লো-স্কোরিং ম্যাচে হাই-ভোল্টেজ উত্তেজনার জয়ে টিকে রইল পাঞ্জাব
গ্রুপ পর্ব, শারজাহ (টস- হায়দরাবাদ/ বোলিং)
পাঞ্জাব কিংস ১২৫/৭, ২০ ওভার (মার্করাম ২৭, রাহুল ২১, হোল্ডার ৩/১৯)
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১২০/৭, ২০ ওভার (হোল্ডার ৪৭, সাহা ৩১, বিশ্নয় ৩/২৪)
পাঞ্জাব কিংস ৫ রানে জয়ী
শারজাহর পিচে সাধারণত রানবন্যাই দেখা যায়। কিন্ত আজ ব্যাটসম্যানদের সেখানে রানের জন্য রীতিমতো হ্যাপিতোশই করতে হয়েছে। আরব আমিরাতের সবচেয়ে বেশি স্কোরিং গ্রাউন্ড শারজাহয় পাঞ্জাব আটকে গেছে ১২৫ রানেই। শারজাহর আজকের ধীরগতির টার্নিং পিচে তা তাড়া করা সহজসাধ্য বিষয় নয়, খেলা তাই গেছে একেবারে শেষ বল পর্যন্ত। এত কাছে যেতেও অবশ্য পেরেছে হোল্ডারের ২৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংসের বদৌলতে। বোলিংয়েও এই ক্যারিবিয়ান ১৯ রানে পেয়েছেন তিন উইকেট। তবে যে ম্যাচে তিনি তাঁর আইপিএলের সর্বোচ্চ স্কোরের পাশাপাশি সেরা বোলিং ফিগারের দেখা পেলেন, সে ম্যাচে তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরবাদ হেরে গেছে ৫ রানে।
১২৬ রানের লক্ষ্য সহজ মনে হলেও শারজাহর আজকের পিচে তা করতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে তা অনুমেয়ই ছিল। শামির প্রথম ওভারেই বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে ওয়ার্নার, তাঁর বদলে অধিনায়কত্ব পাওয়া উইলিয়ামসনও শামির পরের ওভারে বলে ইনসাইড এজে স্টাম্পে বল এনে ১ রানে ফিরে গেলে সেটা আরও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। পাওয়ারপ্লেতেই দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া হায়দরবাদ প্রথম ছয় ওভারে এনেছে ২০ রান। আইপিএলের ইতিহাসে পাওয়ারপ্লেতে যা হায়দরবাদের সর্বনিম্ন স্কোর।
হায়দরবাদের উইকেটে টিকে থাকাটাই প্রয়োজন ছিল তখন। পাওয়ারপ্লের পরের পাঁচ ওভারে হায়দরবাদ উইকেট হারায়নি একটির বেশি, ২১ বলে ১৩ রানে বিশ্নয়ইয়ের গুগলি মিস করে বোল্ড হয়েছেন পান্ডে। তবে সেসময়ে তাদের রান এসেছে ২৭। এগারো ওভার শেষে আস্কিং রেট তাই পৌছে গিয়েছিল আটের উপরে। ব্রারের পরের ওভারে ৯ রান এনে তা কিছুটা কমিয়ে আনলেও এরপর বিশ্নয়র এক ওভারে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই যায় হায়দরাবাদ। বিশ্নয়ের গুগলিতে থার্ড ম্যান দিয়ে বল ঠেলে দেওয়ার প্রচেস্টায় ইনসাইড এজে ১২ বলে ১২ রানে বোল্ড হয়েছেন কেদার যাদব, সামাদ এসে গুগলিতে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন শর্ট থার্ডম্যানে গেইলের হাতে। তখনও এক পাশে ছিলেন ওপেনিংয়ে নামা সাহা। হোল্ডার এসেই এরপর ম্যাচের চেহারা বদলে দেন।
৬ ওভারে লাগত ৬২ রান, হোল্ডারের তিন ছয়ের সৌজন্যে ২ ওভারে ২৭ আসলে খেলা চলে আসে ২৪ বলে ৩৫ রানের সমীকরণে। ততক্ষণে ৩৭ বলে ৩১ রানে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে সাহা। ১৭তম ওভারে রশিদও আউট হয়ে যান, যা করার তা ছিল তাই হোল্ডারের উপরই। শেষের চার ওভারের মধ্যে দুই ওভার করেন আর্শদিপ, দুর্দান্ত কাটারের প্রদর্শনীতে তিনি তাতে দেন মাত্র ৯ রান। তাঁর কিপটে দুই ওভারের মাঝখানে শামি এক ওভারে দেন ৯ রান দিলে শেষ ওভারে হায়দরবাদের প্রয়োজন হয় ১৭ রানের।
