• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোনালদোতে আরও একবার স্মরণীয় কামব্যাক ইউনাইটেডের

    ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোনালদোতে আরও একবার স্মরণীয় কামব্যাক ইউনাইটেডের    

    রোনালদোর ফিরে আসা, সিজনের শুরুতে উড়ন্ত সূচনা- সবকিছুই ফিকে হয়ে আসছিল ধীরে ধীরে। সোলশার কিছুদিনের জন্য ভুলে গেলেও তার দায়িত্ব নিয়ে ফিরে আসছিল দুয়োধ্বনি। শনিবার লেস্টারের কাছে ৪-২ গোলে হারের ক্ষত তো ছিলই, প্রথমার্ধে আটালান্টার দুই গোলের ধাক্কা চোখ রাঙাচ্ছিল আরেকটি হারের দিকেই। কিন্তু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাতে এত তাড়াতাড়ি উপসংহারে পৌঁছানো যায় না। যায় না রোনালদোর প্রভাবকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে। প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও অনবদ্য এক ‘কাম ব্যাক’-এর গল্প লিখে আটালান্টাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। 

    ম্যাচের প্রথমার্ধের ম্যানচেস্টারের পারফরম্যান্স ছিল খাপছাড়া, বিশেষ করে মাঝমাঠে। রেড ডেভিলদের দুই হোল্ডিং মিড ফ্রেড-ম্যাকটমিনে আজও ব্যর্থ। সামনে বলের যোগান দিতে ব্যর্থ তো হয়েছেনই, বলের দখলও হারিয়েছেন বেশ কিছু সময়। আটালান্টার হয়ে বিপদের সব সম্ভাবনা আসছিল রাইট চ্যানেল থেকে। চেলসিতে ব্রাত্য হয়ে বিভিন্ন ক্লাবে ধারে সময় কাটানো জাপাকস্তাকে নতুন জীবন দিয়েছেন আটালান্টা কোচ গ্যাসপারিনি। রাইট উইং ধরে বার বার লুক শ’কে কাটিয়ে ওভারল্যাপ করে বলের যোগান দিচ্ছিলেন বিপজ্জনক জায়গায়। সেরকম এক ওভারল্যাপ থেকেই অফসাইড লাইন ভেঙ্গে ফেলে বল বাড়ান মারিও পাসালিচের দিকে। পাসালিচও ছিলেন জায়গামত, বলে আলতো ছোঁয়ায় তার গোলেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম আঘাত হানে আটালান্টা।

    প্রথমার্ধে রোনালদো পর্যন্ত বলের যোগান যেতে পেরেছে খুব কম সময়েই। তার অফ দ্য বল মুভমেন্টে স্লথ গতিতে ফার্নান্দেজ-র‍্যাশফোর্ডকে কাভার করতে হয়েছে অতিরিক্ত স্পেস। বিশ মিনিটের মাথায় পালোমিনোকে কাটিয়ে গোলে শট নিলেও সেটি ছিল খুবই সাধারণ, থামাতে বেগ পেতে হয়নি আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মুসোকে।

    ম্যান ইউ যখন ম্যাচে ফেরার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে, তখনই আবার টালমাটাল। ২৮ মিনিটে কোপামিনারের কর্নার থেকে হেডারে গোল করেন মার্কিংয়ের একদম বাইরে থাকা ডেমিরাল। আধ ঘণ্টার আগেই দুই গোলে পিছিয়ে রেড ডেভিলরা।

    প্রথমার্ধের শেষে অবশ্য ভালো সুযোগ তৈরি করেছিলেন র‍্যাশফোর্ড। ৪২ মিনিটে লিন্ডলফের বাড়ানো লং বল অনসাইডে থেকে পেয়ে গিয়েছিলেন ফাঁকা। কিন্তু ট্র্যাক করে দুর্দান্ত এক স্লাইডিং ট্যাকল করে সেবার বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন আটালান্টার দ্বিতীয় গোল স্কোরার ডেমিরালই। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবারো র‍্যাশফোর্ডের শট, এবার ডান হাফ স্পেইস থেকে। বারে বল লেগে শুধু হতাশাই বাড়িয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। 

