ক্যাচিং-ব্যর্থতা? অধিনায়কত্বের ভুল? 'টি-টোয়েন্টি মানসিকতাই' নেই বাংলাদেশের
সাদা চোখে শ্রীলংকার সঙ্গে ১৭১ রান করেও হারার কারণ লিটন দাসের দুইটি ক্যাচ মিস। আরেকটু তলিয়ে দেখলে মনে হবে অধিনায়কত্ব আর ভুল পরিকল্পনার কারণে হয়তো হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের হারের সত্যিকারের কারণ আসলে টি-টোয়েন্টির মানসিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারা আর নিজেদের প্রথাগত ধারণার বাইরে যেতে না পারাই আসলে দায়ী।
এমনিতে লিটন দাসকেই এই ম্যাচের কালপ্রিট বানিয়ে ফেলা যায় অনায়াসেই। রাজাপাক্সে ও আসালাংকার ক্যাচ দুইটি এমন সময় মিস করেছেন, যখন বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা ছিল ভালোমতোই। দুই সেট ব্যাটসম্যানের ক্যাচ অমন সময়ে ফেলে না দিলে হয়তো ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতত। মুশফিকুর রহিম নিজেও সংবাদ সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ওই দুইটি ক্যাচের জন্য মূল্যটা একটু বেশিই দিতে হয়েছে তাদের। কিন্তু লিটনের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া সহজ, কঠিন আসল সমস্যার মূলে যাওয়া।
কেউ কেউ বলতে পারেন, বাজে অধিনায়কত্বের কারণে হেরেছে বাংলাদেশ। দুজন নতুন ব্যাটসম্যান আসার পর মোস্তাফিজ-সাকিবদের না এনে পার্টটাইমার দিয়ে বল করাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। নিজেও দুই ওভার করেছিলেন। কিন্তু সেই তিন ওভারেই ম্যাচটা হয়তো মুঠো গলে বেরিয়ে গেছে। সাকিব আল হাসানের ওভারকে রেখে দেওয়া নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর। দুর্দান্ত দ্বিতীয় ওভারের পর সাকিবকে যখন অধিনায়ক আবার আনলেন, ম্যাচ প্রায় শেষই হয়ে গেছে। ওদিকে মোস্তাফিজের তো শেষ পর্যন্ত এক ওভার বাকিই ছিল।
তাহলে অধিনায়কত্বের সঙ্গে ভুল পরিকল্পনার ওপরেও দায় চাপানো যায়। দলের মূল দুই বোলাররা শেষ স্পেলের আগেই ম্যাচের ভাগ্য ঠিক হয়ে যাওয়া নিশ্চয় ভালো পরিকল্পনার অংশ নয়। মোস্তাফিজকে নিয়ে পরিকল্পনাও ছিল একদম মুখস্ত, শেষ তিন ওভার বল করানো।
সমস্যাটা আসলে এখানেও নয়। আজকে যদি আফিফ উইকেট পেয়ে যেতেন, তাহলে অধিনায়কত্ব আর পরিকল্পনার প্রশংসা করতেন অনেকেই। তাতে ম্যাচটা জিতেও যেতে পারত বাংলাদেশ, হয়তো ঢাকা পড়ে যেত আরও অনেক কিছু। সমস্যাটা হচ্ছে, বাংলাদেশের সনাতনী চিন্তাভাবনা ও গতবাঁধা মানসিকতা, যেটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সাথে একদমই যায় না।
সাকিবের কথাই ধরুন। প্রথম দুই ওভার করানোর পর সাকিবকে কেন আর আনা হলো না, সেই প্রশ্ন অনেকের। দায়টা মাহমুদউল্লাহর ঘাড়ে চাপানো সহজ। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সাকিব নিজেও বাঁহাতিদের বিপক্ষে বল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এর আগেও বিপিএলেসহ অনেক টুর্নামেন্টে নিজে অধিনায়ক হওয়ার পরেও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ আজ কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন একজন বাঁহাতি স্পিনারই, পরে নাসুম কিন্তু নিয়েছেন আরও একজন বাঁহাতির উইকেট। অথচ নাসুমকেও আগে আনা যেত। ম্যাচ শেষে মুশফিক বলেছেন, বাঁহাত স্পিনার আনলে দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য একদিকে বাউন্ডারি মারাটা সুবিধা হতো। বাঁহাতি আসলে বাঁহাতি আনা যাবে না- এই ধারণা উড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ এটাই কিন্তু সত্যি। সাকিবসহ পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট এমন মান্ধাতা আমলের ধারণা আঁকড়ে আছেন অনেক দিন ধরেই। এসব দিয়ে ওয়ানডেতে হয়তো ম্যাচ জেতা যেতে পারে, কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে কঠিন।
টি-টোয়েন্টির মূল ব্যাপারটাই হচ্ছে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। যেটা বেশির ভাগ সময়েই বাংলাদেশ দল করতে ব্যর্থ হয়। আজও যেমন পাওয়ারপ্লেতে রান ওঠার পরও মোস্তাফিজকে আনা হচ্ছিল না। কারণ পরিকল্পনা ছিল তাকে শেষে বল করাতে হবে। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি দাবি করছিল অন্য কিছুর।
একই রকম কথা ব্যাটিংয়েও প্রযোজ্য। শুধু ডান-বামের ভাবনা থেকে আফিফকে আজকে এগিয়ে নিয়ে আসা হলো। অথচ ইনফর্ম মাহমুদউল্লাহ আগের ম্যাচেই খেলেছিলেন দারুণ একটা ইনিংস। এসব নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ দলের সিনিয়রসহ টিম ম্যানেজমেন্টকে অনেকবারই প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু বেরিয়ে আসার লক্ষণ দেখা যায়নি কখনোই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এত বছরেও মূল পর্বে মাত্র একটা জয় তাই বলে দিচ্ছে, এই ফরম্যাট আসলে বাংলাদেশের জন্য নয়।