নিজের প্রথম দুই ওভারে ৬ রান দেওয়ার পর তৃতীয় ওভারে ১৬ রান দেওয়া এলিসের হাতেই বল তুলে দেন অধিনায়ক রাহুল। প্রথম বলে ভুবনেশ্বর সিঙ্গেল নিলে নন-স্ট্রাইকে থাকা হোল্ডার আসেন স্ট্রাইকে। এলিস বল ছুড়েন, হোল্ডার অপেক্ষা করেন, তাঁর স্লোয়ার পড়তে পেরে পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারির বাইরে। পরের দুই বল ডট দিলে হায়দরাবাদের লাগে শেষ দুই বলে ১০ রান। ওয়াইডের পর ডাবলে শেষ বলে টাই করতে প্রয়োজন হয় ছক্কার। হোল্ডার পারেন না, নিজের আইপিএল অভিষেকেই ভীষণ চাপেও তাঁর ঝুলিতে থাকা ভিন্ন ভ্যারিয়েশন কাজে লাগিয়ে পাঞ্জাবের জয় নিশ্চিত করেন এলিস।
টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। সান্দিপ শর্মাকে গেল ম্যাচে পাওয়াপ্লেতে উইলিয়ামসন না আনলেও আজকে শুরু করেছেন তাকে দিয়েই। সান্দিপ সুইং পাচ্ছিলেন শুরু থেকেই, লেংথে ফেলে ভেতরে ঢুকিয়েছেন বল। সান্দিপের সাথে অপর প্রান্তে ভুবনেশ্বরও দুদিকেই বল সুইং করিয়ে পাঞ্জাবের দুই ওপেনারকে শান্ত রাখছিলেন। রাহুল ও আগারওয়ালও বেশ মন্থর পিচের কারণে ঝুকি নেওয়ার সাহস করছিলেন না। দেখেশুনে খেলার চেষ্টায় তারা ৪ ওভারে আনতে পারে ২৬ রান। তাতে অবশ্য দুটি এজে পাওয়া চারেরও আছে অবদান। প্রথম চার ওভারে তিন চারের আরেকটি দারুণভাবে ভুবনেশ্বরের লেংথ বলে চিকি মেরে ফাইন লেগের উপর দিয়ে এসেছে রাহুলের ব্যাট থেকে। পঞ্চম ওভারেই এসেই পাঞ্জাবের ইনিংসে গোলমাল বেধে যায়। একই ওভারেই তারা হারিয়ে ফেলে দুই ওপেনারকে। দুজনেই ধরা খান ইনফিল্ড ক্লিয়ার করতে গিয়ে, স্টাম্প বরাবর হোল্ডারের ফুল লেংথের বলে ২১ বলে ২১ রানে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন রাহুল, ৬ বলে ৫ রান করে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আগারওয়াল। পরের ওভারে এসে সান্দিপ শর্মা ১ রান দিলে পাওয়ারপ্লে শেষে পাঞ্জাবের রান হয় ২৯। যা শারজাহয় আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।
দ্বিতীয় উইকেটে গেইলের সঙ্গে মার্করাম যোগ দিয়ে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করেছেন। আইপিএলের আগেই শ্রীলঙ্কায় এমন স্লো এন্ড টার্নিং পিচের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে মার্করামের। বড় শটের চেষ্টায় না গিয়ে তাই মার্করাম সতর্কতার সাথেই খেলেছেন। কিন্ত শুরুতেই অবশ্য জীবন পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কাভার থেকে পেছন ছুটে গিয়ে ওয়ার্নার ক্যাচ ফেলেছেন যখন, মার্করামের রান তখন ৩। এরপর এই দক্ষিণ আফ্রিকান আরও ২৪ রান যোগ করে আউট হয়ে গেছেন দলীয় ৮৮ রানে। তাঁর আগে রশিদের লেগ ব্রেক পড়তে না পেরে গেইল ফিরেছেন ১৪ রান, পুরানও ফিরে গেছেন ৮ রানেই। ১২তম ওভারে পোরানের ব্যাটে এসেছিল ইনিংসের প্রথম ছয়। মিড উইকেট দিয়ে সান্দিপের গুড লেংথের বলে ছয় হাঁকানোর পরের বলেই স্লোয়ারে দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে আউট হয়েছেন পোরান। সান্দিপ শর্মা সে ওভারে ১০ রান দিয়ে তাঁর বোলিং শেষ করেছেন ৪ ওভারে ২০ রানে।
১৫তম ওভারে সামাদের উপর চড়াও হতে গিয়ে ফুল টসে লং অফে ক্যাচ দিয়ে মার্করাম ফেরার পর পরের ওভারে আউট হয়ে গেছেন হুদা। হাফ ভলিতে আরেকটি উইকেট পেয়ে যান হোল্ডার। কাভার ক্লিয়ার করতে গিয়ে সুচিতের এক হাতে নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়েছেন তিনি। ব্রারের ১৮ ও এলিসের ১২ রানে শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাব কিংস তাদের ইনিংস শেষ করতে পেরেছে ১২৫ রানে। যে রানে হায়দরবাদকে চেপে ধরে তারা দুই পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে। যে জয়ে তারা এখনো টিকে রইলো প্লেঅফের দৌড়ে, জমিয়ে রাখলো নাটক। অন্যদিকে হায়দরবাদের জন্য বাকি ম্যাচগুলো এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতার।