কোহলি-ম্যাক্সওয়েলের পর প্যাটেল-চাহালে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুর ডাবল
গ্রুপ পর্ব, দুবাই (টস- মুম্বাই/ বোলিং)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরু ১৬৫/৬, ২০ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ৫৬, কোহলি ৫১, বুমরাহ ৩/৩৬, বোল্ট ১/১৭)
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ১১১/১০, ১৮.১ ওভার (রোহিত ৪৩, ডি কক ২৪, হার্শাল ৪/১৭ , চাহাল ৩/১১, ম্যাক্সওয়েল ২-২৩)
বেঙ্গালুরু ৫৪ রানে জয়ী
হার্শালের কাছে আরও একবার ধরাশায়ী মুম্বাই। আগের দেখায় পাঁচ উইকেট নিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছিলেন মুম্বাইকে। এবার হ্যাটট্রিকসহ তাঁর চার উইকেটের দুজন হার্দিক ও পোলার্ড। তার সাথে চাহাল-ম্যাক্সওয়েলের বোলিংয়ের সৌজন্যেই উইকেটবিহীন দুর্দান্ত পাওয়ারপ্লে শেষেও বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোরের দেখা পেয়েছে মুম্বাই। কোহলির ৫১ রানের ইনিংসের পর ম্যাক্সওয়েলের ঝড়ো ৫৬ রানের ইনিংসে মুম্বাইকে তারা দিতে পেরেছিল ১৬৬ রানের লক্ষ্য। মুম্বাই থেমে গেছে এর ৫৪ রান আগেই। ১১১ রানে অলআউট হয়ে শীর্ষ চারে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা মুম্বাই এখন তাই টেবিলের সপ্তম স্থানে।
দুদলের ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল প্রায় একইভাবেই। তবে ১৬৬ রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভারে উইকেটশূন্য থেকেই মুম্বাই এনেছে ১০ রান। এরপর তৃতীয় ওভারেই জেমিসনের পরপর তিন বলে তিন চার মেরে গিয়ার পাল্টান রোহিত শর্মা। সিরাজের পরের ওভারেও আসে দুটি চার। পঞ্চম ওভারে ক্রিশ্চিয়ানকে বোলিংয়ে আনলে ডি ককও দেখান নিজের আক্রমণাত্বক রুপ। সে ওভারে ১৫ রান আনলে মুম্বাই পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়। এরপর হার্শাল এসে তাদের রানের চাকার গতি কমিয়ে দেন কিছুটা, পাঁচ রানে তিনি ওভার শেষ করলে মুম্বাই পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৫৬ রানে।
ভালো পাওয়ারপ্লের শেষেই মুম্বাইয়ের মন্দের শুরু। উইকেটসহ চাহাল ওভার শেষ করেন ২ রানে। ২৪ রানে স্কোয়ার লেগে ডি কক ক্যাচ দেন ম্যাক্সওয়েলের হাতে। পরের ওভারে বোলিংয়ে ম্যাক্সওয়েল এসে প্রথম পাঁচ বলে পাঁচ দিয়ে শেষ বলে রোহিতের কাছে ছক্কা খেয়ে যান। কিন্ত এরপর এক প্রান্তে তিনি বল করেই গেছেন, পরের তিন ওভারে রান দিয়েছেন ৪ করে। বোলিং কোটা শেষ করেছেন ২৩ রানে, এনে দিয়েছেন রোহিত ও ক্রুনালের গুরুত্বপুর্ণ উইকেট। তাঁর সাথে অপর প্রান্তে চাহাল বল করে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়েছেন কিষাণকে, তিন ওভার করে রান দিয়েছেন মাত্র ১১। পাওয়ারপ্লের পরের আট ওভারে ৫.১২ রান রেটে মুম্বাই আনতে পেরেছে মোটে ৪১ রান। উইকেট হারিয়েছে চারটি।
ডি ককের পর ছন্দে থাকা রোহিতও ম্যাক্সওয়েলের বলে লং অনে ধরা খেয়েছেন ২৮ বলে ৪৩ রানে, ভুগতে থাকা ক্রুনাল ১১ বলে ৫ রানে বোল্ড হয়েছেন। তার আগে চাহালের বলে স্পিনের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে পয়েন্টে হার্শালের হাতে খাড়া ক্যাচ তুলে দিয়েছেন ১২ বলে ৯ রান করা কিষাণ। এরপর সেই হার্শাল এসে এক ওভারেই সব তছনছ করে দিয়েছেন। সে ওভারের আগে সিরাজ দুর্দান্ত স্লোয়ারে ফাঁদে ফেলে সুর্যকুমারকে ফেরালে ম্যাচের দায়িত্ব চলে যায় হার্দিক-পোলার্ডের জুটির উপর। ১৭তম ওভারে এসে হার্দিককে স্লোয়ারে ক্যাচ তুলিয়ে, পরের বলে পোলার্ডের লেগ স্টাম্প ভেঙ্গে খেল খতম করে দেন হার্শাল। নিজের দায়িত্ব পালন করে এরপর যা ছিল, তা শুধুই হার্শালের পাওয়ার! দুর্দান্ত স্লোয়ারে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে চাহারকে আউট করে হার্শাল পেয়ে যান হ্যাটট্রিক। মুম্বাইয়ের ইনিংসও শেষ করে দিয়েছেন এরপর নিজের শেষ ওভারে এসে। চার উইকেট নিয়ে মোট ২১ শিকার বানিয়ে পার্পল ক্যাপ নিশ্চিতের পথেই এগুলেন আরেকটু।
