নিরতিশয় অনিশ্চয়তা
একটা ক্রিকেট ম্যাচের শেষ কয়েক ওভারের খেলা চলমান। ৩২ বলে ৪ রান প্রয়োজন লক্ষ্য তাড়ারত দলটির, অক্ষুণ্ণ আছে পাঁচ-পাঁচটি উইকেট। কি বলবেন এমন ম্যাচকে? মরা খেলা, প্রতিযোগিতাশূন্য, নাকি অন্য কিছু? যা-ই বলুন না কেন, এমন একটা ম্যাচকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ দাবিকারীকে পাগল ঠাওরাতে বাকি থাকবেন না কেউই। তাহলে শুনে রাখুন, ২০০৭ বিশ্বকাপের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচগুলোর একটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সেই ম্যাচ।
ম্যাচের ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বল। এ বলটির আগের পরিস্থিতিই তুলে ধরা হয়েছে উপরে। মিডল স্ট্যাম্প অভিমুখী লাসিথ মালিঙ্গার ফুলার লেংথের সেই বলটির গতি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন ব্যাটসম্যান শন পোলক। ‘স্লোয়ার’ বলটি হালকা রিভার্স সুইং করে আঘাত হানে পোলকের লেগ স্ট্যাম্পে। পরের বলটা ছিল প্রচণ্ড গতিময়, এবং অসাধারণ একটা ‘ইয়র্কার’। কোনমতে ব্যাটে লাগাতে সমর্থ হয়েছিলেন অ্যান্ড্রু হল, তবে নিচের দিকে চাপিয়ে রাখতে পারেননি। ব্যাটে লেগে সরাসরি কাভারে অবস্থানরত থারাঙ্গার হাতে চলে যায় বলটি।
পরপর দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও তেমন কোন রোমাঞ্চ এ ম্যাচ ছড়াবে বলে আশা করেননি কেউই। চামিন্দা ভাসের করা পরের ওভার থেকে আসে ১ রান। ম্যাচের আসল চমকটা এলো পরপরই, দুটো ভাগে ভাগ হয়ে। আগের ওভারের শেষ দুই বলে উইকেট পেয়েছিলেন, ৪৭তম ওভারটা করতে এসে প্রথম বলেই মালিঙ্গা ফেলে দিলেন পুরো ম্যাচে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাটসম্যান জ্যাক ক্যালিসের উইকেট, পূর্ণ হল হ্যাটট্রিক। অকল্পনীয় চমকের দ্বিতীয় অংশে ‘খেলা দুঃসাধ্য’-এমন একটা ইয়র্কারে মাখায়া এনটিনির মিডল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিলেন মালিঙ্গা। সমীকরণটা দাঁড়াল- ২২ বলে ৩ রান করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে, এদিকে হাতে মাত্র ১ উইকেট।
খেলাটা শেষ হয়ে যেতে পারত পরবর্তী বলেই, যদি না মালিঙ্গার আরেকটা ইয়র্কার ল্যাংভেল্টের অফ-স্ট্যাম্পে চুমু খেয়ে বেরিয়ে না যেত। তবে একথা ঠিক, ঐ মুহূর্তে ম্যাচে স্পষ্ট কর্তৃত্ব স্থাপন করে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। ২১০ রানের লক্ষ্যমাত্রাটাকে অনেক দূরের পথ মনে হচ্ছিল প্রোটিয়াদের জন্যে।
ভাসের পরবর্তী ওভারটা থেকে এল না একটি রানও। দৃশ্যপটে আবারও মালিঙ্গা। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে একটুর জন্যে ‘কট বিহাইন্ড’ হওয়া থেকে বাঁচলেন রবিন পিটারসন। ‘এজ’ হলো পরের বলে। তবে পিটারসন তথা দক্ষিণ আফ্রিকার পরম সৌভাগ্য, কারও হাতে না গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চল দিয়ে সোজা সীমানার বাইরে চলে যায় ব্যাটের কানায় লাগা সেই বল।
গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে অনিশ্চয়তা যে কোন পর্যায়ে যেতে পারে, সেটা আসলে আমাদের ধারণার বাইরে। ২০০৭ আসরের ঐ ম্যাচ ব্যাপারটা নতুন করে অনুধাবন করায় ক্রিকেটাঙ্গিনার সবাইকে।