    প্রথমার্ধ দেখে যারা গালমন্দ করেছেন আচ্ছামত, তারা নির্ঘাত চমকে গিয়েছেন ম্যানচেস্টারের দ্বিতীয়ার্ধের পারফরম্যান্সে। ম্যানেজার ওলে গানার সোলশার ড্রেসিং রুমে তাঁর শিষ্যদের কী বলেছেন সেটা হয়তো জানা যাবে না, তবে যে আগ্রাসন নিয়ে রেড ডেভিলরা দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে, সেটার প্রতিউত্তর জানা ছিল না গ্যাসপারিনির আটালান্টার।

    দ্বিতীয়ার্ধে সবচেয়ে বড় ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ধরা যেতে পারে দুটো। এক, ডেমিরালের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি। আর দুই, পগবাকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত। আটালান্টার প্রেসকে নাকচ করে ফাইনাল থার্ডে ভয়াবহ রূপ ধারণে করে রেড ডেভিলরা। আর দ্বিতীয়ার্ধে রোনালদো যেন ফিরে পান তাঁর গোল ক্ষুধা।

    ৫৩ মিনিটে ইওসেপ ইলিচিচের ভুল পাসের খেসারত দেয় আটালান্টা। প্রথমার্ধে ভালো সুযোগ তৈরি করে গোল করতে না পারার যন্ত্রণা কিছুটা হলেও কমে র‍্যাশফোর্ডের। ৫৩ মিনিটে তার গোলে ম্যাচে ফিরতে শুরু করে দল। ডেমিরালের জায়গায় নামা লোভাতো মোটেই সুবিধা করতে পারছিলেন না ডিফেন্স লাইনে। ৫৮ মিনিটে ম্যাকটমিনের পায়ে লেগে বল ফিরে আসে বারে লেগে, আর ৬৪ মিনিটে রোনালদোর নিচু করে মারা শট ঠেকিয়ে দেন মুসো।   

    কিন্তু ৭১ মিনিটে নিশ্চিত বিপদ থেকে ইউনাইটেডকে বাঁচান ডি গেয়া। প্রথমে দুভান জাপাতা এবং ডিফ্লেক্টেড বলে ম্যালিনভস্কির শট ঠেকিয়ে জোড়া বিপদমুক্ত করেন তিনি। 

    এর কিছুক্ষণ পরেই ৭৩ মিনিটে ম্যাগুয়ারের এক হেডার ফিরে এলেও পরের মিনিটেই গোল! সাঞ্চোর বাঁকানো ক্রস বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ আটালান্টা ডিফেন্স। কাভানির মাথা পার করে বল গিয়ে পড়ে ম্যাগুয়ারের পায়ে, তার জোরালো শট ঠেকানোর সাধ্য ছিল না মুসোর। ২-২ এ ফেরার পর ৭৯ মিনিটে আবারো ইউনাইটেডের আক্রমণ। মুসোর সেবার ফার্নান্দেজের শট ঠেকিয়ে দিলেও একটু পরেই এলো কাঙ্খিত মুহূর্ত। 

    যে মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন রোনালদো নিজেও। বাম হাফ স্পেইস থেকে লুক শ’র ক্রস দুই আটালান্টা ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে রোনালদো মাথা ছুঁয়ে জালে। ২-০ থেকে ৩-২। যে ইউনাইটেডকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল প্রথম ৪৫ মিনিটে, সে ইউনাইটেডই ফিরে এলো দুর্দান্ত ভাবে- আর তাদের ত্রাতা সিআরসেভেন। ম্যানচেস্টারে দ্বিতীয় জীবনে তাঁর গোল ট্যালি গিয়ে দাঁড়ালো ছয়ে।

    এরপর আর খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি সোলশারের দলকে। আটালান্টাও পারেনি ভালো কোন সুযোগ তৈরি করতে। তাই রোববার লিভারপুলের সঙ্গে ব্লকবাস্টার ম্যাচের আগে ‘থ্রিলার’ সিনেমার মত উপভোগ্য এক রাত উপহার দিয়ে গেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-আটালান্টার ম্যাচ।