সাকিবদের হারিয়ে ধোনির চেন্নাইয়ের নতুন ইতিহাস
ফাইনাল, দুবাই (টস- কলকাতা/ বোলিং)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৯২/৩, ২০ ওভার (ডু প্লেসি ৮৬, মইন ৩৭*, গায়কোয়াড় ৩২, নারাইন ২/২৬, মাভি ১/৩২, সাকিব ০/৩৩)
কলকাতা নাইট রাইডারস ১৬৫/৯, ২০ ওভার ( গিল ৫১, ভেঙ্কটেশ ৫০, মাভি ২০, শার্দুল ৩/৩৮, হেজলউড ২/২৯, জাদেজা ২/৩৭)
ফলাফল: চেন্নাই ২৭ রানে জয়ী
২০১২ সালের আইপিএলের ফাইনালের পুনর্মঞ্চায়ন, আবারও চেন্নাইয়ের শুরুতে ব্যাটিং, কলকাতার কোনও ফাইনাল না হারা, আগের দুই ফাইনালে উপস্থিত সুনিল নারাইন ও সাকিব আল হাসানের একসাথে আরও একটি ফাইনাল - ইতিহাসের সব পরিসংখ্যান ও সম্ভাবনাকে নাকচ করে নিজেদের ৪র্থ আইপিএল শিরোপা জিতল চেন্নাই সুপার কিংস। ফাফ ডু প্লেসির ৫৯ বলে ৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে কলকাতার সামনে ১৯৩ রানের লক্ষ্য দাঁড় করানোর পর শুবমন গিল-ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ওপেনিং জুটিতে এসেছিল ৯১ রান। শার্দুল ঠাকুরের ৩ উইকেটের সাথে রবীন্দ্র জাদেজা ও জশ হেজলউডের ২ উইকেটে কলকাতার ব্যাটিং অর্ডার ধসিয়ে দিয়ে ২৭ রানের জয় দিয়ে আরও একবার শিরোপা হাতে তুলল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।
আগে যে ২ বার শিরোপা জিতেছিল কলকাতা সেই দুবারই ১৯০+ রান তাড়া করেছিল তারা। এদিনও তাই ১৯৩ রানের লক্ষ্যে করতে হত বিশেষ কিছুই। বিশাল সেই রানতাড়ায় জশ হেজলউডের করা দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েও মহেন্দ্র সিং ধোনি তালুবন্দি করতে না পারায় বেঁচে যান ভেঙ্কটেশ আইয়ার। এরপর অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়ে শুবমন গিলের সাথে জুটি বেঁধে দারুণ খেলছিলেন। পাওয়ারপ্লেতে দুজনে মিলে তুলে ফেলেন ৫৫ রান।
অপর প্রান্তে গিল অবশ্য গিয়ার পাল্টানোর কাজে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও সপ্রতিভ আইয়ার ৩১ বলে পূর্ণ করেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। রবীন্দ্র জাদেজার ঐ ওভারে টানা দুই চার মেরেই হাত খোলেন গিলও। পরের ওভারে আক্রমণে এসেই ৯১ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন শার্দুল ঠাকুর। জাদেজার ক্যাচে ৩২ বলে ৫০ রানে আইয়ারকে ফেরানোর পর কলকাতার দারুণ শুরু ভেস্তে দিয়ে ঐ ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগে নিতিশ রানাকেও ফেরান শার্দুল। পরের ওভারে হেজলউডের বল মাঠাছাড়া করতে গিয়ে জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে ফিরে যান সুনিল নারাইনও। পরের ওভারে ৪০ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করলেও বিপদ আরও বাড়িয়ে দীপক চাহারের বলে অদ্ভুত এক স্কুপ খেলতে গিয়ে ভজঘট পাকিয়ে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয়ে ৪৩ বলে ৫১ রান করে ফেরেন গিল।
