জাদেজার শেষের জাদুর পর শেষ ওভারে কেকেআরকে হারাল চেন্নাই
গ্রুপ পর্ব, আবু ধাবি (টস- কলকাতা/ ব্যাটিং)
কলকাতা নাইট রাইডারস ১৭১/৬, ২০ ওভার (ত্রিপাঠি ৪৫, রানা ৩৭*, কার্তিক ২৬, শার্দুল ২/২০, হেজলউড ২/৪০, জাদেজা ১/২১)
চেন্নাই সুপারকিংস ১৭২/৮, ২০ ওভার (ডু প্লেসি ৪৪, গায়কোয়াড় ৪০, জাদেজা ২২, নারাইন ৩/৪১, বরুন ১/২২, রাসেল ১/২৮)
চেন্নাই ২ উইকেটে জয়ী
ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলানো ম্যাচে স্নায়ুর লড়াইয়ে কলকাতা নাইট রাইডারসের বিপক্ষে ২ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে শেষ হাসি হেসেছে চেন্নাই সুপারকিংস। রাহুল ত্রিপাঠির ৪৫ রানের পরে দিনেশ কার্তিক-নিতিশ রানার শেষদিকের ১৮ বলে ৪১ রানের ঝড়ে চেন্নাইকে ১৭২ রানের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল কলকাতা। জবাবে রুতুরাজ গায়কোয়াড়-ফাফ ডু প্লেসির ৭৪ রানের উদ্বোধনী জুটির পরেও মাঝের ওভারগুলোতে খেই হারিয়ে বসা চেন্নাইকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করে ৮ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলে রবীন্দ্র জাদেজা ফিরে যান শেষ বলের আগের বলে। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ বলে এক রান নিয়ে সাকিববিহীন কলকাতার চেষ্টা ব্যর্থ করে চেন্নাইকে অবশেষে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন দীপক চাহার।
১৭২ রানের জবাবে চেন্নাইয়ের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। দারুণ ফর্মে থাকা রুতুরাজ গায়কোয়াড়-ফাফ ডু প্লেসি জুটি এদিনও চেন্নাইকে এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। প্রথম দুই ওভারে ৯ রান নিলেও এরপর থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই ওপেনার। সুনিল নারাইনের দুই ওভার থেকে ২৫ রান নিয়ে দুজন মিলে পাওয়ারপ্লেতে তুলে ফেলেন ৬৩ রান।
ছুটতে থাকা গায়কোয়াড়কে আক্রমণে এসেই ফেরান আন্দ্রে রাসেল। ছয় দিয়ে রাসেলকে স্বাগত জানালেও পরের বলেই লেগে ঠেলে দিতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে মরগানের ক্যাচের শিকার হয়ে তিনি ফেরেন ২৮ বলে ৪০ রান করে। চল্লিশ পেরুতেই আর কিছুক্ষণ পরে ফেরেন ডু প্লেসিও। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর বাউন্সার মাঠছাড়া করতে গেলে ডিপ পয়েন্টে থাকা লকি ফার্গুসনের হাতে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে ডু প্লেসি ফেরেন ৩০ বলে ৪৪ রান করে। দ্রুতই দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে কলকাতা আরও চেপে বসে রায়ুডুকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে। নারাইনের বলে চার মারার পরের বলেই আবারও বেরিয়ে এসে শট খেলতে গেলে পুরোপুরি মিস করে ৯ রানেই বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। পাওয়ারপ্লের পরের ১০ ওভারে ৬৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে কলকাতা।
