দিল্লিকে হারিয়ে প্লে অফের আরও কাছে নারাইন-ফার্গুসনদের কলকাতা
গ্রুপ পর্ব, শারজাহ (টস- কলকাতা/ বোলিং)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১২৭/৯, ২০ ওভার (স্মিথ ৩৯, পান্ট ২৯, ধাওয়ান ২৪, ফার্গুসন ২/১০, নারাইন ২/১৮, আইয়ার ২/২৯)
কলকাতা নাইট রাইডারস ১৩০/৭, ১৮.২ ওভার (রানা ৩৬*, গিল ৩০, নারাইন ২১, আভেশ ৩/১৩, আশ্বিন ১/১৫, নরকিয়া ১/১৫ )
কলকাতা ৩ উইকেটে জয়ী
বোলারদের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়ছে কলকাতা নাইট রাইডারস। লকি ফার্গুসন, সুনিল নারাইন ও ভেঙ্কটেশ আইয়ারের জোড়া উইকেটে শারজাহতে মাত্র ১২৭ রানে দিল্লিকে বেঁধে ফেলেছিল কেকেআর। এরপর শুবমন গিলের সময়োপযোগী ৩০ রানের পর নারাইনের ঝড়ো ২১ ও নিতিশ রানার ঠাণ্ডা মাথার ৩৬* রানে ৩ উইকেটের জয় পেয়েছে কলকাতা।
শারজাহতে ১২৮ রানের লক্ষ্য মামুলিই হওয়ার কথা। সাকিবহীন কলকাতার শুরুটা অবশ্য হয় কিছুটা সাবধানী। দুই স্পিনার অক্ষর পাটেল ও রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে সামলানোর পর আক্রমণে আরেক স্পিনার ললিত যাদব এলে ১৪ রানে ফিরতে হয় ফর্মে থাকা ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে। তবে উইকেটে এসেই প্রথম বলেই ম্যাচের প্রথম ছয় মারেন রাহুল ত্রিপাঠি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আভেশ খান আক্রমণে এলে অবশ্য ত্রিপাঠি থেমে যান ৯ রানেই। ঐ দুই উইকেট হারিয়ে পাওয়ারপ্লেতে কলকাতা তোলে ৪৪ রান।
নিতিশ রানকে সঙ্গী করে শুবমন গিল অবশ্য ধীরেসুস্থে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। তবে বল হাতে নিয়ে দারুণ এক ওভার করেন কাগিসো রাবাদা। ৩০ রানে থাকা গিলকে ফেরানোর পর তিনি নেন উইকেট মেইডেন। তারই ধারাবাহিকতায় রানের খাতা খোলার আগেই অইন মরগানকে ফেরান আশ্বিন। মরগানের দুঃস্বপ্নের অবসান তাই হয়নি এদিনও।
চেপে বসা দিল্লির আক্রমণের স্রোতের বিপরীতে ললিতের করা ১৪তম ওভারে রানা ও দীনেশ কার্তিক মিলে নেন ২০ রান। আভেশের পরের ওভারে স্টাম্পে বল ডেকে এনে ১২ রানে কার্তিক ফিরলেও আরেক প্রান্ত আগলে রাখেন রানা। উইকেটে এসেই নারাইন ঝড় তুলে তার কাজটাও সহজ হয়ে যায়। রাবাদার করা পরের ওভারে আসে ২১ রান যার ২০ রানই আসে নারাইনের ব্যাট থেকে। নরকিয়া আক্রমণে এসে ফেরান নারাইনকে। তবে ১০ বলে ২১ করে ততক্ষণে তার কাজ সেরে ফেলেছেন তিনি। আভেশ খানের তৃতীয় শিকার হয়ে টিম সাউদি ফিরলেও তুলির শেষ আঁচড়টা দেন রানা চার মেরে। কলকাতাও পায় ৩ উইকেটে জয়।
তার আগে শিখর ধাওয়ানের নতুন ওপেনিং সঙ্গী স্টিভ স্মিথের সাথে শুরুটা হয়েছিল রয়েসয়েই। প্রতি ওভারেই বাউন্ডারির দেখা পেলেও ডটের সংখ্যাও ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। তার জন্যই বোধহয় লকি ফার্গুসনের করা পঞ্চম ওভারের শেষ বল বেশ বাইরে থাকলেও তা তাড়া করতে গিয়ে কাভার পয়েন্টে ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ক্যাচের শিকার হয়ে ২০ বলে ২৪ রান করে ফেরেন ধাওয়ান। আর কোনও উইকেট না হারিয়ে পাওয়ারপ্লেতে দিল্লি তোলে ৩৯ রান।
পাওয়ারপ্লের পরের ওভারে আক্রমণে এসেই স্রেয়াশ আইয়ারকে ফেরান সুনিল নারাইন। দুই স্পিনার মিলে এরপর চেপে বসলে নবম ওভারে বরুন চক্রবর্তীকে দুটি চার মেরে হাত খোলেন স্মিথ। টানা কয়েক ওভার স্পিনের পর ফার্গুসন আক্রমণে আসলেই থামতে হয় স্মিথকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনে স্মিথ ফেরেন ৩৪ বলে ৩৯ রান করে। উইকেটে দুই নতুন ব্যাটসম্যানকে পেয়ে চেপে বসেন মাঝের ওভারগুলোতে দুর্দান্ত বল করা নারাইন ও আইয়ার, দ্রুতই এরপর ফেরান শিমরন হেটমায়ার, ললিত যাদব ও অক্ষর পাটেলকে।
অন্য প্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিলের মাঝে আরেক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অধিনায়ক ঋশভ পান্ট। তবে এদিন ছিলেন একেবারেই স্বভাববিরুদ্ধ। কলকাতার কোনও বোলারই তাকে হাত খোলার কোনও সুযোগ দেননি। শেষ ওভারে দুই রানের খোঁজে রান আউট হয়ে ফিরলেও ৩৬ বলে এদিন তিনি করেছেন ৩৯ রান। টিম সাউদির করা ঐ ওভারে দিল্লি হারিয়েছে ৩ উইকেট। ওভারের প্রথম বলে সাউদি আশ্বিনকে ফেরালে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়। এরপরেই পান্ট সহ আভেশ খানও রান আউটের শিকার হয়ে ফিরলে দিল্লি গিয়ে থামে ১২৭ রানে। কলকাতার বোলাররা কতটা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন তার প্রমাণ একটিই পরিসংখ্যান- আইপিএলে এই প্রথম শারজাহতে কোনও দল একটিও ছয় মারতে ব্যর্থ হয়। লক্ষ্য তাড়ায় মাঝে একটু পথ হারালেও সেই লক্ষ্য পরে কলকাতা পেরিয়ে গেছে ৩ উইকেট হাতে রেখেই।