পরের ওভারে আক্রমণে এসে জাদেজা ফেরান দীনেশ কার্তিক ও সাকিব আল হাসানকে। ১৫ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে কার্যত সেখানেই সেহ হয়ে যায় কলকাতার সম্ভাবনা। উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে পরের দুই ওভারে ফিরে যান রাহুল ত্রিপাঠি ও অইন মরগান। শেষ দিকে লকি ফার্গুসন-শিভাম মাভির ৩৯ রানের জুটি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুল্লেও সময় ক্ষেপণ ছাড়া খুব একটা লাভ হয়নি তাতে। ডোয়াইন ব্রাভো শেষ ওভারে ১৩ বলে ২০ রান করা মাভিকে ফেরালে ২৭ রানের জয় পায় চেন্নাই, অসাধারণ এক মৌসুমের ইতি টানে শিরোপা দিয়েই।
এর আগে রানতাড়া করে ৬ ম্যাচের ৬টি জিতেছে কলকাতা, সেটা মাথায় রেখেই টসে জিতে মরগান চেন্নাইকে ব্যাটিংয়ে পাঠালে তাদের শুরুটা ভালই হয়। প্রথম ওভারে ৬ রান দিয়ে শুরু করে সাকিব আল হাসান নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই সুযোগ তৈরি করেছিলেন। সাকিবের ভাসিয়ে দেওয়া বলে ডু প্লেসি পরাস্ত হলে কার্তিক সেই বল লুফে নিতে পারেননি, মাত্র ২ রানেই জীবন পেয়ে যান ডু প্লেসি। পরে ঐ ওভারে চার-ছয়ে অপর প্রান্তে থাকা রুতুরাজ গায়কোয়াড় হাত খোলেন। কোনও উইকেট না হারিয়ে দুজন মিলে পাওয়ারপ্লেতে তোলেন ৫০ রান।
পাওয়ারপ্লের এক ওভার পরেই নারাইনের বলে তুলে মারতে গিয়ে শিভাম মাভির ক্যাচে ২৭ বলে ৩১ করে থামেন গায়কোয়াড়। উইকেটে এসেই আগের দিন যেখানে থেমেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করেন রবিন উথাপ্পা। ডু প্লেসির সাথে সাকিবের ওভারে দুই ছয়ে নেন ১৫ রান। ছয় মেরে ৩৫ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন ডু প্লেসি। তবে নারাইন আবার আক্রমণে এলে তাকে মাঠছাড়া করার পরের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ২৬ বলে ৩১ করে ফিরে যান উথাপ্পা। ৭-১৫ ওভারে যেই কলকাতার ইকোনমি ও উইকেট শিকারের রেকর্ড ছিল সবচেয়ে ভালো তারাই এদিন মাঝের ঐ কয় ওভারে গোনে ৮১ রান।
উইকেটে নবাগত মইন আলীকে নিয়ে থামার কোনও লক্ষণও দেখাননি ডু প্লেসি। লকি ফার্গুসনের উপর এদিন চেন্নাই ব্যাটসম্যানরা বিশেষত চড়াও হয়, নিজের শেষ ওভারে ১৯ রান দিয়ে চার ওভারের কোটা পূর্ণ নিজের মৌসুম সর্বোচ্চ ৫৬ রান দেন তিনি। তবে শেষ ওভারে মাভি কিছুটা লাগাম টেনে ধরলে তাকে শেষ বলে মাঠছাড়া করতে গিয়ে লং অনে আইয়ারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৮৬ রানে থামেন ডু প্লেসি। তার সাথে মইনের ২০ বলে ৩৭* রানে ১৯২ রানে গিয়ে থামে চেন্নাই।
কলকাতা দারুণ শুরু করলেও ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষমেশ দাপুটে জয় পেয়েছে চেন্নাই। ২০২০ আইপিলে নিজেদের সর্বনিম্ন ৭ম অবস্থানে শেষ করার পরের মৌসুমে দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আরও একবার শিরোপা জিতল ধোনির দল।