নতুন 'ক্লাসিকো'তে ক্যাম্প নউকে স্তব্ধ বানিয়ে রিয়ালের জয়োল্লাস
কে বলেছিল থাকবে না উত্তাপ? আর কেই-বা ভাবছিল থাকবে না নাটকীয় মুহূর্ত? মেস-রোনালদোবিহীন ক্লাসিকোতে সবকিছুরই রসদ ছিল। ঢিমেতালে ম্যাচ শুরু হয়ে পারদ জমেছে ধীরে ধীরে, আর যার সবশেষ ক্লাইম্যাক্স গিয়ে ঠেকল অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত। ক্যাম্প নউয়ের আবহকে বিষিয়ে তুলে অবশ্য শেষ হাসি লস ব্লাংকোসদেরই, প্রথমার্ধে আলাবার অনবদ্য এক গোল এবং ৯০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে লুকাস ভাসকেজের গোলই যথেষ্ট ছিল। তাই কুন আগুয়েরো এক গোল শোধ করলেও মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকো ১-২ গোলে জিতে এগিয়ে থাকল কার্লো আনচেলত্তির রিয়াল মাদ্রিদ।
এবারের এল ক্লাসিকো অন্য সববছর থেকেই আলাদা, অন্তত ইতিহাস তাই বলে। শেষবার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-লিওনেল মেসিবিহীন ক্লাসিকো হয়েছিল ২৩শে অক্টোবর, ২০১৮ সালে। সুয়ারেজের হ্যাটট্রিকে এই ক্যাম্প নউতেই রিয়ালকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ব্লাউগ্রানারা। এর আগে রোনালদো-মেসিবিহীন ক্লাসিকো যে আরো পুরোনো- ২০০৭ এর ডিসেম্বরে। রিয়াল সেবার জিতেছিল ১-০ গোলে। এত বছর ধরে ছড়ানো উত্তাপ, উত্তেজনার একটা বড় অংশ যে দুজনকে ঘিরে- তাঁরা আর নেই দলের সঙ্গে। উত্তাপ কিছুটা কমেছে ঠিকই, তবে যা ছিল তার জন্যই তো ভক্তরা বছরে অন্তত দুইবার আগ্রহ নিয়ে বসে থাকেন এই ম্যাচের জন্য।
আনচেলোত্তি-কোমান দুজনই সতর্ক দল সাজানো নিয়ে, ইন ফর্ম খেলোয়াড়রাই ছিলেন স্কোয়াডে। খেলোয়াড়রাও সতর্ক ছিলেন শুরু থেকে, তাই প্রথম দশ মিনিট নিজেদের মধ্যে বল নিয়ে গা গরম করলেন যেন। ম্যাচের একুশ মিনিটে বার্সার বক্সে পড়ে যান ভিনিসিউস জুনিয়র, পেনাল্টির আবেদন করলেও তাতে অবশ্য সাড়া দেননি রেফারি।
ছাব্বিশ মিনিটে একদম নিশ্চিত গোল সুযোগ হাতছাড়া করেছেন বার্সার সার্জিনো ডেস্ট। ফাতির দেওয়া বল পেয়েছিলেন আনমার্কড অবস্থায়, কিন্তু তুলে মারেন বারের অনেক উপর দিয়ে।
বার্সা বল নিয়ে এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু গোল মুখে শট ছিল না একটিও। রিয়ালের মাঝমাঠ এবং রক্ষণের ছন্দে তাল কাটেনি খুব একটা, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও তাই ছিল লস ব্লাংকোসদের হাতে। আর সেরকম এক কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই এলো সেই কাংখিত মুহূর্ত।
রিয়াল বক্সে ডিপাই থেকে বল কেড়ে নিয়ে কাউন্টার শুরু করেছিলেন আলাবা। বল নিয়ে সামনে এগিয়ে শুরু করলেন লাইন ব্রেক করা, মাঝে বল বাড়ালেন রদ্রিগোকে। পিকে আর গার্সিয়াকে বের করে আনলেন নিজেদের জায়গা থেকে, আর সেখানে ফাকা পেয়ে বল দিলেন আলাবাকেই। ড্রিবল করে বক্সে ঢুকেই বাঁ পায়ে জোরালো শট টার স্টেগানের হাত থেকে অনেক দূরে সরে গিয়ে আছড়ে পড়লো জালে। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘স্ক্রিমার’, কিংবা ‘স্টানার’- যা সবকিছু স্তব্ধ করে দেয়। রিয়াল জার্সি গায়ে নিজের প্রথম গোল, এল ক্লাসিকো অভিষেকে নিজের প্রথম গোল- স্তব্ধ ক্যাম্প নউ।
বার্সা আক্রমণে আগ্রাসী হয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। রিয়ালের ডিফেন্স ছিল দারুণ, ফাইনাল থার্ডের স্পেস সংকুচিত করে সব আক্রমণই নিষ্ক্রিয় করে দিচ্ছিল আনচেলত্তির ব্যাকলাইন। আক্রমণে তাই আরো ধার বাড়ানোর জন্য মিনগেজাকে তুলে কোমান নামিয়েছেন কুতিনিওকে। ৪৯ মিনিটে লেফট উইং থেকে ফাতি কাটব্যাক করে করেছিলেন আক্রমণ, পুরো ম্যাচে প্রথম অন টার্গেটে আসা বল অবশ্য থামাতে কষ্ট করতে হয়নি কোর্তোয়ার।
৬২ মিনিটেই অবশ্য দুই গোলে লিড নিতে পারত রিয়াল মাদ্রিদ। মদ্রিচ বক্সে ঢুকে বেনজেমার সঙ্গে জায়গা শাফল করে বাড়িয়েছিলেন বল দারুণ ভাবে। ফাঁকা পেয়ে জোরে নেওয়া বেনজেমার শট ভালোভাবেই ঠেকাতে পেরেছিলেন টার স্টেগান।
৭৭ মিনিটে এল ক্লাসিকোর প্রথম স্বাদ পেয়েছেন এবছর বার্সায় আসা কুন আগুয়েরো, সের্হি রবের্তোর জায়গায় নেমে যিনি শেষ মুহূর্তে প্রায়ই ফিরিয়ে এনেছিলেন দলকে, তবে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। ৮৪ মিনিটে অবশ্য একবার চেষ্টা করেছিলেন, তবে বল মেরেছিলেন বারের অনেক উপর দিয়ে।
৯২ মিনিটে শেষ পেরেকটাও ঠোকা হয়ে গেল বার্সেলোনার জন্য। বার্সার বক্স থেকে বল ক্লিয়ার হবার ফাঁকায় পেয়ে যান আসেনসিও। বাম ফ্ল্যাংক থেকে টেনে নিয়ে আসে মেরেছিলেন টার স্টেগানের দিকে। টার স্টেগান ঠেকালেন ঠিকই, কিন্তু বল সোজা গিয়ে পড়ল নিচ থেকে উঠে আসা ভাজকেজের পায়ে। ডান পেয়ে ঠেলে দিয়েই ভাসলেন উদযাপনে, বার্সার এই খাদ থেকে উঠে আসা রীতিমত অসম্ভব।
কুন আগুয়েরোর অভিষেক গোলে বার্সা হালে পানি পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু অল্প সময়ের জন্য। শেষ বাঁশিতে তাই টানা পাঁচ ম্যাচ রিয়ালের বিপক্ষে জয়হীন থাকল বার্সেলোনা। আর এদিকে চাকরি নিয়ে টানাপোড়েনে থাকা কোমানের জন্য শুরু হলো আরো এক দুঃস্বপ্নময় সপ্তাহ।