• লা লিগা
  • " />

     

    সুন্দর ফুটবলে বার্সেলোনাকে হতাশায় ডুবিয়ে ড্র করলো সেল্টা ভিগো

    সুন্দর ফুটবলে বার্সেলোনাকে হতাশায় ডুবিয়ে ড্র করলো সেল্টা ভিগো    

    আজ দিন শুরু হয়েছে বড় এক খবর দিয়ে, জাভি ‘আসলেই’ আসছেন বার্সেলোনার ম্যানেজার হয়ে। এমন খবরের রেশটা বোধহয় মাঠেও পাওয়া যাচ্ছিল বার্সেলোনার খেলায়। ভিগো স্টেডিয়ামে সেই ‘চিরচেনা বার্সা’র খেলাই উপহার দিচ্ছিলেন বুসকেতস-আনসু ফাতিরা; যার বীজ বুনেছিলেন রাইনাস মিশেলস- পরবর্তীতে ক্রুইফ, গার্দিওলা, লুইস এনরিকে; যে ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন জাভি নিজেও। তিন গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যাওয়া বার্সেলোনার জন্য শুধু দরকার ছিল ম্যাচটা ধরে রাখা। কিন্তু পরবর্তী ৪৫ মিনিট সেল্টা ভিগোর স্টেডিয়ামে যা হলো- সেটা আগেও হয়েছে ইস্তাম্বুলে। এরকম আগেও হয়েছে আয়াক্স আমস্টারডামে; ইয়াগো আসপাস-নলিতোর একের পর এক চেষ্টায় বার্সেলোনাকে তিন গোল ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচ ড্র করেছে সেল্টা ভিগো, আর জাভির নতুন যুগের বার্সেলোনার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে খবরের শিরোনাম

    প্রথম হাফে বার্সেলোনার খেলা ছিল স্বচ্ছল, প্রাণবন্ত। টোটাল ফুটবল কিংবা টিকি-টাকার এক আধুনিক সংযোজন। ভিগোর খেলোয়াড়দের নিজেদের পজিশন থেকে বের করে এনে ম্যাচের পেস নিয়ন্ত্রণ করে গিয়েছেন বুসকেতস আর ডি ইয়ং। দুই ফ্ল্যাংকে মিনজেসা আর আলবার প্রগেসিভ বল ক্যারি থেকে লং বলে বল পেয়েছিলেন আনসু ফাতি। তিনজন ডিফেন্ডারের ভেতর থেকেও ডান পায়ের বাঁকানো শটে খুজে পেয়েছেন জাল। তাই ছয় মিনিটের মাথাতেই এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। 

    প্রথম হাফে সেল্টা বলের দেখা পেয়েছে খুব কমই। আভাস মিলেছে, জাভির অধীনে ঠিক এই খেলাটাই দেখা যাবে বার্সাকে খেলতে। ১৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বুসকেতসের অসাধারণ গোলে ম্যাচের শুরুতেই দুই গোলের লিড। আর ৩৩ মিনিটে আলবার ক্রস থেকে হেডারে মেমফিস ডিপাই এর গোল যেন ‘ক্লাসিক বার্সেলোনা’র প্রদর্শনী। কাগজে-কলমে ম্যাচ তো তখনই শেষ, অন্তত এমনটাই ভাবছিলেন অনেকে।

    সবকিছু ওলট-পালট হতে শুরু করল ৩৭ মিনিট থেকে। কিছুদিন আগেই ইনজুরি থেকে বার্সেলোনাকে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন আনসু ফাতি, হঠাতই পেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট। দ্বিতীয় হাফে আর নামা হয়নি তার। ইনজুরিতে পড়েছেন নিকো গলহালেজও। অশনি সংকেতের কেবল শুরু

    দ্বিতীয় হাফে যে বার্সেলোনাকে দেখা গেল, সেটা এই মৌসুমের নিত্য নৈমিত্তিক এক চিত্র। বাজে ম্যান মার্কিং, ডিফেন্সে ছাড়া ছাড়া পজিশনিং, ফাইনাল থার্ড পর্যন্ত বল নিতে না পারা- সবই ফিরে এলো ভিগোর স্টেডিয়ামে। সেল্টাও ছেড়ে কথা বলেনি।

    স্কোরলাইন হতে পারত ৫-৩, হয়নি কেননা সেল্টার দুই গোল বাতিল হয়েছে হ্যান্ডবল আর অফসাইডে। সেই দুর্দশা থেকে বার্সেলোনা বাঁচলেও তাদের দ্বিতীয় হাফের খেলার ধরণ বার্সেলোনা ম্যানেজমেন্টের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় বটে।

    ইয়াগো আসপাস। সেল্টার কিংবদন্তি, স্পেন দলের ব্রাত্য এক ফুটবলার। ভালোবাসেন বার্সেলোনার বিপক্ষে গোল করতে, টার স্টেগানের বিপক্ষে গোল করতে। ৬১ মিনিটে এলো প্রথম, বক্সের বাম থেকে কোনাকোনি নেওয়া শট ঠেকাতে পারেননি স্টেগান।

    নলিতোও বক্সের আশ পাশে ঘুরছিলেন মোক্ষম সুযোগের জন্য। আনমার্কড অবস্থায় ৭৪ মিনিটে বল পেয়ে যান চেরভির থেকে, উড়ন্ত এক হেডে গোল দিয়ে সেল্টাকে এনে দেন আরো একটি গোল। 

    বাকি পুরো সময়টা শুধু সেল্টাই চেষ্টা করে গেছে আরো একটা গোল বের করে আনার। একেরপর আক্রমণে লংলে আর আরাউজোকে খাবি খাইয়েছে তারা। অবশ্য ৮৫ মিনিটে ডি ইয়ংয়ের নেওয়া শট বারে লেগে ফিরে এসেছিল, বার্সার চেষ্টা সে পর্যন্তই। 

    ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে, ৯৬ মিনিটে এলো সেই মুহূর্ত! গালানের ক্রসে বক্সে বল পান আসপাস, পাশেই আরাউজো। ঠাণ্ডা মাথায় বা পায়ের বাকানো এক শটে সোজা জালে বল। সেল্টা ৩-৩ বার্সা। 

    এনিয়ে টার স্টেগানের বিপক্ষে আসপাসের গোল সংখ্যা হয়ে দাঁড়াল ৯টি!

     

    শিরোনামটা হতে পারত, ‘জাভি যুগে এসে বার্সেলোনার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস’। এখনো অ্যাওয়ে ম্যাচে একটি জয়ও পায়নি তারা, আজও এসে ড্র করল ভিগোর মাঠে। পরিসংখ্যানটা আর পরিবর্তন হতে দিলেন না আসপাস-নলিতোরা। বার্সাকে ঠেকিয়ে দিয়ে তারাই যে শিরোনামের নায়ক।