• আইপিএল ২০২১
  • " />

     

    সাকিবের ব্যাটেই কোহলিদের হারিয়ে ফাইনালের আরও কাছে কেকেআর

    সাকিবের ব্যাটেই কোহলিদের হারিয়ে ফাইনালের আরও কাছে কেকেআর    

    এলিমিনেটর, শারজাহ (টস- বেঙ্গালুরু/ ব্যাটিং)
    রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস বেঙ্গালুরু ১৩৮/৭, ২০ ওভার (কোহলি ৩৯, পাডিকাল ২১, ম্যাক্সওয়েল ১৫, নারাইন ৪/২১, ফার্গুসন ২/৩০, সাকিব ০/২৪)
    কলকাতা নাইট রাইডারস ১৩৯/৬, ১৯.৪ ওভার (গিল ২৯, নারাইন ২৬ ,আইয়ার ২৬, সাকিব ৯*, চেহেল ২/১৬, হারশাল ২/১৯, সিরাজ ২/১৯)
    ফলাফল: কলকাতা ৪ উইকেটে  জয়ী

     

    সুনিল নারাইনের অলরাউন্ড বীরত্বে ভিরাট কোহলির বেঙ্গালুরুকে বিদায় জানিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পা রাখল কলকাতা নাইট রাইডারস। ভিরাট কোহলি ও দেবদূত পাডিকালের দারুণ শুরুর পরে নারাইনের ২১ রানে ৪ উইকেটের স্পেলে ১৩৮ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বেঙ্গালুরু। সেই লক্ষ্যে টপ অর্ডারের তিনজন বিশোর্ধ ইনিংস খেলার পরে পার্থক্য গড়ে দেয় নারাইনের ১৫ বলে ২৬ রানের ক্যামিও। বোলিংয়ে উইকেট শূন্য থাকলেও মাত্র ২৪ রান দেওয়া স্পেলের পরে ৬ বলে ৯* রানের ইনিংস খেলে এরপর সাকিব আল হাসান কলকাতাকে এনে দেন চার উইকেটের জয়। বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক হিসেবে তাই কোহলির শেষ ম্যাচ হয়ে থাকল এটিই, আইপিএলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের অধিনায়ক হিসেবে প্রাপ্তির ঝুলি তাই থেকে গেল শূন্যই।  

    ১৩৯ রানের লক্ষ্যে কলকাতার দুই ওপেনার শুরু করেন রয়েসয়েই। জর্জ গারটনের করা চতুর্থ ওভারে শুবমন গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার মিলে ১৫ রান তুলে হাত খোলার ইঙ্গিত দেন। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ভিরাট কোহলি তাই তার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীকে আক্রমণে আনার সিদ্ধান্ত দেন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে দারুণ স্লোয়ারে বিভ্রান্ত করে এবি ডি ভিলিয়ার্সের ক্যাচে ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংসের পর শুবমন গিলকে ফেরান হারশাল পাটেল। পাওয়ারপ্লেতে ঐএক উইকেট হারিয়ে কলকাতা তোলে ৪৮ রান।

    পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই যুজবেন্দ্র চেহেলের শিকার হয়ে ফেরেন রাহুল ত্রিপাঠি। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে এরপর শাহবাজ আহমেদ ক্যাচ লুফে নিতে পারলে ফিরতে পারতেন আরেক ওপেনার আইয়ার। তার পরের ওভারেই অবশ্য উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ৩০ বলে ২৬ করে ফেরেন আইয়ার, শিকারি আবারও সেই হারশাল। এই উইকেট দিয়েই এক মৌসুমে ডোয়াইন ব্রাভোর এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩২ উইকেটের রেকর্ডে ভাগ বসান তিনি। চেহেল ও হারশাল চেপে বসে ম্যাচে ফেরায় বেঙ্গালুরুকে। কিন্তু বল হাতে একবার বেঙ্গালুরুর কাছ থেকে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে আসার পর ব্যাটিংয়ে নেমেও বেঙ্গালুরুর সব প্রচেষ্টা এক ওভারেই ভেস্তে দেন নারাইন। উইকেটে এসেই ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে মারেন টানা তিন ছয়। নিতিশ রানের সাথে জুটি বেঁধে ঐ ওভারে নারাইন তোলে ২২ রান।

