অনেক নাটকের পর দিল্লিকে হারিয়ে ফাইনালে সাকিবদের কলকাতা
২য় কোয়ালিফায়ার, শারজাহ (টস- কলকাতা/ বোলিং)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৩৫/৫, ২০ ওভার (ধাওয়ান ৩৬, স্রেয়াশ ৩০*, শ ১৮, বরুন ২/২৬, ফার্গুসন ১/২৬, মাভি ১/২৭ সাকিব ০/২৮)
কলকাতা নাইট রাইডারস ১৩৬/৭, ১৯.৫ ওভার (ভেঙ্কটেশ ৫৫, গিল ৪৬, ত্রিপাঠি ১২*, রাবাদা ২/২৩, আশ্বিন ২/২৭, নরকিয়া ২/৩১)
ফলাফল: কলকাতা ৩ উইকেটে জয়ী
কলকাতার জয় যেখানে অবধারিত মনে হচ্ছিল ঠিক তখনই ১৮ ও ১৯তম ওভারে মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে ফিরে দিল্লি। শেষ ওভারে ৭ রান প্রয়োজন হলে রবিচন্দ্রন আশ্বিন আক্রমণে এসে যখন টানা দুই বলে সাকিব আল হাসান ও সুনিল নারাইনকে ফেরালেন, পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচের পাল্লা দিল্লির দিকে ভারী হয়ে যায়। তবে আরব আমিরাত অধ্যায়ে কলকাতার আশার প্রদীপ হয়ে থাকা রাহুল ত্রিপাঠি তখনও যে উইকেটে, হ্যাটট্রিক বলের তোয়াক্কা না করে শেষ দুই বলে প্রয়োজনীয় রান তুলে ফেললেন ঐ বলই মাঠছাড়া করে। ভারত অধ্যায়ে ৭ ম্যাচে মাত্র ২ জয় ছিল যেই কলকাতা নাইট রাইডারসের সেই তারাই অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্লেঅফ নিশ্চিত করে গ্রুপ পর্ব শেষে শীর্ষে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখল, দিল্লির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ভেস্তে দিয়ে নিজেদের গল্পটাতেই আরও একটি রোমাঞ্চকর অধ্যায় যুক্ত করল কলকাতা।
১৩৬ রানের লক্ষ্যে রানতাড়ার শুরুই হয় শুবমন গিলের দারুণ চার দিয়ে। এরপর আর ফিরে তাকাননি দুই ওপেনার। ভেঙ্কটেশ আইয়ার হাত খুলে খেলতে গিয়ে ২৩ রানে থাকার সময় রাবাদার বলে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন। তাতেও দুজন বিন্দুমাত্র বিচলিত না হওয়ায় পাওয়ারপ্লেতে তার তুলে ফেলেন ৫১ রান।
পাওয়ারপ্লেতে দ্রুতগতিতে রান তোলায় উইকেটের মূল্য বুঝে মাঝের ওভারগুলোতে রয়েসয়েই খেলেন দুজন। এরই মাঝে ৩৮ বলে এই মৌসুমে নিজের ৩য় ফিফটি তুলে নেন আইয়ার। পরের ওভারে ব্যাটের কানায় লেগে চার পেলেও পরের বলে থামেন ঐ রাবাদার কাছেই। খাটো লেংথের বলে সংযোগটা করেছিলেন দারুণ। তবে বল সরাসরি ডিপ স্কোয়ার লেগ বাউন্ডারির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা স্টিভ স্মিথের হাতে গেলে ৪১ বলে ৫৫ রান করে থামেন তিনি। ৯৬ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙার পর উইকেটে এসে শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলায় মন দিয়েছিলেন নিতিশ রানা। রবিচন্দ্রন আশ্বিনের বলে এক বার জীবন পেলেও আনরিখ নরকিয়ার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে হেটমায়ারের ক্যাচে রানা ফেরেন ১৩ রানে। পরের ওভারেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আভেশ খানের শিকার হয়ে সমান সংখ্যক বলে ৪৬ রান করে ফিরে যান গিল।
