রশিদ-মুজিবে স্কটল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে আফগানদের দুর্দান্ত শুরু
সুপার ১২, শারজাহ (টস- আফগানিস্তান/ ব্যাটিং)
আফগানিস্তান ১৯০/৪, ২০ ওভার (নাজিবউল্লাহ ৫৯, গুরবাজ ৪৬, জাযাই ৪৪, শরিফ ২/৩৩, ওয়াট ১/২৩, ডেভি ১/৪১ )
স্কটল্যান্ড ৬০ , ১০.২ ওভার (মানসি ২৫, গ্রিভস ১২, কোটজার ১০, মুজিব ৫/২০, রশিদ ৪/৯, নাভিন ১/১২)
ফলাফল: আফগানিস্তান ১৩০ রানে জয়ী
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে রশিদ খান বলেছিলেন যে এবারের আসর স্পিনারদের হতে যাচ্ছে। নিজের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে মুজিব উর রহমানের সাথে জুটি বেঁধে দুজনে মিলেই ৯ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন স্কটল্যান্ডকে। নাজিবউল্লাহ জাদরান-রহমানউল্লাহ গুরবাজের বিধ্বংসী ৮৭ রানের জুটিতে ভর করে স্কটল্যান্ডের সামনে ১৯১ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়ার পরে স্পিন-জাল বুনে আফগানরা পেয়েছে ১৩০ রানের বিশাল জয়।
আফগানিস্তানের স্পিন সামলাতে স্কটিশদের হিমশিম খেতে হতে পারে এমনটাই ধারণা ছিল সবার। তবে শারজাহর এই ব্যাটিং উইকেটে, ছোট বাউন্ডারিতে যে এভাবে তারা নাকানিচুবানি খাবে সেটা বোধহয় আফগানরাও ভাবেনি। অথচ ৩ ওভারেই ২৭ রান তুলে স্কটিশদের শুরুটা হয়েছিল বেশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু ৪র্থ ওভারেই স্কটিশদের সকল আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে তিন উইকেট নিয়ে বসেন মুজিব। মাত্র ১ রান গুনে তিনি ফেরান কাইল কোটজার,ক্যালাম ম্যাকলয়েড ও রিচি বেরিংটনকে। পরের ওভারে নাভিন-উল-হক এসে ম্যাট ক্রসকে ফেরালে চরম আশাবাদী স্কটিশ ভক্তও বোধহয় আশা ছেড়ে দেয়। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ছন্দে থাকা জর্জ মানসিও ২৫ রানে মুজিবের চতুর্থ শিকার হয়ে ফিরলে প্রতিরোধের শেষ আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পাওয়ারপ্লে শেষে স্কোরবোর্ডে সম্মানজনক ৩৭ রান উঠলেও উইকেটের খাতায় ততক্ষণে উঠে গিয়েছে ৫ জনের নাম।
পরের ওভারে আক্রমণে এসেই গুগলি দিয়ে শুরু করা রশিদ খান রানের খাতা খোলার আগে ফেরান মাইকেল লিস্ককে। নিজের শেষ ওভারে এরপর মার্ক ওয়াটকে ফিরিয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম ৫-উইকেট পান মুজিব। দুর্দান্ত স্পেল শেষে তার বোলিং ফিগার ছিল: ৪-০-২০-৫, যা আফগানিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেরা। পরের ওভারে ক্রিস গ্রিভসকে ফিরিয়ে তার পরের ওভারের প্রথম দুই বলেই জশ ডেভি ও ব্র্যাড উইলকে ফিরিয়ে তুলির শেষ আঁচড়টা টানেন রশিদ। বিশাল জয়ের আনন্দে হাস্যোজ্জ্বল রশিদ পরের ম্যাচেই প্রথম বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করার স্বপ্নেও হয়ত বিভোর হয়ে থাকবেন।
শারজাহর ছোট বাউন্ডারিকে কাজে লাগিয়ে এর আগে পাওয়ারপ্লে থেকেই ঝড় তোলে আফগানিস্তান। মোহাম্মদ শাহজাদ-হযরতউল্লাহ জাযাই জুটি টুর্নামেন্টে দ্রুততম দলীয় ৫০ রানের মাইলফলক পূর্ণ করেন ৫.১ ওভারেই । ঐ ওভারে ২২ রানে শাহজাদ থামলেও পাওয়ারপ্লে শেষে আফগানিস্তান তোলে ৫৫ রান।
ফিফটির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে আঁটসাঁট বল করতে থাকা মার্ক ওয়াটের শিকার হয়ে ৪৪ রানে থামেন জাযাই। উইকেটে এসে এরপর নাজিবউল্লাহ জাদরান-রহমানউল্লাহ গুরবাজ রীতিমত তান্ডব চালান। দুজনে মিলে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে লম্বা ছয় মারার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন যেন। পেশিশক্তির অসুরী প্রদর্শনীতে এই জুটি ৮৭ রান তুলে ফেললে গুরবাজকেও ফিফটি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়। জশ ডেভির বলে কাইল কোটজারের ক্যাচে থামার আগে ৪টি বিশাল ছয়ে তিনি করেন ৪৬ রান।
পরের বলেই অবশ্য ৩০ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন নাজিব। শেষ ওভারে আরও একটি বিশাল ছয় মারার পর শেষ বল্টাও মাঠছাড়া করতে গেলে তিনি থামেন ৩৪ বলে ৫৯ রান করে, আফগানিস্তান পায় ১৯০ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ।
স্কটল্যান্ডের জন্য তা হয়ত অনতিক্রম্যই ভেবে নিয়েছিলেন অনেকেই। তবে এভাবে তাসের ঘরের মত যে স্কটল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ লুটিয়ে পড়বে সেটাও মনে হয় না খুব বেশি মানুষ ধারণা করতে পেরেছিলেন। সে যাই হোক, স্কটল্যান্ডকে লজ্জার রেকর্ড উপহার দিয়ে মুজিব-রশিদরা বার্তা দিয়ে রাখলেন স্পিনে নাকাল করার বার্তা। সেই সাথে তাদের যে পেশিশক্তির রসদটাও বেশ ভারী তারও একটা মহড়া দিয়ে রাখলেন এদিন।