• টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
  • " />

     

    বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি

    বন্ধু তুমি, শত্রু তুমি    

    নভেম্বর ১০, ২০২১, আবু ধাবি শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম। ক্রিস উওকসের করা ফুলটস ব্যাকওয়ারড স্কোয়ার দিয়ে বাউন্ডারি মারলেন ড্যারিল মিচেল। চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ, দলকে যে নিয়ে যেতে পেরেছেন ফাইনালে। নামের পাশে তার ৪৭ বলে ৭২ রানের ইনিংস।

    নভেম্বর ১১, ২০২১, দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। ডিপ মিডউইকেটে যখন হাসান আলি ম্যাথিউ ওয়েডের ক্যাচ ফেলে দিলেন, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অজি কিপার। অপর প্রান্তে কিছুটা অসহায় স্টয়নিসের চাউনি। নিজের যতটুকু প্রয়োজন সেরে রেখেছেন ৪০ রান করে। অবশ্য সেটাই যথেষ্ট ছিল; তিন বলে তিন ছয়ে বাকি কাজটুকু ওয়েড সেরে দিলেন। জয়ের নায়ক ওয়েড হলেন বটে, কিন্তু পার্শ্ব নায়ক হিসেবে স্টয়নিসের ভূমিকা তো আর ফেলনা নয়।

    মার্চ ২০০৯, রেট্রাভিশন শিল্ড সেমিফাইনাল। স্টয়নিসের ১৮৯ রানে ভর করে ম্যাচ জিতে স্কারবোরো উঠেছিল ফাইনালে, প্রতিপক্ষ বেইসওয়াটার-মোরলি। ৪১০ রান তাড়া করতে গিয়ে দুই উইকেট হারিয়ে ২৬৫ করে ফেলেছিল বেইসওয়াটার। বোলিংয়ে এলেন ড্যারিল মিচেল। বয়স তখন আঠারো হতে আরো দুই মাস বাকি। দলের ক্যাপ্টেন ক্লিন্ট হেরন আর দলের সিনিয়র জাস্টিন ল্যাঙ্গার ভরসা রেখেছিলেন ‘ছোট’ ড্যারিলের উপর। ২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সে ম্যাচটা জিতিয়েছিলেন মিচেল। চতুর্থবারের মত প্রিমিয়ারশিপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে স্টয়নিস, মিচেল আর ল্যাঙ্গার উদযাপন করেছিলেন ওয়্যাকার ড্রেসিং রুমে।

    নভেম্বর ১৪, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার তাকিয়ে থাকবেন তার শিষ্য মার্কাস স্টয়নিসের দিকে। আড়চোখে হয়তো সে নজর গিয়ে পড়বে ১২ বছর আগে প্রিমিয়ারশিপে ফাইনাল জেতানো সতীর্থ মিচের দিকেও। 

    *****

    ড্যারিল মিচেলের বাবা জন মিচেল সবেমাত্র ওয়েস্টার্ন ফোর্স রাগবি দলের কোচ হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় আসতে হবে, সঙ্গে নিয়ে এলেন ছেলেন ড্যারিলকেও। ২০০৬ এ নিউজিল্যান্ড থেকে পার্থে চলে এলেন বাবা-ছেলে। ড্যারিল মিচেলকে ভর্তি করানো হলো হেইল স্কুলে, যেখানে ড্যারিল দেখা পেলেন তার চেয়ে দুই বছরের বড় মার্কাস স্টয়নিসের।

    মিচেল-স্টয়নিস বন্ধু হলেন। একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছেন হেইল স্কুলের হয়ে। নেট সেশনে টানা নক করে গেছেন একজন, অন্য প্রান্তে আরেকজন বল ছুঁড়েছেন অন্যজনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেভলুশন স্পোর্টস ইনডোরের জিম তো আছেই, সবকিছুই করেছেন দুইজন মিলে। আড়াই বছর পর স্কারবোরোতে এসে পেয়েছেন ল্যাঙ্গারকে। সেই জাস্টিন ল্যাঙ্গার, যিনি ছিলেন ড্যারিল মিচেলের কৈশোরবেলার স্বপ্নের এক ব্যাটসম্যান- আর এই ল্যাঙ্গারের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করে নেওয়াটা মিচেলের জন্য যেন স্বপ্ন পূরণের মত।

    মিচেল-স্টয়নিসের বন্ধুত্ব ক্রিকেটকে ঘিরে। তাদের ধ্যানে-জ্ঞানে ক্রিকেট। ল্যাঙ্গারের পরামর্শ নিয়ে ব্যাটিংয়ে উন্নতি করার চেষ্টা করে গেছেন। ব্যাটিং মেন্টর হিসেবে পেয়েছেন ল্যাঙ্গারের ব্যক্তিগত কোচ নেইল হোল্ডারকে। মিচেলও স্মরণ করেছেন তার কোচের কথা, বলেছেন শুধু একজন ক্রিকেটার হিসেবে নয়, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতেও হোল্ডার তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

    স্টয়নিস-মিচেলকে আলাদাভাবে চোখে পড়েছিল স্কারবোরোর ক্যাপ্টেন ক্লিন্ট হেরনের। ‘বিশেষ’ কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা দুইজনের মাঝেই সমানভাবে পড়তে পেরেছিলেন হেরন। ক্যাপ্টেনের ভরসার প্রতিদানও দিয়েছিলেন দুই বন্ধু স্কারবোরোকে ২০০৯ সালে প্রিমিয়ারশিপ জিতিয়ে।

    পাঁচ বছরের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে মিচেল নিউজিল্যান্ডে ফিরে যাওয়ায়। সেখানে তিনি নর্দার্নসের হয়ে খেলে নাম করেছেন, যদিও দলে পুরোপুরি জায়গা করে নিতে তার সময় লেগেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাই সুযোগ মিলেছে দেরিতে। স্টয়নিস শুরু থেকেই নাম কুড়িয়েছেন পার্থ আর মেলবোর্নের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার অভিষেকটা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র! সেখানেও শেষ ছয় বছরে অস্ট্রেলিয়া দলের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ হয়ে উঠেছেন তিনি। হেইল স্কুলের মাঠে ক্রিকেট খেলে বড় হওয়া মিচেল-স্টয়নিস এখন নিজেদের দেশের হয়ে অন্যতম দুই বড় তারকা। 

    *****

    ট্রান্স-তাসমান ফাইনালে মিচেল আর স্টয়নিসের বন্ধুত্বের ব্যবচ্ছেদ হয়ে থাকবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে আসা দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়ে যাবেন আন্তর্জাতিক ‘শত্রু’।