থুবড়ে পড়তে থাকা ইউনাইটেডকে বাঁচালেন রোনালদো; লেভানডফস্কির তিনে বেনফিকাকে বায়ার্নের পাঁচ
সোলশারের ইউনাইটেডকে কল্পনা করুন রোনালদোবিহীন। বারবার ডুবে যেতে থাকা জাহাজের হাল তবে কে ধরতেন? সোলশারই বা কীভাবে এতদিন টিকে থাকতেন তাঁর চাকরিটুকু নিয়ে। দিনশেষে রোনালদোর এক ‘মিরাকল’-এর জন্য প্রার্থনা আবারো শুনলেন তিনি; একবার নয়, দু’বার। মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে থাকা ইউনাইটেড তারই অবদানে বারগামোর মাঠ থেকে ফিরল ড্র নিয়ে। অন্যদিকে আলিয়াঞ্জ এরিনায় বেনফিকাকে গোলবন্যায় ভাসিয়েছে নাগলসমানের বায়ার্ন মিউনিখ। রবার্ট লেভানডফস্কির হ্যাটট্রিকে বায়ার্ন জিতেছে ৫-২ গোলে। জুভেন্টাসও গোল পেয়েছে চারটি, জেনিতকে হারিয়েছে ৪-২ গোলে।
রোনালদো না হয় নিজের কাজটা করেছেন ঠিকই, ব্যাকলাইনে ম্যাগুয়ার, শ, ওয়্যান বিসাখারা ছিলেন ঠিক লিভারপুল ম্যাচের মত নিষ্প্রভ। ব্যতিক্রম শুধু একজন, এরিক বায়ি! দৃঢ়তার সঙ্গে ডিফেন্ড করে গিয়েছেন নিজেদের হাফ, ঠেকিয়ে গেছেন আটালান্টার আক্রমণ।
আর বায়ির পরীক্ষা পুরো ম্যাচজুড়ে নিয়ে গেছেন দুভান জাপাতা। তার ক্ষিপ্রতার উত্তর জানা ছিল না আর কারো, শুধু বায়িই বারবার ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন তাকে। ম্যাচের এগারো মিনিটে ম্যাকটমিনে বল হারালে জাপাতা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পাঠিয়ে দেন বক্সের মাঝে। ফাঁকা জায়গায় সে বল নিয়ে ইলিচিচের মারা নিচু ভলিটা ঠেকানোর মতই ছিল। কিন্তু পারেননি ডি গেয়া, ইলিচিচের মারা বলের গতির কাছে হেরে যাওয়ায় ম্যাচের শুরুতেই এক গোল পেছনে রেড ডেভিলরা।
জাপাতা-বায়ির ‘ডুয়েল’ পুরো ম্যাচেরই নিয়মিত দৃশ্য। ফ্ল্যাংক থেকে বল পেয়ে হাফ স্পেইস থেকে কাট করে জাপাতা যতবারই ঢুকতে চেয়েছেন, কিংবা ক্রস করে ইলিচিচের কাছে দিতে চেয়েছেন- প্রতিবারই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন এরিক বায়ি। ৩০ মিনিটের মাথায়েও ফাঁকা বক্সে জাপাতার বল ক্লিয়ার করেছেন দৌড়ে এসে।
ব্যাক থ্রি বা ন্যারো ব্যাক ফাইভ ফরমেশনে নামা ইউনাইটেডের জন্য বড় ধাক্কা ভারানের ফের ইনজুরিতে পড়া। তার জায়গায় গ্রিনউড নামায় সোলশারকে ফেরত যেতে হয়েছে তার ৪-২-৩-১ ফরমেশনে। তবে বিরতিতে যাবার মিনিট খানেক আগেই রোনালদোর প্রথম ‘ম্যাজিক’, যেখানে সমান অবদান আছে ব্রুনো-গ্রিনউডেরও।
বক্সের সামান্য বাইরে মাত্র তিন সেকেন্ডের সিকুয়েন্স- সেখান থেকেই গোল। রোনালদো থেকে বল প্রথমে গ্রিনউডের পায়ে, পেছন থেকে ডেমিরালকে কাটিয়ে ব্রুনো তখন বক্সের ভেতর। গ্রিনউড থেকে বল পেয়ে শট করলেন না তিনি। এক বাঁক ঘুরে তৈরি করলে ফাঁকা জায়গা, আসছেন রোনালদো সেখানে। ব্রুনো ব্যাকহিল সোজা রোনালদোর পায়ে আর সেখান থেকে বুলেট গতিতে বল জালে। আবারো ইউনাইটেডকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার নায়ক সিআরসেভেন। ডাগআউটে হাফ ছেড়ে বাঁচলেন যেন সোলশার।
