• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    পাকিস্তানকে হতভম্ব করে আরেকটি থ্রিলারে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন স্টয়নিস-ওয়েড

    পাকিস্তানকে হতভম্ব করে আরেকটি থ্রিলারে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন স্টয়নিস-ওয়েড    

    সেমিফাইনাল, দুবাই (টস- অস্ট্রেলিয়া/ বোলিং)

    পাকিস্তান ১৭৬/৪, ২০ ওভার (রিজওয়ান ৬৭, ফাখার ৫৫, জাম্পা ১/২২)

    অস্ট্রেলিয়া ১৯ ওভারে ১৭৭/৫ (ওয়ার্নার ৪৯, স্টইনিস ৪০, ওয়েড ৪১, শাদাব ৪/২৬)

    ফলাফলঃ অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী


    নিশাম-মিচেলের তান্ডবে কাল ৪ ওভারে ৫৭ রানও সম্ভব হয়েছিল। ওয়ার্নারের ৪৯ রানে এক পাশে উইকেট হারিয়েও অস্ট্রলিয়া আজ ৪ ওভারে ৫০ রানের প্রয়োজনে আসতে পেরেছিল। কিন্ত সেই প্রয়োজনটা আরও কমতে পারতো। ওয়ার্নার আউট না হয়েও ‘আউট’ ভেবে ‘ওয়াক’ করে নিজের কপালে নিজেই যেন কুড়াল মেরেছিলেন। কিন্ত সেসব এখন আর তাঁর ভাবনায় নেই। ফাইনালে যাওয়ার আনন্দে সেসব ভাবার সময় আছে নাকি! অস্ট্রেলিয়ার জন্য আজ ‘নিশাম’ হয়ে গিয়েছিলেন ওয়েড। তবে তাঁর ‘নিশামীয়’ ইনিংস এসেছে দশ বল খেলে ফেলার পর। ১০ বলে ১১ রানে ছিলেন, এরপরের ৭ বলে এনেছেন ৩০ রান! হাসানের ১২ ও হারিসের ১৩ রানের ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ৪ ওভারে ৫০ রানের প্রয়োজন নেমে এসেছিল ২ ওভারে ২২ রানে। শাহিনের এক ওভারেই তিন ছয় হাঁকিয়ে ওয়েড খেলা শেষ করে দেন এক ওভার হাতে রেখেই। অবশ্য সেই তিন ছয়ের আগে ১০ বলে ২০ রান যখন লাগত, হাসান ডিপ মিডউইকেটে ছেড়ে দিয়েছিলেন লোপ্পা ক্যাচ। ২৬ রানে চার উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেরা বোলিং ফিগারের দেখা পেয়েও তাই তাকে পরাজিত দলেই থাকতে হলো। 

    ফিঞ্চ জানতেন, জানতো সবাই, আসতে যাচ্ছে ফুল ইনসুইঙ্গার। তবু ফিঞ্চও ব্যর্থই ঠেকলেন শাহিনের সে বলে। ১৭৭ রানের বড় লক্ষ্যতাড়ায় শূন্য রানে অধিনায়ক ফিরে গেলে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। তিন ওভারে ১৩ রান আনার পর ওয়ার্নার ইমাদের উপর চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এক ছয়ের সাথে দুই চারের মারে সে ওভারে সবমিলিয়ে আসে ১৭ রান। পরের ওভারে মার্শ হারিসকে ছয়-চার মারলে আসে ১৪ রান। শেষ ওভারে হাসান ৮ রানে ওভার শেষ করলে অস্ট্রেলিয়ার রান পাওয়ারপ্লেতে ৫৩ রানের বেশি হয় না। 

    মার্শ-ওয়ার্নার পাকিস্তানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। শাদাবের বলে স্পিনের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে খাড়া ক্যাচ তুলে মার্শ ফিরে যান ২২ বলে ২৮ রান করে। স্মিথও শাদাবের বলে ক্যাচ তুলে ৬ বলে পাঁচ রান করেই ফিরে যান সাজঘরে। তবে অপর প্রান্তে ওয়ার্নার থামছিলেন না। চতুরতার সাথে ফিল্ডের সঙ্গে খেলে চালিয়ে গেছেন আক্রমণ। ১০ ওভারে ৮৯ রান যখন অস্ট্রেলিয়ার, তখন তাঁর মধ্যে ৪৯ রান ওয়ার্নারের। ওয়ার্নারের এই ইনিংসের পথে ‘অদ্ভুত’ এক ঘটনাও ঘটে গেছে, হাফিজের বল দুই বাউন্সের পর ওয়ার্নার এগিয়ে এসে যে ছয় মেরেছেন, ধারাভাষ্যে গাভাস্কার বলছিলেন, তাঁর ক্যারিয়ারে এমন ছয় দেখলেন এই প্রথম। 

