কিক অফের আগে- আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সুপার ক্লাসিকো: পাওয়ার কম, হারানোরই বেশি?
আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল, কনমেবল বিশ্বকাপ বাছাই
এস্তাদিও সান হুয়ান বিসেন্তেনারিও, আর্জেন্টিনা
বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটা (বাংলাদেশ সময়)
**********
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে যাবার কোন তাড়া নেই দুই দলের; আগের ম্যাচেই জানা গেছে কাতার বিশ্বকাপে দেখা যাবে যোগো বনিতোর ছন্দ। আলবিসেলেস্তেরা সরাসরি টিকিট না পেলেও যে কোন মুহূর্তেই পেয়ে যাবে, দরকার মাত্র এক পয়েন্ট; হাতে ম্যাচও ঢের বাকি। ম্যাচটা নিছক আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার মনে হলেও লাতিন দুই জায়ান্ট আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের ম্যাচ যে রোমাঞ্চ ছড়াবে না, সেটা বিশ্বাস করা মুশকিল বটে! তাই আগামীকাল ভোর সাড়ে পাঁচটায় বছরের সম্ভাব্য শেষ দেখায় দুই দল তাই মিটিয়ে নিতে চাইবে পুরোনো বোঝাপড়া, খুলতে চাইবে নতুন হিসাবের খাতা।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে, আর আর্জেন্টিনা?
১২ ম্যাচে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে কাতারের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনা যদিও প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে; ১২ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ ‘মিস’ করাটা প্রায় অসম্ভব আর্জেন্টিনার জন্য। কনমেবল অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কালকের ম্যাচের পর আরও পাঁচটি ম্যাচ খেলবে তারা, সেখান থেকে চার পয়েন্ট পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাবে আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ যাত্রা। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ এবার কিছুটা ‘নিরস’ মনে হলেও দুই দলই চাইবে জয়, করবে শক্তির পরীক্ষা
দলের খবর
উরুতে চোট পাওয়ায় এই ম্যাচে খেলছেন না নেইমার। তবে তার পিএসজি বন্ধু মেসি অবশ্য চোট সারিয়ে নেমেছিলেন উরুগুয়ের বিপক্ষে। স্কালোনির ভাষ্যমতে ব্রাজিলের বিপক্ষে শুরু থেকেই
খেলছেন মেসি। তিতের জন্য ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ঠিক এই কারণে যে নেইমারবিহীন ব্রাজিলকে ট্যাকটিকালি কীভাবে সাজান সে প্রেক্ষাপটে। অন্যান্য আর কোন ইনজুরি সমস্যা নেই, কার্ড সাসপেনশনে থাকায় খেলতে পারবেন না রিয়াল ও ব্রাজিলের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো।
কার শক্তি কোথায় বেশি?
কনমেবল অঞ্চলের বাছাইয়ে কোন দলই হারেনি কোন ম্যাচ। ব্রাজিল যেখানে জিতেছে ১১টি ম্যাচে, আর্জেন্টিনার জয় সেখানে ৮ ম্যাচে। এরকম দাপুটে পারফরম্যান্সের বড় কারণ দুই দলেরই শক্ত ডিফেন্স। ব্রাজিল মাত্র হজম করেছে ৪ গোল, আর আর্জেন্টিনা ৬।