    বেঙ্গালুরুর জন্য ম্যাচ সেখানেই কার্যতই শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে হাল ছাড়েননি চেহেল-হারশাল জুটি। নিজের শেষ ওভারে মাত্র দুই রান গুনে চেহেল ফেরান ২৫ বলে ২৩ রান করা রানাকে। এক ওভার পরেই হারশালেরও আইপিএল রেকর্ডটা হয়ে যেতে পারত। তবে অনেকটুকু দৌড়েও নারাইনের ক্যাচ পাডিকাল তালুবন্দি করতে না পারলে তা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। মাত্র ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেটের স্পেলে নিজের সর্বোচ্চটাই দিয়েছিলেন এদিনও। অবশ্য পরের ওভারেই মোহাম্মদ সিরাজের বলে স্টাম্প খুইয়ে ১৫ বলে ২৬ রান করে থামেন নারাইন। হারার আগেই হাল ছাড়তে নারাজ সিরাজ ঐ ওভারেই উইকেটের পিছে ক্যাচে ফেরান দিনেশ কার্তিককেও, যা ছিল তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১০০তম ও আইপিএলে ৫০তম উইকেট। এরপরে ম্যাচ শেষ ওভারে গড়ালেও সাকিব আল হাসান দারুণ স্কুপে ক্রিশ্চিয়ানকে চার মেরে চাপের কোনও সুযোগই দেননি। ৬ বলে ৯ রানে অপরাজিত থেকে তুলির শেষ আঁচড় টেনে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছিয়ে দেন তিনিই। 

     

    এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে দেবদূত পাডিকালকে সঙ্গী করে ভিরাট কোহলি শুরুটা করেছিলেন দারুণ। ৫ ওভারেই দুজন মিলে ৪৯ রান তুলে ফেলার পর পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই লকি ফার্গুসন ফেরান পাডিকালকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ১৮ বলে ২১ রান করে পাডিকাল ফিরলে পাওয়ারপ্লে শেষে বেঙ্গালুরু তোলে ৫৩ রান।

    তবে এরপরেই ম্যাচের দৃশ্যপটে আসে পরিবর্তন। সাকিব আল হাসান ও বরুন চক্রবর্তী মিলে চেপে বসেন বেঙ্গালুরু ব্যাটসম্যানদের ওপরে। ৪ ওভারে কোনও বাউন্ডারি ছাড়া মাত্র ১৭ রান এলে সেই চাপেই সুনিল নারাইনের বলে হাত খুলতে গিয়ে আইয়ারের ক্যাচে ফিরে যান আগের ম্যাচের নায়ক শ্রীকার ভারত। উইকেট মন্থর হয়ে উঠতে থাকলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন নারাইন। গিয়ার পাল্টাতে মরিয়া কোহলি তাই তাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টার্নে পরাস্ত হয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফিরে যান ৩৩ বলে ৩৯ রান করে। দারুণ অফ স্পিনে এরপর এবি ডি ভিলিয়ার্সেরও স্টাম্প উপড়ে তাকে ১১ রানে ফেরান নারাইন। পাওয়ারপ্লের পরের ১০ ওভারে মাত্র ৬৮ রান এলে অপর প্রান্তে থাকা ম্যাক্সওয়েল হাত খোলার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। নারাইনের আগের দুই বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে নারাইনের বিচক্ষণতার কাছে হার মেরে কিছুটা যেন অস্থির হয়েই পরের বলে স্লগ সুইপ করতে যান। সংযোগ না হওয়ায় ফার্গুসনের কাছে ক্যাচ দিয়ে সেই নারাইনের কাছেই হার মেনে ফেরেন ১৫ রান করে।

    স্পিন-বীষে নীল করে নারাইন চার ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেওয়ার পরে শেষ দুই ওভারে ফার্গুসন ফেরান শাহবাজ আহমেদ ও শিভাম মাভি ফেরান ড্যান ক্রিশ্চিয়ানকে। অবশ্য শেষ দুই ওভারে ১৭ রান নিয়ে ক্রমশই মন্থর হয়ে আসা উইকেটে বেঙ্গালুরু শেষমেশ তোলে ১৩৮ রান। শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচে শেষমেশ নারাইনের অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সের কাছে নতি শিকার করেই  বিদায় নিতে হয় বেঙ্গালুরুকে। শিরোপা ছাড়াই তাই শেষ হয় কোহলির বেঙ্গালুরু অধিনায়কত্বের অধ্যায়।