হার্শালের অধিনায়ক বিরাট কোহলি এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু করেছেন বেশ আগ্রাসী মনোভাবেই। দ্বিতীয় বলেই ফ্লিকে ছক্কা হাঁকালেও তাতে যদিও ছিল কিছুটা ভাগ্যের ছোয়া। স্কোয়ার লেগে থাকা চাহার লাফ দিয়ে পারেননি হাতের মুঠোয় বল বন্দী করতে। বোল্টের সাত রানের প্রথম ওভার শেষে উইকেটের সন্ধানে বুমরাহকে দ্বিতীয় ওভারেই আনেন রোহিত। বুমরাহ এসেই শূন্য রানেই পাড়িক্কালকে ফিরিয়ে দেন ডি ককের ক্যাচ বানিয়ে। তবে উইকেট হারালেও বিচলিত হননি কোহলি ও ক্রিজে নতুন আসা ভারাত। চতুর্থ ওভারে বুমরাহর ওভার থেকে তারা নিয়েছেন ১৬ রান। বুমরাহর বাউন্সারে পুল করে ছক্কা মেরে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিরাট কোহলি পুর্ণ করেছেন টি-টোয়েন্টিতে দশ হাজার রান। সে রানটুকু আরও বাড়িয়েছেন পঞ্চম ওভারে আসা মিলনের ওভারে চার-ছক্কা মেরে।
পাঁচ ওভার শেষে ৪৪ রান তুলে ফেলা বেঙ্গালুরুর রানের চাকার গতি কিছুটা কমান এরপর ক্রুনাল এসে ৩ রান দিয়ে। তবে অপর প্রান্তে থাকা নিশ্চুপ ভারাত পরের ওভারে স্লগ সুইপে মারেন ছয়, রাহুলের ১০ রানের সে ওভারেই তারা ২৯ বলে পঞ্চাশের জুটি পূর্ণ করে ফেলে। দুই ডানহাতিকে চুপ রাখছিলেন ক্রুনাল, ৮ম ওভারে এসে দেন ৫ রান। তবে অপর প্রান্তে বল করা রাহুলের ওভার থেকে তারা পরের ওভারে আনেন ১২ রান। কিন্ত, সে ওভারেই ভারাতের উইকেট হারিয়ে ফেলে বেঙ্গালুরু, স্লগ সুইপে ছয় মেরে পরের বলে ইনসাইড আউট শটে গ্যাপ খুঁজে নিতে পারেননি ভারাত। ২৪ বলে ৩২ রানে তিনি আউট হলে ভাঙ্গে তাদের ৬৮ রানের জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটের পর ম্যাক্সওয়েল এসে তান্ডব চালানোর দায়িত্ব নেন। পরের উইকেটে ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান খ্যাত ডি ভিলিয়ার্স আসার আগেই যেন তিনি নিজের চতুর্দিকে খেলার সক্ষমতার ঝলক দেখিয়েছেন। রাহুল-ক্রুনালের স্পিন, মিলনের পেস- কিছুই বাদ দেননি। গ্রিপ না বদলেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের পজিশনে গিয়ে সুইচ হিটে কিংবা রিভার্স হিটে মেরেছেন ছক্কা-চার। অবশ্য তিনি ব্যর্থই ঠেকেছেন বোল্টের বলে, ১৫তম ওভারে কিউই এই পেসারের পাঁচ বলে তিনি নিতে পেরেছেন মাত্র ১ রান। সে ওভারেই সিঙ্গেল নিয়ে কোহলি পঞ্চাশের ঘরে পৌছেছেন। ৪০ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার আগের ১৭ বলে অবশ্য তিনি করেছিলেন মাত্রই ১৭ রান। পরে মিলনের স্লোয়ারে ডাউন দ্যা ট্র্যাকে এসে বলকে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে খাড়া ক্যাচ তুলে ফেরার পথে ইনিংস বড় করতে না পারার ক্ষোভের প্রকাশই দেখিয়েছেন।
ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ডি ভিলিয়ার্স যোগ দিয়ে এরপর শুরু করেন তুলকালাম। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বুমরাহর সৌজন্যে। ১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন দুজনকেই। লো ফুলটসে ৩৭ বলে ৫৬ রানে লং অনে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার পরের বলেই বুমরাহর বাউন্সারে ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ গেছে কিপারের হাতে। ইনিংসের শেষ ওভারে বোল্টও দিয়েছেন ৩ রান। শেষ দুই ওভারে তাই এসেছে মাত্র ৯ রান, তবে এর আগের দুই ওভারে বুমরাহ ও মিলনের দুই ওভার মিলে এসেছিল ৩০ রান। ইয়র্কার মিস করে ভিলিয়ার্সের হাতে ছয় খেয়েছেন বুমরাহ, বাউন্সারে বোলারের মাথার উপর দিয়ে মেরেছেন ‘ভিলিয়ার্স স্পেশাল’ চার। ম্যাক্সওয়েলও তাঁর ‘বিশেষত্ব’ দেখিয়েছেন মিলনেকে বাঁহাতি বনে চার-ছয় মেরে। এরপর বোলিংয়েও দেখিয়েছেন তাঁর ঝলক। তবে দিনটা যেমন ম্যাক্সওয়েলের, তেমন হার্শাল-চাহাল-কোহলিরও, তাই বলা যায় দিনটা আদতে বেঙ্গালুরুরই। দলগত পারফর্ম্যান্সের বদৌলতেই যে তারা ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এখন পৌছে গেছে টেবিলের তৃতীয় স্থানে।