তারই ধারাবাহিকতায় গিয়ার পাল্টানোর সুযোগ খুঁজতে থাকা মইন আলিকে ফেরান ফার্গুসন। বাউন্সার মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে আইয়ারের ক্যাচের শিকার হয়ে তিনি ফেরেন ২৮ বলে ৩২ রান করে। পরের ওভারে চেন্নাইয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই যায় চেন্নাই। ডাবলের খোঁজে রান আউট হয়ে সুরেশ রায়না ফিরলে এক বল পরেই বরুন চক্রবর্তীকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে চেন্নাইয়ের মুঠো থেকে যখন ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছিল কলকাতা ঠিক তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভাব হয় রবীন্দ্র জাদেজার। কৃষ্ণর করা ১৯তম ওভারে দুই ছয় দুই চারে তিনি নেন ২২ রান। শেষ ওভারে ৪ রান প্রয়োজন হলে চেন্নাইয়ের জয় অবধারিত বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু শেষের আগে হার মানতে নারাজ কলকাতার হয়ে আবারও ম্যাচের মোড় পালটে দিয়ে প্রথম বলেই স্যাম কারানকে ফেরান নারাইন। পরের বলে ডট দিয়ে বসলেও এরপর শার্দুল ঠাকুর তিন রান নেন। ৩ বলে যখন ১ রান প্রয়োজন তখন আবারও ম্যাচ জমিয়ে দিয়ে পঞ্চম বলে ৮ বলে ২২ রান করা জাদেজাকেও ফেরান নারাইন। শেষ বলে ১ রান প্রয়োজন হলে দীপক চাহার মাথা ঠাণ্ডা রেখে দলকে জয় এনে দেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে হলুদ শিবির সেই সাথে হতাশা নিয়েই ফিরতে হয় কলকাতাকে।
টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পরে ভাল-মন্দর মিশেলে শুরু হয় কলকাতার ইনিংস। দীপক চাহারের করা প্রথম ওভারেই দুই চার দিয়ে শুরু করে ঐ ওভারের শেষ বলে ফিরে যান শুবমন গিল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আইয়ার ও ত্রিপাঠি এরপর শক্ত হাতেই কলকাতার ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। পাওয়ারপ্লের সদ্ব্যবহার করে প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি তুলে নিতে থাকা কলকাতার ছন্দ পতন হয় পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে শার্দুল ঠাকুর আক্রমণে এলে। ওভারের প্রথম বলেই ১৮ রানে থাকা আইয়ারকে ফেরানোর পর তিনি দেন উইকেট মেইডেন। তা সত্ত্বেও দুই উইকেটের বিনিময়ে পাওয়ারপ্লেতে কলকাতা তোলে ৫০ রান।
ভালো শুরুর পরেও অবশ্য আরও একবার সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়ে হেজলউডের করা নবম ওভারের প্রথম বলেই ১৪ বলে মাত্র ৮ রান করে ফিরে যান এদিন চারে নামা মরগান। উইকেটে নবাগত রানার সাথে এরপর কিছুটা ধীরগতিতেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ত্রিপাঠি। ত্রিপাঠি যে মারমুখি হতে চাচ্ছেন সেটা আঁচ করেই ধোনি সিদ্ধান্ত নেন জাদেজাকে বল করিয়ে যাওয়ার। সেই চাপেই জাদেজার শেষ ওভারে বাউন্ডারির খোঁজে অদ্ভুতুড়ে শট খেলতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফেরেন ৩৩ বলে ৪৫ রান করে। মাঝের ওভারগুলোয় দারুণ বল করা জাদেজার চাপে কিছুটা খেই হারিয়ে পাওয়ারপ্লের পরের ৮ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে ৫৪ রান তোলে কলকাতা।
এরপরেই স্যাম কারানের করা ১৫তম ওভারে দুই চার এক ছয়ে ১৪ রান নেন রাসেল। ভালো শুরু করেও দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ১৫ বলে ২০ রান করে ফিরতে হয় রাসেলকে, শিকারি আবারও এদিন অসাধারণ বল করা শার্দুল। তাতে অবশ্য খুব একটা লাভ হয়নি। স্যাম কারানের ওপর বিশেষভাবে চড়াও হয়েছিল কলকাতা। পুরো ম্যাচের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তার করা ১৯তম ওভারে দুই চার এক ছয়ে কার্তিক-রানা জুটি নেয় ১৯ রান, কারান তার কোটা পূর্ণ করে গোনেন ৫৬ রান। হেজলউডের করা শেষ ওভারে কার্তিক-রানার ঝড় থামলেও ২৭ বলে ৩৭ রানে অপরাজিত থেকে রানা কলকাতাকে নিয়ে যান ১৭১ রানে। প্রতি মুহূর্তে রঙ পাল্টানো ম্যাচে অবশেষে শেষ বলে গিয়ে সেই রান টপকে গিয়েছে চেন্নাই।