
কলকাতা নাইটরাইডারস ১৫৯/৩, ১৫.১ ওভার (ত্রিপাঠি ৭৪* , আইয়ার ৫৫, বুমরাহ ৩/৪২ )
কলকাতা নাইটরাইডারস ৭ উইকেটে জয়ী
টানা চার ম্যাচ মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কাছে হারের পর অবশেষে তাদের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল কলকাতা নাইট রাইডারস। কুইন্টন ডি কক ও রোহিত শর্মার দুর্দান্ত ৭৮ রানের ওপেনিং জুটির পরেও বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৫৫ রানে মুম্বাইকে আটকে দেয় কলকাতা। জবাবে রাহুল ত্রিপাঠির ৪২ বলে ৭৪* ও ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ৫৫ রানে ভর করে মুম্বাইকে উড়িয়ে দিয়ে ৭ উইকেটের জয় পেয়েছে সাকিববিহীন কলকাতা।
১৫৬ রানের লক্ষ্যে কলকাতার শুরুটা হয় ঝড়ো। পাওয়ারপ্লের ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে দারুণ পিঞ্চ হিটিংয়ের প্রদর্শনীর দেখা মেলে মাত্র দ্বিতীয় আইপিএল ম্যাচ খেলতে নামা ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ব্যাট থেকে। দুই কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও অ্যাডাম মিলনের প্রথম দুই ওভারেই আসে ১৫ করে। তৃতীয় ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহ আক্রমণে এলে তাকেও চার দিয়ে স্বাগত জানান শুবমন গিল ও আইয়ার। দ্রুতই ঘুরে দাঁড়িয়ে গিলকে অবশ্য ওভারের শেষ বলে ফেরান বুমরাহ, অফ কাটার স্টাম্পে ডেকে এনে ৯ বলে ১৩ রান করে ফেরেন গিল। অপর প্রান্তে ঝড় তোলা আইয়ার অবশ্য তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। উইকেটে নবাগত রাহুল ত্রিপাঠির সাথে মারমুখি ব্যাটিংয়ের ধারা বজায় রেখে পাওয়ারপ্লেতে তারা তোলেন ৬৩ রান, যা এই মৌসুমে তাদের সর্বোচ্চ।
ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার প্রত্যয়ে নামা নাইটরাইডারসদের পাওয়ারপ্লের পরেও খেলার ধরনে আসেনি কোনও পরিবর্তন। শুধু আক্রমণের মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবার ত্রিপাঠি। স্পিনারদের ওপর চড়াও হয়ে মাঠের প্রায় সবদিকেই খেলেন দারুণ শব শট। অপর প্রান্তে থাকা আইয়ার আগের ম্যাচে লক্ষ্য ছোট হওয়ায় অভিষেকে ফিফটিটা পাননি। তবে এদিন সুযোগ পেয়ে মাত্র ২৫ বলে পূর্ণ করেন তার ফিফটি, যা যেকোনও কলকাতা ব্যাটসম্যানের জন্য মুম্বাইয়ের বিপক্ষে দ্রুততম ফিফটি। ফিফটির দিকে ছুটতে থাকা ত্রিপাঠি অবশ্য ফিরতে পারতেন রাহুল চাহারের ঐ ওভারেই। তবে আকাশে ভাসানো সেই ক্যাচ পিছে দৌড়িয়ে চাহার নিজেই লুফে নিতে না পারলে সেই যাত্রায় বেঁচে যান ত্রিপাঠি। বুমরাহর করা পরের ওভারের প্রথম বলেই অবশ্য ফিফটি পেয়ে যান তিনি, সেটাও অবশ্য জীবন পেয়েই বলা যায়। বুমরাহর ওয়াইড ইয়র্কারে র্যাম্প শট খেলতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড ম্যানের মাথার ওপর দিয়ে বল চলে যাওয়ার ২৯ বলে ফিফটি পেয়ে যান ত্রিপাঠি। ঐ ওভারেই বুমরাহর বলে অবশ্য থামতে হয় আইয়ারকে, ফেরার আগে মাত্র ৩০ বলে ৫৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের ভূমিকাটা যথার্থই পালন করেন আইয়ার। এরপর অধিনায়ক অইন মরগানকেও বুমরাহ নিজের শেষ ওভারে ফেরালেও ৭৪ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ৭ উইকেটের জয় এনে দিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন ত্রিপাঠি।
