হায়দ্রাবাদকে হারিয়ে প্লেঅফ নিশ্চিত করল চেন্নাই
গ্রুপ পর্ব, শারজাহ (টস- চেন্নাই/ বোলিং)
সানরাইজারস হায়দ্রাবাদ ১৩৪/৭, ২০ ওভার (সাহা ৪৪, অভিষেক ১৮, সামাদ ১৮, হেজলউড ৩/২৪, ব্রাভো ২/১৭, জাদেজা ১/১৪)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৩৯/৪, ১৯.৩ ওভার (গায়কোয়াড় ৪৫, ডূ প্লেসি ৪১, রায়ুডু ১৭*, হোল্ডার ৩/২৭, রশিদ ১/২৭)
চেন্নাই ৬ উইকেটে জয়ী
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ও শেষে থাকা দলের লড়াইয়ের ফলাফল হল প্রত্যাশিতই। ঋদ্ধিমান সাহার ৪৬ বলে ৪৪ রানের সাথে অভিষেক শর্মা, আব্দুল সামাদ ও রশিদ খান দশোর্ধ ইনিংস খেললেও জশ হেজলউডের ৩ ও ডোয়াইন ব্রাভোর ২ উইকেটে ১৩৪ পর্যন্ত যেতে পেরেছিল সানরাইজারস হায়দ্রাবাদ। রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের ৪৫ ও ডু প্লেসির ৪১ রানের পর জেসন হোল্ডারের ৩ উইকেটে মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেললেও মহেন্দ্র সিং ধোনি-আম্বাতি রায়ুডুর ৩১* রানের জুটিতে শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে চেন্নাই। সেই সাথে প্রথম দল হিসেবে প্লেঅফে পা রেখেছে তারা।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা চেন্নাইয়ের ওপেনিং জুটির উইকেটের মন্থরতার কোনও বালাই ছিল না। মরা পিচেও যেন জীবন ফিরে এসেছিল এই দুজনের ব্যাটিংয়ে। শুরুটা রয়েসয়ে করলেও ভুবনেশ্বর কুমারের করা চতুর্থ ওভারে দুই ছয়ে ১৫ রান তোলে এই জুটি। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে রশিদ খান আক্রমণে এলে তাকে বিশাল এক ছয় মারার পরে বলেই সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হন গায়কোয়াড়। রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে গেলে বিনা উইকেটেই পাওয়ারপ্লেতে ৪৭ রান তুলে ফেলে চেন্নাই।
উইকেট বুঝে দারুণ খেলতে থাকা রুতুরাজকে এরপর অবশ্য থামতে হয় জেসন হোল্ডারের কাছে। আচমকা বাউন্সারে সংযোগটা ঠিকঠাক না হওয়ায় মিড অফে থাকা কেন উইলিয়ামসনের কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৩৮ বলে ৪৫ রান করে। উইকেটে এসে মইন আলিও যোগ্য সঙ্গই দিয়ে যাচ্ছিলেন অপর প্রান্তে থাকা ডু প্লেসিকে। তবে মইন থামেন অদ্ভুতুড়ে ভঙ্গিমায়। রশিদের কিছুটা খাটো লেন্থের বল টেনে মারতে গেলে সেই বল ব্যাটের কানায় লেগে লাগে তার গায়ে। এরপর বল কোথায় গিয়েছিলো সেটা ঠাহর করে ওঠার আগেই বল গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে বেল ভেঙে দিলে তিনি ফিরেন ১৭ রান করে।