পরের ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই দীনেশ কার্তিকের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন রাবাদা। ঐ ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে ম্যাচে হঠাৎই প্রাণ সঞ্চার করেন রাবাদা। পরের ওভারে তার দক্ষিণ আফ্রিকান পেস সতীর্থ নরকিয়া মাত্র ৩ রান গুনে উপড়ে ফেলেন কলকাতা অধিনায়ক অইন মরগানের স্টাম্প। শেষ ওভারে কলকাতার জয়ের জন্য ৭ রান প্রয়োজন হলে আক্রমণে আসেন আশ্বিন। রানের খাতা খোলার আগেই ওভারের তৃতীয় বলে তার কাছে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। উইকেটে এসেই এরপরের বল মাঠছাড়া করতে গিয়ে ফেরেন সুনিল নারাইনও। তবে উইকেটে তখনও ছিলেন কলকাতার এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রাহুল ত্রিপাঠি। স্নায়ু ধরে রেখে আশ্বিনের মাথার অপর দিয়ে বল মাঠছাড়া করে সেই তিনিই দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।
এর আগে সাকিবের করা প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান নিতে পারলেও তার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ছয় মেরেই হাত খোলেন পৃথ্বী শ। ঐ ওভারে গিয়েই নিজের খেলা অষ্টম বলে রানের খাতা খোলেন আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ান। অপর প্রান্তে অবশ্য সপ্রতিভ শ থামেন বরুন চক্রবর্তী আক্রমণে এলেই, এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ১২ বলে ১৮ করে ফেরেন তিনি। পাওয়ারপ্লে শেষে ঐ এক উইকেট হারিয়ে দিল্লি তোলে ৩৮ রান।
পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই সাকিবের বলে ফিরতে পারতে ধাওয়ান। ধাওয়ানকে বেরিয়ে আসতে দেখেই লেগ স্টাম্পের বাইরে বল করেন সাকিব, তবে সেবার ঠিকঠাকভাবে বল কব্জা করতে পারেননি দীনেশ কার্তিক। সেবার বেঁচে যাওয়ার পরও অবশ্য গিয়ার পাল্টাতে পারেননি ধাওয়ান। উইকেটে আসা মার্কাস স্টোইনিসও রানের চাকা সচল করতে পারছিলেন না। সেই তাগিদ থেকেই জায়গা বানিয়ে শিভাম মাভিকে খেলতে গেলে স্টাম্পে বল ডেকে এনে তিনি ফেরেন ২৩ বলে ১৮ রান করে। এর এক ওভার পরেই বরুনের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাকিবের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে ৩৯ বলে ৩৬ রান করে থামেন ধাওয়ানও। বরুন চক্রবর্তীর দারুণ বোলিংয়ে মাঝের ওভারগুলোয় কোণঠাসা হয়ে পড়া দিল্লি ১৫ ওভার শেষে তোলে মাত্র ৯০ রান।
ধাওয়ান ফেরার পরের ওভারে লকি ফার্গুসনের শিকার হয়ে ঋশাভ পান্টও ফিরলে রানের গতি বাড়ানো দিল্লির জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ফার্গুসনের পরের ওভারে শিমরন হেটমায়ারের দুই ছয়ে ১৫ রান এলেও পরের ওভারে রান আউট হয়ে ১০ বলে ১৭ রান করে ফিরে যান তিনি। শেষ ওভারে স্রেয়াশ আইয়ারের চার-ছয়ে ১৫ রান এলে দিল্লি তাই পৌঁছাতে পারে ১৩৫ পর্যন্ত।
শেষ ওভারে গড়ানো শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৩ উইকেটের জয় দিয়ে শেষমেশ দুবাইয়ের ফাইনালে পৌঁছে যায় কলকাতাই। ১৫ অক্টোবর রাত ৮টায় সেই ২০১২ ফাইনালের পুনর্মঞ্চায়নে চেন্নাই সুপার কিংসের মুখোমুখি হবে তারা।