বার্সার হাফ ছেড়ে বাঁচা, জয়েও চেলসির অস্বস্তি; বিশ মিনিটের বায়ার্ন ঝড়ে শেষ বেনফিকা
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি-মালমোর ম্যাচে স্কোরলাইন যাই বলুক না কেন, চেলসির ভক্ত-সমর্থকরা আজ ঘরে ফিরেছেন চিন্তার ভাঁজ নিয়ে। সুইডিশ ক্লাব মালমোকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিলেও নিজেদের শিবিরে এসেছে বড় ধাক্কা। প্রথমার্ধেই ইনজুরি নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান চেলসির দুই ফরোয়ার্ড লুকাকু এবং ভার্নার।
শুরু থেকেই গোলমুখে আগ্রাসী চেলসি প্রথম গোলের দেখা পেয়ে যায় ৯ মিনিটের মাথাতেই। থিয়াগো সিলভার লং হপে বাড়ানো বল বাইসাইকেল ভলিতে জালে জড়ান ডেনিশ ডিফেন্ডার আন্দ্রেয়াস ক্রিশ্চিয়ানসেন। চেলসির হয়ে ১৩৭ তম ম্যাচে এটিই তার প্রথম গোল।
কিন্তু ১৯ মিনিটেই বড় অঘটন। বক্সের বাইলাইনে ল্যাসে নিয়েলসনের কড়া ট্যাকেলে গোড়ালিতে চোট পান বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু। জর্জিনিও পেনাল্টি ব্যবধান দ্বিগুন করলেও মাঠ ছাড়তে হয় লুকাকুকে। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন কাই হ্যাভার্টজ।
হ্যাভার্টজেরই জার্মান সতীর্থ ভার্নার ইনজুরিতে পড়েন ম্যাচের ৪৪ মিনিটে। দারুণ একটি রানে বক্সে ঢুকে মাংসপেশিতে চোট পেয়ে বাধ্য হন মাঠ ছাড়তে। নিজ দলে এমন জোড়া অঘটনে চিন্তিত টুখেলকে অবশ্য ম্যাচের ফলাফল নিয়ে আর চিন্তা করতে হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভার্নারের বদলে নামা হাডসন অডয়ের কাউন্টার থেকে বল নিয়ে মালমো কিপার ডাহলিনের পাশ দিয়ে বল চিপ ইন করে জালে জড়ান হ্যাভার্টজ। আর ৫৭ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি থেকে জর্জিনিও পান নিজের দ্বিতীয় গোল। চেলসি ম্যাচ শেষ করে ৪-০ ব্যবধানে থেকেই।
চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্য আরেকটি ম্যাচে এস্তাদিও দ্য লুজে বায়ার্ন মিউনিখের চরম ধৈর্য্য পরীক্ষা নিয়েছে বেনফিকা। দুই দলেরই গোলরক্ষকের দারুণ কিছু সেভ এবং বেনফিকার তিন সেন্টার ব্যাকের দৃঢ়তায় ৭০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে ছিল সমতা। এরপর হঠাত এক ঝড় এসে হয়ে গেল সব তছনছ। ২০ মিনিটের প্রলয় ঝংকারে বেনফিকার মাঠ থেকে ৪ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে বাভারিয়ানরা।
প্রথমার্ধে কোমান আর সানে ভালো সুযোগ হাতছাড়া করলেও প্রথম আঘাতটা আসে সানের কাছ থেকে। ২৫ গজ থেকে নেওয়া চমৎকার এক ফ্রি-কিক থেকে গোল করে বায়ার্নকে এনে দেন লিড। কিন্তু ৮০ থেকে ৮৪ মিনিটের মধ্যে তিন গোল খেয়ে ম্যাচ থেকে একেবারে ছিটকে যায় বেনফিকা এভারটনের আত্মঘাতী গোল আর ৮২ ও ৮৪ মিনিটে লেভানডফস্কির ও সানের আরো দুটি গোলে আরো একটি বড় ব্যবধানের জয় নিশ্চিত করে জুলিয়ান নাগলসমানের শিষ্যরা।
ওদিকে কাম্প নউতে বার্সেলোনা যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে আজ। বায়ার্ন-বেনফিকার কাছে প্রথম দুই ম্যাচে হার তো ছিলই, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ২৬৯ মিনিট গোলশূন্য সময়টা কাটার মতো বিঁধেছে দল এবং সমর্থকদের জন্য। ২০২০ এ ডিসেম্বরে লিওনেল মেসির গোলের পর বার্সার স্কোরশিটে আজ উঠেছে ব্লাউগ্রানাদের একজনের নাম। জেরার্ড পিকের জোরালো এক ভলির গোলই গড়ে দিয়েছে দুই দলের পার্থক্য।
অবশ্য আজ একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছে দুই দলই। প্রথমার্ধে নিজেদের গোল পোস্ট অনেকক্ষণ সুরক্ষিত রেখেছিলেন বুশচান, ঠেকিয়েছেন লুক ডি ইয়ংয়ের একদম নিশ্চিত গোল হবার সুযোগ। তবে আর পারেননি ৩৬ মিনিটে। জর্দি আলবার ক্রস পৌঁছে যায় ব্যাক পোস্টে থাকা জেরার্ড পিকের কাছে। জোরালো ভলি বুলেট গতিতে জালে পৌঁছালে জেরার্ড পিকে হয়ে যান বার্সেলোনার হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল করা খেলোয়াড়।
প্রথমার্ধে বার্সার তুমুল প্রেসে বল দখল নিতে বেগ পেয়েছেন শায়গানভ-সুপ্রিগারা। দ্বিতীয়ার্ধে গোলে আক্রমণে উঠেছে ডায়নামো, তবে বড় কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি বার্সার পোস্টে থাকা টার স্টেগানকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বার্সার আক্রমণে ধার বাড়াতে রনাল্ড কোমান নামিয়েছিলেন কুতিনিয়ো, ফাতিকে। ৭৫ মিনিটে ডিপাইকে উঠিয়ে নামানো হয় আগুয়েরোকেও, যিনি বার্সার জার্সি গায়ে প্রথমবারের মত নামেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। কিন্তু স্কোর বোর্ডে যোগ হয়নি কোন গোল। অতিরিক্ত গোল হোক আর না হোক, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই জয় বড় উৎসাহের টোটকা হিসেবে কাজ করবে রবিবার ‘এল ক্লাসিকো’র জন্য। বিশেষ করে রোনাল্ড কোমানের জন্য তো বটেই, সে ম্যাচের ফলাফল এদিক ওদিক হলে আবারো পড়ে যেতে পারে চাকরি নিয়ে টানাটানি।
রাতে অন্যান্য ম্যাচে জেনিতের মাঠে এক গোলে জয় পেয়েছে ইউভেন্তুস। ইয়াং বয়েজের মাঠে ১-৪ গোলে জয় ভিয়ারিয়ালের। ভলফসবুর্গের বিপক্ষে সালজবুর্গ জিতেছে ৩-১ গোলে, আর ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন লিঁলের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে সেভিয়া।