কিন্তু সেটাও ক্ষণিকের জন্য। দ্বিতীয় অর্ধের ৫৬ মিনিটে আবারো সেই পুরোনো চাপ অনুভব করেছেন ইউনাইটেড বস। লিভারপুলের কাছে ৫-০ গোলের হারের ক্ষত এখনো ভোলেননি, সাথে চাকরি থাকা-না থাকার ভয়। সে ভয়কে উস্কে দিলেন দুভান জাপাতা। জোয়াকিম মেইলার লব করা বল পেয়ে যান বাম হাফ স্পেইসে। এবার বায়ি আর আটকাতে পারেননি। বল টেনে এনে ডি গেয়ার ডান পাশ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন জালে। ম্যাচে আবারো পিছিয়ে ইউনাইটেড।
শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল ফলাফলটা এমনই থাকবে। কিন্তু রোনালদো ‘ম্যাজিক’ যে তখনও কিছু বাকি। ৯২ মিনিটে বক্সের বাইরে জটলার মধ্যে গ্রিনউডের দেওয়া বল থেকে রোনালদোর লো ভলি ঠেকাতে পারেননি আটালান্টা গোলকিপার মুসো, যেমনটা পারেননি দুই সপ্তাহ আগেও। প্রায় ডুবে যেতে থাকা জাহাজকে একাই টেনে ধরে রোনালদো ইউনাইটেডের জন্য এনে দিলেন রুদ্ধশ্বাস এক ড্র! সোলশার আবারো হাফ ছেড়ে বাঁচলেন যেন, অন্তত এই সপ্তাহে হয়তো আর চাকরি নিয়ে টানাপোড়েনে পড়তে হবে না।
আলিয়াঞ্জ এরিনাতে বায়ার্ন-বেনফিকা ম্যাচও কম ঘটনাবহুল নয়। নিজের শততম চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ স্মরণীয় করে রেখেছেন লেফানডফস্কি, করেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের চতুর্থ হ্যাটট্রিক। অবশ্য গোল সংখ্যা চারও হতে পারতো, যদি পেনাল্টিটা মিস না করে বসতেন।
বেনফিকাও ছাড় দেয়নি। প্রথমার্ধেই এক গোল করে ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টায় ছিল তারা। তবে প্রথমার্ধে বায়ার্নের দুই, আর পরে তিন গোলে কার্যত সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় তারা। তাই শেষে আরো এক গোল শোধ করে খুব একটা লাভ হয়নি তাদের, যদিও গোলের হিসাব-নিকাশ পরে গিয়ে হতে পারে ‘জরুরি’ কোন বিষয়।
বায়ার্নের চারে চার জয়ে ১২ পয়েন্ট, নিশ্চিত হয়েছে নকআউট স্টেইজের টিকেটও। বায়ার্নের গোলবন্যার জয় শাপেবর হয়ে এসেছে যেন বার্সেলোনার জন্য, বেনফিকাকে সরিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্লাউগ্রানারা। তবে এজন্য নিজেদেরও জিততে হয়েছে ম্যাচে। কোমান বরখাস্ত হবার পর অন্তর্বর্তী কোচ সের্হি বারহুয়ানের অধীনে নিজেদের প্রথম জয় পেয়েছে বার্সা, একমাত্র গোল এসেছে আনসু ফাতির কাছ থেকে। ডায়নামোর মাঠে জয় মোটেও সহজ ছিল না; এমনকি দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শায়গানভের দুর্দান্ত একটি শট ঠেকিয়ে বার্সাকে ম্যাচে রেখেছিলেন টার স্টেগান, পাইয়ে দিয়েছেন ক্লিন শিটও। পরের ম্যাচ তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বেনফিকার বিপক্ষে সে ম্যাচেই নির্ধারিত হতে পারে নকআউট স্টেজে বায়ার্নের সঙ্গী হয়ে উঠছে কোন দল
গ্রুপ এইচে চারে চার করে জয় পেয়েছে জুভেন্টাসও, জয়টাও চার গোলেই। দিবালার জোড়া গোলের সঙ্গে কিয়েসা-মোরাতার গোলে তারাও নিশ্চিত করেছে নকআউট স্টেজের টিকেট। আর রাতের অন্য ম্যাচে চেলসি মালমোকে হারিয়েছে এক গোলের ব্যবধানে। জুভেন্টাসের কাছে ম্যাচ হারলেও নকআউট স্টেইজে চেলসির যাওয়াটা শুধুমাত্র সহজ কিছু সমীকরণের ব্যাপার মাত্র।