• নেশনস কাপ
  • " />

     

    ইতালির অপরাজিত যাত্রা থামিয়ে নেশনস লিগের ফাইনালে স্পেন

    ইতালির অপরাজিত যাত্রা থামিয়ে নেশনস লিগের ফাইনালে স্পেন    

    সবচেয়ে বেশি টানা অপরাজিত থাকার রেকর্ডটার মালিক বর্তমানে ইতালি, এর আগে ব্রাজিলের সাথে সেটি যৌথভাবে ছিল স্পেনেরও। তবে স্প্যানিশদের মনে এর চাইতে বড় ক্ষত তারা করে দিয়েছে ইউরো থেকে স্পেনকে বিদায় করে দিয়ে। আরেকটি সেমিফাইনালেই এবার দুদলের মুখোমুখি হওয়া ম্যাচে এক প্রথমার্ধেই হলো কত কিছু! তবে সবকিছু ছাড়িয়ে গুরুত্বপুর্ণ খবর- প্রথমার্ধ শেষে স্পেন ছিল দুই গোলে এগিয়ে। এবং তার চেয়েও বড় খবর- ফেরান তোরেসের দুই গোলের পর পেলেগ্রিনির এক গোলে ম্যাচ শেষ হয়েছে ২-১ স্কোরলাইনেই। আর স্পেনের এ জয়েই যে ইতালির ৩৭ ম্যাচে অপরাজিত যাত্রার সমাপ্তি ঘটালো, সেই সাথে স্পেন পৌছে গেলো নেশনস লিগের ফাইনালে।

    ম্যাচের শুরু থেকেই স্পেনের বাঁ প্রান্তের আক্রমণ ইতালির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। শেষমেশ প্রথম যে গোলটা এসেছে, সেটিও ওই প্রান্তের আক্রমণ থেকেই। ইতালির রাইট ব্যাক ডি লরেঞ্জো উপরে উঠে গিয়েছিলেন, ফাঁকা জায়গার সেই সুযোগ নিয়েছেন অয়ারজাবাল। আলোনসো পাস দিয়েছেন আয়ারজাবালকে, সেন্টার ব্যাক বনুচ্চি এসেছেন তার দিকে, কিন্ত অয়ারজাবালের দুর্দান্ত ক্রস ঠেকানোর সাধ্য ছিল না তার। তবে সেই ক্রস থেকেও দুর্দান্ত ছিল তোরেসের ফিনিশিং। আয়ারজাবালের ক্রসে শূন্যে থাকা বলে পা লাগিয়ে তিনি মূহুর্তেই বল জালে পাঠিয়ে দিলে ১৭ মিনিটেই এগিয়ে যায় স্পেন। 

    অবশ্য ম্যাচের প্রথম গোলটা পেতে পারতো ইতালিই। লং রেঞ্জ থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন কিয়েসা, সেটি দারুণ ডাইভে সেভ দিয়েছেন স্পেন গোলরক্ষক সিমন। আরেকবার স্পেনকে বাঁচিয়েছেন তিনি বার্নাদেস্কির এক শট সেভ দিয়ে। তবে ইনসিনিয়ে যে দুই সুযোগ পেয়েছিলেন, সেগুলোতে ঠিকঠাক ফিনিশিং করতে পারলে উনাই সিমোনের বেশি কিছু করার থাকতো না। বাঁ পাশ থেকে এমারসনের বাড়ানো দারুণ বলে ইনসিনিয়ে বলতে গেলে ফাঁকাই ছিলেন, আরেকবার ফ্রি কিক থেকে পাওয়া বল পেলে তার আর গোলের মধ্যে বলতে গেলে কেউই ছিল না। সিমোনকে পরাস্ত করার কাজটাই তার শুধু বাকি ছিল। কিন্ত দুবারই তিনি শট রাখতে পারেননি অন টার্গেটেই। ইতালির তাই সমতায় ফেরাটা হচ্ছিলো না। উল্টো প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের শেষের দিকে আরেকটি গোল খেয়ে বসে তারা। 