উইকেটে বোলারদের জন্য বিশেষ সহায়তা না থাকলেও আগের ম্যাচের মন্ত্র অনুসরণ করে শিশিরের কথা মাথায় রেখে টসে জিতে অধিনায়ক মরগান বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। নিয়মিত ওপেনার কুইন্টন ডি ককের সাথে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ফেরায় বড় সংগ্রহের দিকেই নজর ছিল মুম্বাইয়ের। প্রথম দুই ওভারেই দুই অফ স্পিনারকে দেখে খেললেও তৃতীয় ওভারে সুনিল নারাইন আক্রমণে এলে আক্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুই ওপেনার। লকি ফার্গুসনের করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বল ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে অভাবনীয় এক মাইলফলক স্পর্শ করেন রোহিত। শুধু কলকাতার বিপক্ষেই ১০০০ রান পূর্ণ হয় তার, যা আইপিএল ইতিহাসে যেকোনো দলের বিপক্ষে যেকোনো একজন ব্যাটসম্যানের জন্য প্রথম। পাওয়ারপ্লেতে তাই কোনও উইকেট না হারিয়ে মুম্বাই তোলে ৫৬ রান।
পাওয়ারপ্লের পরের দুই ওভারেই নারাইন-বরুন মিলে অবশ্য দেন মাত্র ৭ রান। পরের ওভারে রাসেল আক্রমণে এলে ডি ককের দুই চারে ১৪ রান এলেও অপর প্রান্তে থাকা রোহিত বাউন্ডারির খোঁজে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠেন। সেই অস্থিরতা থেকেই নারাইনের পরের ওভারে বসে মাঠছাড়া করতে গেলে গুড লেংথের সেই বলে সংযোগ না হওয়ায় লং অনে গিলের সহজ ক্যাচের শিকার হয়ে রোহিত ফেরেন ৩০ বলে ৩৩ রান করে। টি-টোয়েন্টিতে এই নিয়ে ৯ম বারে মত নারাইনের শিকার হলেন রোহিত। ছুটতে থাকা মুম্বাইয়ের লাগাম টেনে ধরে ঐ স্পিন জুটিই। ফিল্ডিং অনুযায়ী উইকেট বরাবর বলে করে হাত খোলার কোনও জায়গায় দেননি এই দুজন। ১১ রান দিয়ে শুরু করা নারাইন চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে দেন মাত্র ২০ রান, সাথে রোহিতের মূল্যবান উইকেট।
সূর্যকুমার যাদবও শট খেলার পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১০ বলে মাত্র ৫ রান করে। ভাল বোলিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলা ডি ককেরও ঝড়ো শুরু করার পরে ফিফটি পেতে এরপর লেগে যায় ৩৭ বল। ব্যাটে বলে করতে বেগ পাওয়া ডি কক ১৫তম ওভারে কৃষ্ণর অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার টেনে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৪২ বলে ৫৫ রান করে। দারুণ বোলিংয়ে পাওয়ারপ্লের পরের ৯ ওভারে ঐ ৩ উইকেট তুলে কলকাতার বোলাররা দেয় মাত্র ৪৯ রান।
বড় সংগ্রহের ভিত পেয়েও রানের জন্য ধুঁকতে থাকা মুম্বাইয়ের জন্য গিয়ার পালটানো তাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল সময়ের দাবী। সেটা করতে গিয়েই ফার্গুসনের বাউন্সারে ব্যাট চালিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ১৪ রানে ফেরেন ইশান কিষাণ। ফার্গুসনের ঐ ওভারে মাত্র ২ রান এলেও পরের ওভারে কৃষ্ণের অপর চড়াও কাইরন পোলার্ড নেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১৮ রান। সৌরভ তিওয়ারির ব্যাট থেকে শেষ বলে চার এলেও শেষ ওভারে পোলার্ডের রান আউট ও ক্রুনালের উইকেটের বিনিময়ে মাত্র ৬ রান দেন অবশ্য ফার্গুসন। দারুণ শুরুর পরেও মুম্বাই তাই গিয়ে থামে ১৫৫ রানে। দারুণ ব্যাটিংয়ে পরে অনায়াসেই সেই লক্ষ্য তাড়া করে জয় পায় কলকাতা।