রুতুরাজ-উথাপ্পার পর ধোনির বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে ফাইনালে চেন্নাই
১ম কোয়ালিফায়ার, দুবাই (টস- চেন্নাই/ বোলিং)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৭২/৫, ২০ ওভার (শ ৬০, পান্ট ৫১, হেটমায়ার ৩৭, হেজলউড ২/২৯, জাদেজা ১/২৩, মইন ১/২৭)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৭৩/৬, ১৯.৪ ওভার (রুতুরাজ ৭০, উথাপ্পা ৬৩, ধোনি ১৮*, টম কারান ৩/২৯, নরকিয়া ১/৩১, আভেশ ১/৪৭)
ফলাফল: চেন্নাই ৪ উইকেটে জয়ী
আরও একবার ফাইনালে চেন্নাই, আরও একবার ম্যাচজয়ী শট এলো সেই মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাট থেকেই। পৃথ্বী শর ৬০ রানের পর দিল্লি অধিনায়ক ঋশাভ পান্ট ও শিমরন হেটমায়ারের ৮৩ রানের জুটিতে চেন্নাইয়ের সামনে ১৭৩ রানের লক্ষ্য দাঁড় করালে রবিন উথাপ্পার ৬৩ ও রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের ৭০ রানে জয়ের দিকেই ছুটছিল চেন্নাই। টম কারানের ৩ উইকেটে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে এলেও আরও একবার চেন্নাইয়ের ত্রাণকর্তার ভুমিকায় আবির্ভূত হয়ে ৬ বলে ১৮* রানের দারুণ ক্যামিও খেলে চেন্নাইকে ধোনি পৌঁছিয়ে দিয়েছেন নিজেদের ৯ম আইপিএল ফাইনালে।
১৭৩ রানের লক্ষ্যে প্রথম ওভারে আনরিখ নরকিয়ার বলে স্টাম্প খুইয়ে ফিরে যান চেন্নাইয়ের এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফাফ ডু প্লেসি। রানের মাঝে না থাকলেও এদিনও সুরেশ রায়নার জায়গায় রবিন উথাপ্পাকেই দলে রেখেছিল চেন্নাই, নামলেনও তিনেই। নেমেই দারুণ কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন যে দিনটি তার হতে যাচ্ছে। আভেশ খানের করা পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে উথাপ্পা দুই ছয় দুই চারে ২০ রান নিলে পাওয়ারপ্লে শেষ চেন্নাই তোলে ৫৯ রান।
উথাপ্পার মারমুখী ব্যাটিংয়ে দারুণ ফর্মে থাকা রুতুরাজ গায়কোয়াড়ও তাই উইকেটে থিতু হওয়ার সময় পান। উথাপ্পাও নিজের ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৩৫ বলে। ফিফটি করার পরে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান খেলে শুধু বাউন্ডারি বের করার দিকেই মন দেন উথাপ্পা। টম কারানের বল মাঠছাড়া করতে গেলে ডিপ মিড উইকেটে স্রেয়াশ আইয়ারের ঠাণ্ডা মাথার ক্যাচে ৪৪ বলে ৬৩ রান করে থামেন উথাপ্পা। বিস্ময়করভাবে এরপর শার্দুল ঠাকুর উইকেটে এলে কারানের ঐ ওভারে প্রথম বলেই মাঠছাড়া করতে গিয়ে আইয়ারের কাচেই ফিরে যান তিনি। এরপরের ওভারেই ডাবল নিতে গিয়ে সেই আইয়ারেরই দারুণ থ্রোর বদৌলতে রান আউট হয়ে ফেরেন আম্বাতি রায়ুডু।
মাত্র ৭ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে রান তাড়ায় চেন্নাই পথ হারিয়ে বসলেও এরই মাঝে ৩৭ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড়। উইকেটে এসে অবশ্য মইন আলী সুবিধা করতে পারছিলেন না বলে গায়কোয়াড় মেরে খেলার দায়িত্ব নিতে গিয়ে আভেশের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই অক্ষরের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ৫০ বলে ৭০ করে থামেন। দারুণভাবে দিল্লি ম্যাচে ফিরলেও তখনও যে ব্যাটিংয়ের তালিকায় ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম। পড়তি ফর্ম তার, তবে এসব পরিস্থিতিতে কত ম্যাচ বের করে এনেছেন তার তো ইয়ত্তা নেই। আভেশের পঞ্চম বলে ছয় মেরে যেন বলে রাখলেন ম্যাচ জিতে তবেই ফিরবেন আজ তিনি। শেষ ওভার টম কারান করতে এসে প্রথম বলেই ফেরান স্বদেশী মইনকে। ৫ বলে তখন ১৩ রান প্রয়োজন হলেও প্রান্ত বদল করে স্ট্রাইকে ততক্ষণে ধোনি। এদিন দারুণ বল করা কারানের স্লোয়ার পড়ে এরপর তিন চারে দুই বল হাতে রেখে দলকে ঠিকই এনে দেন জয়। ৬ষ্ঠ বারের মত তাড়া করতে নেমে লক্ষ্যতাড়ায় এই মৌসুমে নিজেদের শতভাগ জয়ের রেকর্ড বজায় রেখে ধোনির ঠাণ্ডা মাথার ক্যামিওতে চেন্নাই চলে যায় ফাইনালে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হলে দিল্লি বিপদে পড়তে পারত শুরুতেই। তবে বেশ কয়েকবার ব্যাটের কানায় লেগেও বেঁচে যান পৃথ্বী শ, বাউন্ডারিও পান। ভাগ্য অবশ্য সহায় হয়নি আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানের। জশ হেজলউডের বলে উইকেটের পিছে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৭ রানেই। ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়ে অপর প্রান্তে অবশ্য ততক্ষণে তান্ডব শুরু করে দিয়েছিলেন শ, এর মধ্যে আরও একবার ধোনি কঠিন সুযোগ লুফে নিতে না পারায় বেঁচে যান শ। তবে বাঁচতে পারেননি উইকেটে আসা আইয়ার, ১ রান করেই হেজলউডের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। পাওয়ারপ্লে শেষে ঐ দুই উইকেট হারিয়ে দিল্লি তাই তোলে ৫১ রান।
এর কিছুক্ষণ পরেই রবীন্দ্র জাদেজাকে কাট করে চার মেরে ২৭ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন শ। এদিন চারে নামা অক্ষর এর পরপরই ফিরে যান মইন আলীর শিকার হয়ে। পরের ওভারেই জাদেজার বলে তুলে মারলে ডু প্লেসির ক্যাচে শেষ হয় শর ৩৪ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস।
দারুণ শুরু করা দিল্লি সেখানে হঠাৎই পথ হারিয়ে ফেলে। উইকেটে এসে তাই ঋশাভ পান্ট ও শিমরন হেটমায়ার দুজনেই সময় নেন। শার্দুলের করা ১৬তম ওভারে পান্টের এক হাতের ছয়ের পর ১৪ রান এলে সেখান থেকেই দুজনেই গিয়ার পাল্টান। ডোয়াইন ব্রাভোর করা ১৯তম ওভারেও পান্ট ছয় দিয়ে শুরু করলে ঐ ওভারেই অবশ্য ছয় মারতে গিয়ে অপর প্রান্তে থাকা হেটমায়ার থামেন ২৪ বলে ৩৭ রান করে। ৫৬ বলে ৮৩ রানের জুটি ভাঙার পর ইনিংসের শেষ বলে ৩৫ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করে দিল্লিকে পান্ট নিয়ে যান ১৭২ রান পর্যন্ত। দুবাইয়ে এর আগে ৭ ম্যাচের ৭টিই রান তাড়া করে জেতার ধারা বজায় রেখে সেই চিরচেনা ধোনির ম্যাচজয়ী শটে সেই সংগ্রহ টপকে শেষমেশ ফাইনালে জায়গা করে নেয় চেন্নাই।