    সেবারও ক্রসটা এসেছিলো অয়ারজাবালের পা থেকেই, সেবারও তা খুঁজে নিয়েছে ফেরান তোরেসকে। তোরেস লাফিয়ে উঠে যেটিতে মাথা লাগিয়ে বিপদটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন ইতালির জন্যে। এর আগেই যে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাদের অধিনায়ক বনুচ্চিকে। রেফারির এক সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়ে পেয়েছিলেন হলুদ কার্ড, ৪২ মিনিটে হেড নিতে গিয়ে বুস্কেটসের মুখে তার কনুইয়ের ধাক্কা লাগলে আরেকটি হলুদ কার্ড দেখিয়ে রেফারি তাকে মাঠ ছাড়া করেন। 

    দশজনের ইতালির উপর দ্বিতীয়ার্ধে আরও চেপে বসে এনরিকের স্পেন। প্রথমার্ধের শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই মানচিনি তার দলে আনেন বেশ কয়েকটা পরিবর্তন। এরপর ম্যাচে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে তারা গোলের চেষ্টা করেই গেছে। কিয়েসা ভালো একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, শটটাও নিয়েছিলেন বেশ জোরালো, কিন্ত দুর্ভাগ্য, পোষ্টে লেগে সেটি ফিরে আসে। এরপর শেষমেশ তারা কাঙ্খিত গোলের দেখা পেয়েছে সেই কিয়েসার হাত ধরেই। স্পেনের কর্নার ক্লিয়ার হওয়ার পর স্প্যানিশ ডিফেন্ডার পাও তোরেসের ভুলে তার থেকে বল দখলে নিয়ে এগুতে থাকেন কিয়েসা। মাঝমাঠ থেকে এগিয়ে গিয়ে এরপর ডি বক্সে সিমোনোর সামনে যেতেই বল বাড়িয়ে দেন ডানে পেলেগ্রিনির দিকে। ফাঁকা জালে বল পাঠিয়ে দিয়ে পেলেগ্রিনি ইতালির আশা জাগিয়ে তুলেন। 

    ততক্ষণে যদিও পেরিয়ে গেছে ৮৩ মিনিট। সে গোলের পর উজ্জীবিত ইতালি প্রাণপণে চেষ্টা করে গেলেও গোলের দেখা পায়নি আর। ম্যাচের স্কোরলাইনে তারপরেও পরিবর্তন আসতে পারতো। ইয়েরেমির ক্রসে অয়ারজাবাল হেডটা রাখতে পারেননি টার্গেটে। আরেকবার দুর্দান্ত স্কিলের প্রদর্শনী দেখিয়ে ইয়েরেমি কয়েকজনকে কাটিয়ে গিয়ে ডান পাশ থেকে অসাধারণ এক বল বাড়িয়েছিলেন। আলোনসোর ভালো শটটা সেভ দিয়ে এরপর ইতালিকে ম্যাচ থেকে একেবারে ছিটকে যেতে দেননি ডোনারুমা। 

    শেষ পর্যন্ত দশজনের ইতালি লড়ে গেলেও পারেনি। প্রায় তিন বছর ধরে চলে আসা ইতালির অপরাজিত যাত্রাটাকেও থামতে হলো তাই। ম্যাচের আগে যেমন এনরিকে বলেছিলেন, এ যাত্রাকে থামতে তো হবে একদিন না একদিন। সে দায়িত্বটা নিয়ে নিলেন তিনিই! ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর ইতালি পেল প্রথম হারের স্বাদ। আর টানা ৩৭ ম্যাচে অপরাজেয় থাকার পর মিলানের সান সিরোতে সেই হারে তারা নিজেদের ঘরের মাটিতেই হওয়া ফাইনালে বনে গেল দর্শক!