ক্লপের অভ্যর্থনায় অ্যানফিল্ড থেকে দুই গোলের হার মেনে সিমিওনের বাড়ি ফেরা
সিমিওনে আসার আগে জানিয়েছিলেন কেন ক্লপের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেননি তিনি। ম্যাচ জয়-পরাজয় পালটে দেয় সব সমীকরণ; আর সিমিওনে এমন কোচ যার সবচেয়ে বড় অপছন্দের বিষয় হলো অসহায় আত্মসমর্পন। ভরপুর অ্যানফিল্ডের জনসমুদ্রে সেই অপছন্দের কাজটাই করেছেন তাঁর শিষ্যরা, অসহায় আত্মসমর্পন করে বাড়ি ফিরেছেন দুই গোলের হারের বোঝা মাথায় নিয়ে। আর তাই ম্যাচ শেষে ক্লপের সঙ্গেও আর হলো না হ্যান্ডশেক করা।
ক্লপের লিভারপুল পুরো ম্যাচে শুধু ছোট একটা জিনিসই খুঁজে যায়- স্পেস। আজকের ম্যাচে লিভারপুলের জন্য সে স্পেস ছিল অফুরন্ত। মাঝমাঠ থেকে স্পেস নিয়ে অপারেট করেছেন হেন্ডারসন-অক্সালেড চেম্বারলেইনরা, আর দুই ফ্ল্যাংক থেকে একের পর এক বল বক্সে পাঠিয়েছেন আলেক্সান্ডার আরনল্ড-শিমিকাস। অ্যাটলেটিকোর বক্সে আনমার্কড অবস্থাতেই ছিলেন জটা, ১২ মিনিটের মাথায় তাকে খুজে নেয় আলেক্সান্ডার আরনল্ডের ক্রস। আলতো ছোয়ায় সে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি তিনি। ১২ মিনিটেই এক গোলে পিছিয়ে সিমিওনে।
দ্বিতীয় গোল আসতেও সময় লাগল না বেশিক্ষণ। এবারো আলেক্সান্ডার আরনল্ড, তবে বল পেলেন মানে। লো ভলিতে বল পাঠালেন জালে, অবলাক সুযোগ পেলেন না থামানোর। ম্যাচের ফলাফলটা লেখা হয়ে গেল সেখানেই
বাকি সময় যেটা হয়েছে সেটা শুধু ম্যাচের অলংকরন, ফলাফলে কোন প্রভাব রাখেনি। তার মাঝে মানেকে পেছন থেকে বাজে এক ট্যাকেল করে লাল কার্ড দেখেছেন ফেলিপে। ঠিক আগের ম্যাচে গ্রিজমানও বাজে এক ফাউল করে অ্যাটলেটিকোকে বানিয়ে দিয়েছিলেন দশ জনের দলে। আজ সেটাই পুনরাবৃত্তি করে সিমিওনের কপালের ভাঁজ চওড়া করেছেন ফেলিপে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে অন্তত আরো তিন গোল পেয়ে যেতে পারত লিভারপুল, মাঝে জটার এক গোল বাতিল হয়েছে ভিএআরে। তবে অ্যানফিল্ডে ফেরার গল্পটা কিছুটা তিক্ত হয়েছে সুয়ারেজের জন্য। মাঠে নেমে শুনেছেন দুয়োধ্বনি। অ্যানফিল্ডের শোরগোল থামিয়ে দিয়েছিলেন অবশ্য ৫৬ মিনিটে। বক্সের বাইরে থেকে তার শট মাটিপের গায়ে ডিফ্লেক্ট হয়ে সোজা জালে। উদযাপন করেননি অবশ্য নিজের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে। তবে সে গোলের স্থায়িত্ব হলো মাত্র মিনিট দুয়েক। ভিএআরে অফসাইডের সিদ্ধান্তে বাতিল সে গোলও। আর এক মিনিট পরই ট্যাকটিকাল কারণে সুয়ারেজকে তুলেও নিয়েছেন সিমিওনে। অবশ্য দুয়ো ধ্বনির চাইতে সেবার শোনা গিয়েছিল করতালি, অ্যানফিল্ডের এক সাবেক কিংবদন্তিকে সম্মান জানাতে এবার ভুল করেনি অলরেড সমর্থকরা।
এই মৌসুমে নিজের সেরা ফর্মে আছেন মো সালাহ। গোল-অ্যাসিস্ট পেয়েছেন প্রায় প্রত্যেকটি ম্যাচে। এ ম্যাচে অবশ্য গোলের খাতা না খুললেও তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। ডিফেন্ডারদের জায়গা থেকে বের করে এনে স্পেস তৈরি করেছেন বাকিদের জন্য।
ম্যাচের বাকি সময় বিশেষ কিছু করতে পারেনি অ্যাটলেটিকো। ম্যাচের শেষ বাঁশির জন্যই যেন অপেক্ষা করেছে দুই দল। আর শেষ বাঁশির পরই দেখা গেল সিমিওনের ফ্যাকাসে মুখ। ক্লপের কাছে আবার পরাজয়টা মুখ্য নয়, দলের এমন অসহায় আত্মসমর্পন মানতেই পারেননি তিনি। আর ম্যাচ শেষে হ্যান্ডশেক- সে তো প্রশ্নের বাইরে!