দুই দলই তাই চাইবে শুরুতে গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে। সেন্টার ব্যাক জুটি হিসেবে ব্রাজিলের হয়ে নামতে পারেন মার্কিনিওস ও এদের মিলিতাও। থিয়াগো সিলভাকে বসে থাকতে হতে পারে শুধুমাত্র তার তিনি এই সময়ে কিছুটা কম স্পেস কাভার করে থাকেন বলে। মিলিতাও’র গতি ও মাঝমাঠের সঙ্গে বল লিংকিং দক্ষতার জন্য তিনিই কাল খেলতে পারেন মার্কিনিওসের সঙ্গে। আর্জেন্টিনার উইং আটকে রাখার জন্য মাঠে থাকতে পারেন আলেক্স সান্দ্রো ও দানিলো। অপরদিকে, আর্জেন্টিনা ডিফেন্সে বড় ভরসা এমিলিয়ানো মার্তিনেজ ও ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। সবশেষ চার ম্যাচে ক্লিন শিট রেখেছেন অ্যাস্টন ভিলার সুইপার কিপার মার্তিনেজ, আর ম্যান মার্ক করে বল ইন্টারসেপশন ও বল উইনিং ট্যাকল রেইটের কারণে স্কালোনির বড় ভরসা স্পার্সের রোমেরো। জুটি বাঁধবেন বেনফিকার নিকোলাস ওতামেন্দির সঙ্গে, আর দুই ফুল ব্যাকে থাকবেন মার্কোস আকুনিয়া ও নাহুয়েল মলিনা।
মধ্য মাঠে ফাবিনিয়ো আর ফ্রেড দুই পিভট হিসেবে অপারেট করবেন আর্জেন্টিনার আক্রমণের সুযোগ গুলো বাতিল করে দেওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে দুই ফুল ব্যাকের সঙ্গে পাসিং লেন তৈরি করে লিংক করবেন দুই ইনভার্টেড উইঙ্গারকে। ব্রাজিল আগামীকাল তাকিয়ে থাকবে প্লেমেকার লুকাস পাকেতা এবং উইঙ্গার রাফিনহার দিকে। দুইজনই আছেন চূড়ান্ত ফর্মে, আগের ম্যাচে গোল পেয়েছেন পাকেতা আর রাফিনহা উরুগুয়ের বিপক্ষে করেছেন দুই গোল। ফরোয়ার্ড রোলে ম্যাচ শুরু করতে পারেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর নেইমারের পরিবর্তে খেলবেন মাথিয়াস কুনহা।
আর্জেন্টিনার মাঝ মাঠ আর ফরোয়ার্ড লাইন মোটামুটি জানাই আছে। লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সামনে বক্স টু বক্স আর বল উইনিং মিডফিল্ড রোলে থাকবেন জিওভানি লো চেলসো ও রদ্রিগো দি পল। লো সেলসোর সঙ্গে মেসির বোঝাপড়াটা দারুণ, এই দুই জনের জুটির উপর ভরসা থাকবে স্কালোনির। অন্য উইংয়ে থাকবেন আনহেল দি মারিয়া, আর নাম্বার নাইন রোলে থাকবেন লাউতারো মার্তিনেজ
হার-জিতের হিসাব নিকাশ
২০১৯ এ ব্রাজিলের কাছে কোপার সেমিতে হারার পর এখন পর্যন্ত হারেনি আর্জেন্টিনা, অপরাজিত আছে টানা ২৬ ম্যাচে। এই অপরাজিত থাকার রেকর্ডে আবার আছে এবারের কোপার ফাইনালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারানোর রেকর্ড। ব্রাজিলের জন্যও এটাই একমাত্র ক্ষত, তা নাহলে ২০১৯ এ পেরুর কাছে হারের পর শুধু এই কোপার ফাইনাল বাদে আর কোন ম্যাচই হারেনি তিতের দল।
সম্ভাব্য দল
আর্জেন্টিনা (৪-২-৩-১)
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ; নিকোলাস ওতামেন্দি, ক্রিস্টিয়ানো রোমেনো, নাহুয়েল মলিনা, মার্কোস আকুনিয়া; লিয়ান্দ্রো পারেদেস, রদ্রিগো দি পল; জিওভান্নি লো চেলসো, লিওনেল মেসি, আনহেল দি মারিয়া; লাউতারো মার্তিনেজ
ব্রাজিল (৪-৪-২)
এদেরসন; মার্কিনিওস, এদের মিলিতাও, আলেক্স সান্দ্রো, দানিলো; ফ্রেড, ফাবিনিও, রাফিনহা, লুকাস পাকেতা; মাতিয়াস কুনহা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস