'জোস' বাটলার আর দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে ছুটছে ইংল্যান্ড
সুপার ১২, শারজাহ (টস- ইংল্যান্ড/ ব্যাটিং)
ইংল্যান্ড ১৬৩/৪, ২০ ওভার (বাটলার ১০১*, মরগান ৪০,মালান ৬, হাসারাঙ্গা ৩/২১, চামিরা ১/৪৩)
শ্রীলঙ্কা ১৩৭, ১৯ ওভার (হাসারাঙ্গা ৩৪, রাজাপাকসা ২৬, শানাকা ২৬, মঈন ২/১৫, রশিদ ২/১৯, জর্ডান ২/২৪)
ফলাফল: ইংল্যান্ড ২৬ রানে জয়ী
নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়ে আরও একটি দারুণ জয় পেলো দুর্দমনীয় ইংল্যান্ড, হয়ে গেল চারে চার। ৩৫ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে ধুঁকতে থাকা ইংল্যান্ড জস বাটলার-অইন মরগানের ১১২ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর পর বাটলার পেয়ে যায় এই বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরি। ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ইংল্যান্ড ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা-দাসুন শানাকার ৫৩ রানের জুটি সামলে উজ্জীবিত ফিল্ডিং আর বোলারদের সম্মিলিত পারফর্ম্যান্সে তুলে নেয় ২৬ রানের জয়।
শেষদিকের বেধড়ক পিটুনিতে শ্রীলঙ্কার আত্মবিশ্বাসে স্বভাবতই চিড় ধরেছিল। তার প্রমাণ মাঠে মিলল প্রথম ওভারেই। ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল বের করতে গেলে মরগান-বাটলার জুটিই আবারও কাল হয়ে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কার জন্য; রান আউট হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচে দুর্দান্ত ইনিংস খেলা পাথুম নিসাঙ্কা। দারুণ খেলতে থাকা চারিথ আসালাঙ্কাকে এরপর ২১ রানে আক্রমণে এসেই ফেরান আদিল রশিদ। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে কুশল পেরেরাকেও রশিদ ফেরালে শ্রীলঙ্কা তুলতে পারে ৪০ রান।
পাওয়ারপ্লের পরে জর্ডানের আঘাতে আভিশকা ফার্নান্দো ফেরার পরে যখনই ভালো একটি জুটি গড়ে উঠছিল তখনই ক্রিস ওকসের আঘাতে ২৬ রান করে থামেন ভানুকা রাজাপাকসা। অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে নিয়ে এরপর শ্রীলঙ্কাকে বেশ ভালোভাবেই ম্যাচে ফেরান বল হাতে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা হাসারাঙ্গা। শেষ ৪ ওভারে জয়ের জন্য সমীকরণ ৪১ রান হয়ে দাঁড়ালে দারুণ এক চার মারার পরের বলেই থামেন হাসারাঙ্গা। লিয়াম লিভিংস্টোনকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে তিনি থামেন ২১ বলে ৩৪ রান করে। এরপরই তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা। জর্ডানের পরের ওভারে ২৬ রানে থাকা শানাকা থামলে ঐ ওভারের শেষ বলে ফিরেন দুশমন্থ চামিরাও। পরের ওভার মঈন আলীকে দেওয়া হলে চামিকা করুনারত্নে ও মাহিশ থিকশানার উইকেট তুলে নিয়ে আরও একটি দাপুটে জয় পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই ১২ রান নিয়ে শুরু করে ইংল্যান্ড। সেজন্যই দ্বিতীয় ওভারেই লঙ্কানদের সেরা অস্ত্র ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে আক্রমণে আনা হলে দারুণ গুগলিতে জেসন রয়ের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। বিপদ যখন সামলে উঠেছে বলেই ভাবছিল ইংল্যান্ড তখনই পাওয়ারপ্লের শেষের আগ দিয়ে তিন বলেই দুই উইকেট খুইয়ে বসে তারা। দুশমন্থ চামিরার বলে ডাভিড মালান স্টাম্প খুইয়ে ফেরার পর জনি বেইরস্টোকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসারাঙ্গা। পাওয়ারপ্লে শেষে ইংল্যান্ড তাই তুলতে পারে ৩৬ রান।
অধিনায়ক অইন মরগানকে নিয়ে এরপর রয়েসয়েই খেলেন জস বাটলার। ১০ ওভার শেষে মাত্র ৪৭ রান করা ইংল্যান্ড ১৩তম ওভারে ১৪ রান নিয়ে গিয়ার পরিবর্তনের সংকেত দেয়। পরের ওভারে ৪৫ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন বাটলার, যা নিজের ও ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ধীরগতির ফিফটি। তবে ফিফটি পাওয়ার পরেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তিনি; লাহিরু কুমারার পরের ওভারে তিন ছয়ে মরগানের সাথে নেন ২২ রান। ১৯তম ওভারে নিজের শেষ ওভার করতে হাসারাঙ্গা এলে তাকে ছয় দিয়েই স্বাগত জানান মরগান। কিন্তু হাসারাঙ্গার গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পরে পরের বলেই মরগান থামেন ৩৬ বলে ৪০ রান করে।
মরগান থামলেও থামেনি বাটলার ঝড়। নিজের সর্বোচ্চ রানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইনিংস করে যান, শেষ ওভারে সুযোগ দিয়েও বেঁচে যান। সেঞ্চুরির কাছে যেয়েও মনে হচ্ছিল পাবেন না। তবে শেষদিকে যেই ঝড় তুলেছিলেন তারই মধুরেণ সমাপয়েৎ হয় শেষ বলের ছয়ে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি পাওয়ায়। ৪৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করে পরের ৫১ রান করেছেন মাত্র ২২ বলে। আর শেষ ১০ ওভারে ১১৬ রান তুলে ইংল্যান্ড গিয়ে থামে ১৬৩ রানে। সেই পুঁজিই দিনশেষে যথেষ্ট প্রমাণ করে ইংল্যান্ড ধরে রাখে নিজেদের অপরাজিত থাকার ধারা।