মইনের ফেরাতেই ম্যাচে জীবন ফিরে আসে। এর আগের কয়েক ওভারে রান রেট কমিয়ে এনেছিলেন হায়দ্রাবাদ বোলাররা। তার সাথে মইনের পতনকে কাজে লাগিয়ে হোল্ডার পরের ওভারেই ফেরান উইকেটে নবাগত সুরেশ রায়নাকে। এক বল পরেই ফেরান ডু প্লেসিকেও। হোল্ডারের ধীরগতির বাউন্সারে দিক্বিদিকশূন্য শট খেলে সিদ্ধার্থ কৌলের ক্যাচে ডু প্লেসি ফেরেন ৩৬ বলে ৪১ রান করে। চেপে বসা হায়দ্রাবাদের সব আশা ভেস্তে দিয়ে অবশ্য ভুবনেশ্বর কুমারের করা ১৯তম ওভারে মহেন্দ্র সিং ধোনি আর আম্বাতি রায়ুডু মিলে নেন ১৩ রান। ম্যাচ তাই শেষ ওভারে গড়ালেও ৬ উইকেটের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন ধোনিরা। চেন্নাই ভক্তদের আনন্দ দ্বিগুণ করে চিরচেনা ছয় দিয়ে তুলির শেষ আঁচড়টা দিয়েছেন সেই ধোনিই।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামলে হায়দ্রাবাদের শুরুটা হয় সাবধানী, প্রথম দুই ওভারে আসে ৫ রান। দীপক চাহারের করা তৃতীয় ওভারে সাহা দুই ছয়ে ১৪ রান নিলে পরের ওভারে রয়ও মারমুখী হতে গিলে হেজলউডের বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। শারজাহর মন্থর উইকেট বুঝে খেলে এরপর অবশ্য আর কোনও বিপদ ঘটতে না দিয়ে অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে নিয়ে সাহা পাওয়ারপ্লেতে হায়দ্রাবাদকে পৌঁছে দেন ৪১ রানে।
পাওয়ারপ্লের পরের ওভারে আক্রমণে এসেই উইলিয়ামসনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান ব্রাভো। সেখান থেকে খেই হারিয়ে ফেলে হায়দ্রাবাদ, পাওয়ারপ্লের পরের ৬ ওভারে তুলতে পারে ৩১ রান। এর মাঝে প্রিয়াম গার্গকেও ফেরান ব্রাভো। বাউন্ডারির খোঁজে হাতড়ে মরা হায়দ্রাবাদের গেরো খুলতে গিয়ে ফিরতে হয় উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া সাহাকেও। জাদেজার বল টেনে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ওপরে উঠে গেলে ধোনি সহজেই তা লুফে নেন, সাহা ফেরেন ৪৬ বলে ৪৪ রান করে।
ধুঁকতে থাকা হায়দ্রাবাদকে ৮ ওভার পরে বাউন্ডারি এনে দেন অভিষেক শর্মা। আব্দুল সামাদের সাথে জুটি বেঁধে চেষ্টা করেছিলেন রানের চাকা সচল করার। তবে এদিন পিচের মন্থরতার দারুণ ব্যবহার করে সেসব পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় চেন্নাই বোলাররা। চাহার, শার্দুল ছাড়া সবাই ছিলেন হিসেবী। ব্রাভো-হেজলউডের মিডিয়াম পেস জুটি মাঝের ওভারগুলোতে বেশ ভুগিয়েছে। সেই স্পেলের সুফল হেজলউড পান তার শেষ ওভারে। আগের বলেই দুর্দান্ত এক ছয় মারার পরে আবারও তাকে মাঠছাড়া করতে গেলে লং অনে ডু প্লেসিকে ক্যাচ দিয়ে ১৩ বলে ১৮ রান করে ফেরেন অভিষেক। এক বল পরেই সেই ১৮ রানে ফেরেন সামাদও। হেজলউড তার কোটা পূর্ণ করেন আইপিএলে তার সেরা স্পেল দিয়ে।
এদিন অন্যদের তুলনায় কিছুটা খরুচে হলেও ১৯তম ওভারে জেসন হোল্ডারকে ফিরিয়েছিলেন শার্দুল। অন্য প্রান্তে থাকা রশিদ অবশ্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। ১৩ বলে ১৭ রানে অপরাজিত থেকে হায়দ্রাবাদকে নিয়ে গিয়েছিলেন ১৩৪ রানে। ম্যাচ শেষ ওভারে গড়ালেও আরও একদিন চেন্নাইয়ের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটির কল্যাণে অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছিল সেই লক্ষ্য তাড়া। গাণিতিক সম্ভাবনা থাকলেও প্লেঅফের দৌড় থেকে এই হারে তাই আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটকে গিয়েছে হায়দ্রাবাদ।