    ওয়ার্নার অবশ্য ৪৯ রানেই আউট হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়নে। কিন্ত তাঁর দুর্ভাগ্য, আল্ট্রাএজে এরপর দেখা যায় বল লাগেনি ব্যাটে। ওয়ার্নারের ফেরার পর শাদাব ও ইমাদের দুই ওভার মিলিয়ে মাত্র ৬ রান আসে। ম্যাক্সওয়েল এরপর শাদাবকে সুইচ হিটে মারতে গিয়ে ৭ রানেই আউট হয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়া ৯৬ রানেই হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট। শাদাবের ৮ রানের ওভার শেষে হারিস এসে ৬ রান দিলে অস্ট্রেলিয়ার ৬ ওভারে লাগে ৬৮ রান। স্টইনিস এক পাশে ‘ঠান্ডা’ মাথায় খেলা গভীরে নিয়ে গেছেন। ৩১ বলে ৪০ রানে অপরাজিত থেকেছেন তিনি। ওয়েডের ঝড়ে, কিংবা হাসানের এক ‘ভুলে’ এরপর পাকিস্তানের স্বপ্ন হয়ে গেছে মাটি!

    টসে হেরে আগে ব্যাট করতে হলেও পাকিস্তান শুরুটা করেছিলো বেশ দারুণভাবে। পাওয়ারপ্লেতে তারা বিনা উইকেটে তুলে ফেলেছিল ৪৭ রান। রিজওয়ান এক প্রান্তে বেশ ভোগান্তিতে পড়লেও বাবর চাপে পড়তে দেননি পাকিস্তানকে। রিজওয়ান প্রথম রানের দেখা পেয়েছেন ষষ্ট বলে এসে। তবে অস্ট্রেলিয়া টাইট লাইন-লেংথে টিকে থাকতে পারেনি সবসময়। যখনই সুযোগ দিয়েছে বাবর-রিজওয়ান তা লুফে নেওয়ায় অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে হয়নি তাদের। পাওয়ারপ্লের প্রত্যেক ওভারেই বাউন্ডারি পেয়েছে পাকিস্তান। 

    সপ্তম ওভারে এসে জাম্পা বাউন্ডারিবিহীন প্রথম ওভার করেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার চিন্তার জায়গা ছিল তাদের ফিফথ বোলার। ম্যাক্সওয়েল তৃতীয় ওভারে এসে ১০ রান দিয়ে দিলে মার্শকে অষ্টম ওভারে আনেন ফিঞ্চ। মার্শের ওভার থেকেও পাকিস্তান নিয়ে নেয় ১১ রান। এরপর ম্যাক্সওয়েল এসে রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে উইকেট টু উইকেট বল করে ছয় রানে ওভার শেষ করতে পেরেছেন। পরের ওভারে জাম্পা এসে প্রথম পাঁচ বলে তিন রান দেন মাত্র। উইকেট না পেলেও ডিফেন্সিভ মনোভাবে অস্ট্রেলিয়া রান আটকে চাপে ফেলতে পারছিলো পাকিস্তানকে। আগের ১১ বলে পাকিস্তান ৯ সিঙ্গেল আনতে পারলে বাবর জাম্পার উপর চড়াও হতে গিয়ে লংঅনে ধরা খেয়ে ফিরে যান ৩৪ বলে ৩৯ রানে। ম্যাক্সওয়েল এসে তাঁর ওভার চার রানে শেষ করতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার ফিফথ বোলারের চিন্তা দূর হয়ে যায়। পাওয়ারপ্লের পরের ৩০ বলে পাকিস্তান আনতে পারে মাত্র ২৮ রান। কিন্ত এরপর মুল বোলারদের উপর দিয়েই ঝড় গেছে!

    বলপ্রতি রানে এগুনো রিজওয়ানকে জাম্পার পর হেজলউডকে মারেন ছয়। ৪১ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করে পরের ১০ বলে ১৭ রান এনে স্টার্কের বলে মিড অফে ক্যাচ দেন রিজওয়ান, ৬৭ রানে তিনি ফিরে গেলে ভাঙ্গে ৭২ রানের জুটি। সেই জুটির সঙ্গে এর আগে বাবরের সাথে তাঁর ৭১ রানের জুটিতে পাকিস্তানের শেষের ঝড়ের জন্য প্লাটফর্ম তৈরি ছিল। ফখর আসার পর থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখালেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। একসময় ১৭ বলে ছিলেন ১৭ রানে। পরের ১৭ বলে চারটি ছক্কার সাথে তিন চারের মারে আনেন ৩৮ রান। পাকিস্তানের সব ব্যাটাররাই নিজেদের ঝলক দেখিয়েছেন এই বিশ্বকাপে, শুধু ফাখারই বাকি ছিলেন। স্টার্ক-হেজলউডেদের তাঁর ভয়ঙ্কর রুপ দেখিয়ে সেমিফাইনালে এসেই খেললেন ৩২ বলে ৫৫ রানের ঝোড়ো ইনিংস। শেষ চার ওভারে ৫৪ রান এনে পাকিস্তান তাই গড়ে ১৭৬ রানের পুঁজি। আর অস্ট্রেলিয়া সেই রান শেষ চার ওভারে ৫০ রান তাড়া করে পেরিয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে গেলো তাই বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে। সেজন্য এবার নতুন এক চ্যাম্পিয়নই পেতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ!